ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রির নামে তামাশা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রির নামে তামাশা! ফাঁকা টিকিট কাউন্টার-ছবি-দীপু মালাকার

সদরঘাট: ঈদুল আযহার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম দিনের অর্ধেক সময় না যেতেই বেশ কিছু কাউন্টারে ‘টিকিট শেষ’ বলে জানানো হয়েছে। রোববার (২০ আগস্ট)  বেলা ১১টার পর খুলে ১২টার দিকেই কিছু কাউন্টার থেকে জানানো হয় ‘টিকিট শেষ হয়ে গেছে’। 

আর বেশ কিছু টিকিট কাউন্টারে সারাদিন ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ আসেনি। এই অগ্রিম টিকিট বিক্রিকে ‘লোক দেখানো’ বলেই মনে করছেন অনেকে।

বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঘোষণা অনুযায়ী, সকাল ১০টা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ৪১টি নৌরুটের প্রায় ২শ’টি লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রির কথা ছিল। কিন্তু সে অনুযায়ী টিকিট কাউন্টারে ভিড় লক্ষ করা যায়নি। ছিল না লঞ্চ কোম্পানিগুলোরও কোনো তোড়জোর।  

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সদরঘাট নৌ-টার্মিনালের পশ্চিম পাশে নির্মাণাধীন নতুন ভবনের ৩৫টি কাউন্টারই ছিল জনশূন্য। অর্ধেক বেলা শেষ না হতেই অনেকে কাউন্টার ছেড়ে চলে গেছেন টিকিট না থাকার বাহানায়। এছাড়া সকাল থেকে বন্ধ থাকা কিছু কাউন্টারের ভেতরে লোকজনকে ঘুমিয়ে থাকতেও দেখা গেছে।

ফাঁকা কাউন্টারে ঘুমিয়ে আছেন টিকিট বিক্রেতা-ছবি-দীপু মালাকার টিকিট বিক্রির শুরুতে টিকিট প্রত্যাশীদের সংখ্যা কম থাকলেও দুপুরের দিকে অনেকেই টিকিট নিতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। সকালে আসতে না পেরে যারা দুপুরের পর এসেছেন তারাই পড়েছেন বিপাকে।  

জানা যায়, প্রতিটি রুটের প্রতিটি নৌযানে সরকারি কোটাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য কোটা বরাদ্দ থাকে। বরাদ্দ করা কোটা ছাড়াও তাদের তদবিরে কোটা বেড়ে গিয়ে হয় কয়েকগুণ। এছাড়া ঈদে মালিকপক্ষের অনেক আত্মীয় কিংবা পরিচিতজনের টিকিটের তদবিরও থাকে। এভাবেই প্রায় ৮০ ভাগ লঞ্চে কেবিনের টিকিট শেষ হয়ে যায়। এর ওপর আবার কিছু মানুষ আগেভাগে বিকাশে পেমেন্ট করে নিজের সিট বরাদ্দ করে রাখেন। ফলে কাউন্টারে বসে বিক্রি করার মতো তেমন টিকিট অবশিষ্ট আর থাকে না।  

কিন্তু সরকারের বাধ্যবাধকতার জন্য লঞ্চ মালিকরা এখানে নিয়ম রক্ষার জন্য বসেন! যদিও এ নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে কোনো মনিটরিং ব্যবস্থা চোখে পড়েনি।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিএ-এর এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, সরকার যে নিয়মটির কথা বলছে তা আসলে লঞ্চের ক্ষেত্রে যায় না। টিকিট থাকার পরও অনেক শিপিং কোম্পানির সংশ্লিষ্ট লোকজন ‘টিকিট নেই’ বলে কাউন্টার ছেড়ে যাচ্ছেন। আপনি দেখবেন যাত্রার দিন এই কোম্পানির লঞ্চগুলোতে বসেই কেবিনের টিকিট বিক্রি করা হবে।

‘টিকিট শেষ’ একথা বলে কাউন্টার বন্ধ করে চলে যাওয়ার মুহূর্তে কথা হয় খান ফারহান নেভিগেশনের বুকিং সহকারী মেহেদির সঙ্গে।  

তিনি বলেন, আমাদের যা টিকিট ছিল সব শেষ। আজ অফিস-আদালত সব খোলা বলে বেশিরভাগ মানুষ ওয়েবসাইট থেকে এবং ফোনেই টিকিট কিনেছেন। এতে টিকিট দ্রুত শেষ হয়ে গেছে।  

ফাঁকা টিকিট কাউন্টার-ছবি-বাংলানিউজটিকিট নিতে আসা বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা এমদাদুল হক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বরিশাল রুটে এতো লঞ্চ অথচ বিক্রি শুরুর ৩/৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই বলছে, কোনো টিকিট নেই! কোনো কাউন্টারেই টিকিট পাচ্ছি না। সবাই বলছে টিকিট শেষ। মালিক সমিতির অফিসে গিয়ে কথা বললে তারাও বলেন, টিকিট নেই।

তবে হুলারহাট, ভোলা, বগা এমন কিছু রুটের কিছু লঞ্চে এখনও বেশ কিছু টিকিট অবিক্রিত রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, একটা লঞ্চে মানুষ যায় ৫-৬ হাজার। এটা তো বাস না যে সিট অনুপাতে টিকিট বিক্রি করা যাবে। অনেকেই ডেকে বসে যায় সেখানে কত লোক যেতে পারবে তা আগে থেকে অনুমান করা সম্ভব নয়। আর যা থাকে কেবিন সেগুলোতে বিভিন্ন ধরনের কোটা থাকে। এরপর এখন আবার বিকাশ বা পরিচিতির উপর অনেক টিকিট বিক্রি হয়। তাই কাউন্টারে বসে লঞ্চের টিকিট বিক্রি সম্ভব নয়। সরকার বলছে, বিক্রি করতে তাই লঞ্চ মালিকরা বাধ্য হয়ে বিক্রি করতে বসছেন।  

বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদিন বলেন, গত ঈদের চেয়ে এবার অনেক বেশি টিকিট কাউন্টার থেকে দেওয়া হচ্ছে। লঞ্চে উঠতে হলে যাত্রীদের আগে অবশ্যই টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
ডিআর/আরআর/জেএম


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।