শনিবার (১৯ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা মাপা হয়েছে ১৭ দশমিক ৪৪ মিটার। আর রাজশাহীতে পদ্মার বিপদসীমা হচ্ছে ১৮ দশমিক ৫০ মিটার।
শনিবার বিকেলে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে স্রোতের তোড়ে রাজশাহী মহানগরীর বুলনপুর থেকে নবগঙা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় একটু একটু করে ভাঙতে শুরু করেছে। পানি বাড়ায় মহানগরীর বসুড়ি এলাকার ভাঙনও বেড়েছে। বর্তমানে জিয়ানগরে নদীপাড় থেকে প্রায় ৩শ’ মিটার উত্তরে নির্মাণ হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি’। গতবার ভাঙনে কিছু অংশ ভেঙেছিলো।
এবারও পানি বাড়তে শুরু করায় এ এলাকা হুমকির মুখে পড়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে শ্রীরামপুরের টি-বাঁধ এলাকাও। গতবার ফাটল দেখা দেওয়ার পর জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানো হয়েছি এ বাঁধের। কিন্তু এবার পানির প্রবাহ ও স্রোতের গতিবেগে দেখা দিয়েছে ভাঙনের অশনি সংকেত।
এদিকে, নদীর প্রবল স্রোতে এরই মধ্যে রাজশাহীর গোদাগাড়ী সারাংপুর, গাঙোবাড়ি ও সুলতানগঞ্জ এলাকায় পদ্মার পাড় ভাঙছে। এছাড়াও রাজশাহীর চারঘাটের টাঙন, বাঘার আলাইপুর, পানি কামড়া ও চরকালদাসখালি এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে এসব এলাকার কয়েকশ’ বিঘা আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তাই পানি বাড়ায় নদীপাড়ের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
তবে অতীতের পরিসংখ্যান টেনে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গেজ রিডার এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, উৎকণ্ঠা থাকলেও এখনই আতঙ্কের কিছু নেই। ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট রাজশাহীতে পদ্মার পানির প্রবাহ উঠেছিল সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ৪৬ মিটার। এরপর আর বাড়েনি। বরং পর দিন ২৯ আগস্ট থেকে পদ্মার পানি আবারও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।
এনামুল হক আরও বলেন, গেল ১৫ বছরে রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা (১৮ দশমিক ৫০) অতিক্রম করেছে মাত্র দুইবার। এর মধ্যে ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা ৯ বছর রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। কেবল ২০০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিলো ১৮ দশমিক ৮৫ মিটার। এর পর ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মা বিপদসীমা অতিক্রম করেছিল। ওই বছর পদ্মা নদীর সর্বোচ্চ উচ্চতা দাঁড়িয়ে ছিলো ১৮ দশমিক ৭০ মিটার।
এদিকে, ইতিহাসের উদ্ধৃতি দিয়ে রাজশাহী হেরিটেজ সোসাইটির সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী বাংলানিউজ বলেন, বন্যায় ১৮৫৫ ও ১৮৬৪ সালে রাজশাহী শহর বন্যার পানিতে ডুবেছিল। নগরীর ভেতরে বন্যার পানি ১৫-২০ দিন স্থায়ী ছিলো। ১৮৫৫ সালের বন্যার কারণে নগরীর বুলনপুরে শহর রক্ষা বাঁধ তৈরি করা হয়। এর দৈর্ঘ ছিলো ১ হাজার ৭শ'২৯ ফুট। আর রাজশাহী শহরকে পদ্মার ভাঙন থেকে রক্ষা করতে ১৯৯৫ সালে অবশিষ্ট এ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিলো।
জানতে চাইলে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুখলেসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘শহর রক্ষা বাঁধ এখন পর্যন্ত ভালো আছে। তবে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য তাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। বর্তমানে নদীপাড়ে পর্যাপ্ত বালুর ব্যাগ ও ব্লক মজুদ রাখা হয়েছে। তাই এ নিয়ে রাজশাহীবাসীর এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজশাহীতে পদ্মার বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। তবে শহর রক্ষা বাঁধের উচ্চতা ১৯ দশমিক ৬৭ মিটার। তাছাড়া নগরীর পশ্চিমাংশে বুলনপুর থেকে পবার সোনাইকান্দি পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার বাঁধ সংরক্ষণ কাজ শুরু হয়েছে। কেবল বর্ষার কারণে ব্লক সাজাতে কিছুটা অপেক্ষা করা হচ্ছে। এ কাজে ১২ লাখ ব্লক লাগবে। গত ২৬ জুন থেকে শুরু হয়েছে ব্লক তৈরির কাজ। ২০১৮ সালের মে মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে বলেও জানান নির্বাহী প্রকৌশলী।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
এসএস/ওএইচ/