রাজশাহী: পরদিন সকাল বেলা তার জন্য অপেক্ষা করছিলো মুক্তির খবর। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিণতি।
হ্রদয়বিদারক এ ঘটনাটি ঘটে গেছে সারাদেশে একযোগে বন্দি মুক্তির তালিকায় থাকা কয়েদি আলী হোসেনের জীবনে। পাবনা জেলা কারাগার থেকে বৃহস্পতিবার সকালে তার মুক্তির কথা ছিলো। ঠিক আগের দিন রাতেই তার মৃত্যু হয়।
রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার দূর্গম পদ্মার চরাঞ্চলের ছোট্ট একটি গ্রামের নাম দিয়ার কাদিরপুর। সেখানেই বাড়ি আলী হোসেনের। বাবার নাম হাফিজ উদ্দিন শেখ। যুবক বয়সেই সম্পর্কীয় ভাতিজাকে খুনের অভিযোগে জেলে যান তিনি। পরে আদালত তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়। ওই সাজাতেই দীর্ঘ বিশ বছর ধরে কারাগারে তিনি।
কারাগারে তাকে ডাকা হতো ১৬৭৩/এ নামে (কয়েদি নম্বর)। গ্রামের লোকজন জানান, আলী হোসেন ছিল কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। এর কারণেই তার হাতে খুনের ঘটনা ঘটে যায়। কখনো ভালো, কখনো অসংলগ্ন প্রলাপ বকা ছিলো তার স্বভাব। আদালতে দাঁড়িয়েও তাই আলী হোসেন খুন করার কথা অকপটে স্বীকার করে। ৪২ বছর বয়সে সাজা খাটতে খাটতে আজ সেই দূর্গম চরেই শায়িত হলেন এ কয়েদি। এ ঘটনায় ওই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পাবনার জেল সুপার এনামুল হক বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, আলী হোসেন একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত আসামি। তার কয়েদি নম্বর ১৬৭৩/এ। এরইমধ্যে তিনি বিশ বছর সাজা ভোগ করেছেন। কয়েক মাস আগে হঠাৎ করে তার মানসিক সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসার জন্য গত ১৭ এপ্রিল তাকে রাজশাহী জেলা কারাগার থেকে পাবনায় আনা হয়। গত বুধবার রাত ৯ টার দিকে আলী হোসেন বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে দ্রুত পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিনই রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক থাকা চিকিৎসক আনিছুর রহমান তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বৃহস্পতিবার সকালে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে তার লাশের ময়না তদন্ত হয়।
বাঘার চকরাজপুরে ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আলম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, এলাকায় সবাই তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলেই জানতো। কিন্তু খুনের ঘটনার পর আদালতে এর দায় স্বীকার করায় তার সাজা হয়ে যায়। তার অসচ্ছল পরিবারের পক্ষে এ নিয়ে আর উচ্চ আদালত পর্যন্ত না যাওয়া সম্ভব ছিলো না। ওই মামলাতেই সাজা খেটে আসছিলেন আলী হোসেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১০