ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সিরিজ বোমা হামলার এক যুগ, এখনো সক্রিয় জেএমবি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৭
সিরিজ বোমা হামলার এক যুগ, এখনো সক্রিয় জেএমবি সিরিজ বোমা হামলার এক যুগ

ঢাকা: ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) একযোগে চালানো সিরিজ বোমা হামলায় কেঁপে উঠে দেশের ৬৩টি জেলা। স্বাধীনতার পর দেশের অন্যতম এই জঙ্গি হামলার এক যুগ পূর্ণ হচ্ছে বৃহস্পতিবার।

জামায়াত-বিএনপি জোটের আমলে দেশব্যাপী এ হামলায় নিহত হন দুইজন। তবে, হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল, জেএমবির সাংগঠনিক সক্ষমতা জানান দেয়া এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা।

এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তারা অনেকটাই সফল হয়েছিল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৭ আগস্ট হামলার পরও বিভিন্ন সময়ে জেএমবি হামলা চালিয়েছে কিংবা হামলার চেষ্টা করেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় দলটি অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। কিন্তু যে অপ-আদর্শ নিয়ে দলটি গঠিত হয়েছিল, সেই অপ-আদর্শিক কারণটাকে এখনও নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে জেএমবি ভেঙে গঠিত হওয়া নব্য জেএমবি গত বছর গুলশানে হলি আর্টিজান রেঁস্তোরায় নৃশংস হামলা চালায়।

২০০৫ সালে শুধু সিরিজ বোমা হামলাই নয়, একই বছরের ৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম আদালতের তৎকালীন দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন এবং তৎকালীন মহানগর হাকিম আকরাম হোসেনের এজলাসে জেএমবি জঙ্গিরা আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়। ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠির সহকারী জেলা জজ সোহেল আহমেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ৈ জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াডের এক সদস্যের বোমা হামলায় নিহত হন। এ ঘটনার ১৫ দিন পরই ২৯ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে পুলিশ চেকপোস্টের সামনে বোমা হামলায় পুলিশ কনস্টেবল রাজীব বড়ুয়া ও ফুটবলার শাহাবুদ্দীন মারা যান।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৭ আগস্ট বোমা হামলার ঘটনায় দেশব্যাপী ১৬১টি মামলা দায়ের করা হয়। যার মধ্যে এই একযুগে রায় হয়েছে ১১৩টি মামলার। এ সব রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে ১৫ জন জঙ্গিকে, যাবজ্জীবন হয়েছে ১৩১ জনের। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয় ১৮৪ জনকে।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস জানান, সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশে ১৬১টি মামলার মধ্যে তদন্ত শেষে ১৪৩টি মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এই ১৪৩টি চার্জশিটে আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ১৫৭ জনকে। যার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ৯৬৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সিরিজ বোমা হামলার সময় জেএমবির প্রধান ছিলেন শায়খ আব্দুর রহমান, সামরিক শাখার প্রধান ছিলেন সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাই। অন্য একটি মামলায় ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, আল কায়দার অনুসরণেই ১৯৯৮ সালে জেএমবির সৃষ্টি হয়। ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলায় জড়িত অধিকাংশ জঙ্গিকে অনেক আগেই গ্রেফতার করা হয়। তাদের অনেকের আদালতে রায়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও হয়েছে।

তিনি জানান, ওই হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধর-পাকড় এবং জেএমবিকে নিষিদ্ধ করে দেওয়ার ফলে সংগঠনটি কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে। ২০০৭ সালে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির মাধ্যমে জেএমবির প্রথম অধ্যায় সমাপ্তি ঘটে। দ্বিতীয় অধ্যায় শুরুতে জেএমবির শীর্ষ নেতা মাওলানা সাইদুর রহমানকে গ্রেফতারের মাধ্যমে সেই প্রচেষ্টাকে নাসাৎ করে দেয়া হয়।

পরবর্তীকালে এই সংগঠনটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ভারতে পলাতক সালাউদ্দিন সালেহিন জেএমবির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অপর একটি ভাগ নব্য জেএমবি নামে পরিচিত। যে সংগঠনটি হলি আর্টিজান হামলাসহ বর্তমানে বিভিন্ন নাশকতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

নব্য জেএমবিকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে উল্লেখ করে মনিরুল ইসলাম বলেন, তীব্র অভিযানের মুখে নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ায় নতুন করে হামলা চালানোর সক্ষমতা হারিয়েছে নব্য জেএমবি। ছোট খাটো যে জঙ্গিরা এখনো পলাতক থেকে সক্রিয় রয়েছে, তাদের গ্রেফতারে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৭
পিএম/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।