ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

সন্দেহভাজন দুই পাকিস্তানি জঙ্গিকে ছেড়ে দিয়েছে এসবি!

প্রশাসনে তোলপাড়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৬ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১০

ঢাকা: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুক্রবার রাতে আটক করা দুই সন্দেহভাজন পাকিস্তানি জঙ্গিকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। আর এ ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন ও গোয়েন্দা বিভাগে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

অবশ্য এদের ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের এরই মধ্যে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

শুক্রবার রাতেই বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ জঙ্গি সন্দেহে হুমায়ুন কবির ও তার ভাই নাসির উল্লাহকে আটক করে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)’র কাছে হস্তান্তর করে।

জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি গোয়েন্দা সংস্থার আগাম তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় সন্দেহভাজন পাকিস্তানি নাগরিক হুমায়ুন কবির ও তার ভাই নাসির উল্লাহকে আটক করা হয়। কিন্তু এসবির সংশ্লিষ্ট  কর্মকর্তারা শুধু পাসপোর্ট জব্দ করে রাত সাড়ে ১১টায় তাদের ছেড়ে দেন।

পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও প্রতিরা বিষয়ক অপর একটি গোয়েন্দা সংস্থার পদস্থ কর্মকর্তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন বলে জানা গেছে।
 
আটক দুই জনকে বিমানবন্দরেই জিজ্ঞাসাবাদ করেন এসবি, ডিজিএফআই ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিষেধ সত্ত্বেও  স্রেফ ধারণার বশবর্তী হয়েই এসবি তাদের ছেড়ে দেয়।

এ ব্যাপারে আত্মপক্ষ সমর্থন করে জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, আটক দুই ভাইকে তালেবান জঙ্গি বলে তাদের মনে হয়নি। এ ব্যাপারে এসবির এএসপি নজরুল ইসলাম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি-কে বলেন, হুমায়ুন কবীর ও নাসিরউল্লাহ  নামে যে দুই তালেবান জঙ্গির ব্যাপারে তথ্য ছিল, তাদের সঙ্গে নামের মিল ছাড়া এ দুই ভাইয়ের আর কোনো মিল নেই বলে তাদের মনে হয়েছে। তাই রাত সাড়ে ১১ টার দিকে দু’ভাইকে তারা ছেড়ে দিয়েছেন।

হুমায়ুন কবির ও নাসির উল্লাহ বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে আফ্রিকান দেশ মালাবি যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায়।

আগামী ২৩ জুন তাদের জয়েন্ট ইন্টেরোগেশন সেলে হাজির হতে বলা হয়েছে বলে এসবি’র একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শুক্রবার রাতে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি-কে জানান।

এদিকে, আজ শনিবার সকাল থেকেই বিমানবন্দরে আটক দুই পাকিস্তানিকে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। হুমায়ুন কবির ও নাসিরউল্লাহর পাসপোর্টে উল্লেখ করা ঠিকানা অনুযায়ী চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়ার জন্যও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে চাঁদপুরের জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি’র চাঁদপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আজ দুপুরে হাজীগঞ্জে হুমায়ুন কবিরের শ্বশুড়বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার ও নাসির উল্লাহ’র নামে করা দুটি পাকিস্তানি পাসপোর্ট উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ঢাকার গোয়েন্দা সূত্রও এ খবর নিশ্চিত করেছে।  

বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ শামসুজ্জামান বলেন, হুমায়ুন কবির ও তার ভাই নাসির উল্লাহ যে পাকিস্তানি নাগরিক সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে তারা প্রশিতি তালেবান জঙ্গি কিনা সে ব্যাপারে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে পর্যাপ্ত কোনো তথ্য ছিল না।

বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করার অভিযোগে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন শাখা তাদের পাসপোর্ট জব্দ করে রাখে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তবে বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে ওই দু’জনকে আটক করার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধŸতন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানানো  হয়েছিল কিনা জানতে চাওয়া হয়। জবাবে  সহকারি এই পুলিশ কমিশনার বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, হুমায়ুন কবির ও নাসিরউল্লাহকে আটক করার পরপরই এসবি ও ডিজিএফআই সদস্যরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানোর পরই মুচলেকা আদায় করে ওই দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

‘কোন কোন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছিল’--এ  প্রশ্ন করা হলে এসি শামসুজ্জামান জবাব এড়িয়ে যান।

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অপর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, জব্দকৃত পাসপোর্টের মালিক হুমায়ুন কবির ও নাসিরউল্লাহ বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে একাধিকবার পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে যাওয়া আসা করেছেন। পাসপোর্টে দু’জনেরই বাবার নাম হাবিব উল্লাহ লেখা রয়েছে।

সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করা, পাসপোর্ট জব্দ করা ও ছেড়ে দেওয়ার কোনো তথ্যই বিমানবন্দর থানাপুলিশকেও জানানো হয়নি।

ইমিগ্রেশন শাখা থেকে এ ব্যাপারে থানায় সাধারণ ডাইরি করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিমানবন্দর থানার সহকারী পরিদর্শক ফরিদা ইয়াসমিন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি কে জানান, ‘এ পর্যন্ত তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ’

জিজ্ঞাসাবাদে দুই ভাইয়ের দেওয়া তথ্য:
সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদকালে দুই ভাই বলেছেন,  তারা পাকিস্তানে মায়ের সঙ্গে বসবাস করলেও চাঁদপুর হাজীগঞ্জ এলাকার কালোচুর গ্রামে তাদের চাচা-চাচী পূর্ব পুরুষরা বসবাস করেন। নানা কারণেই পাকিস্তানে বসবাস করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে ওঠে।   চলতি বছর তারা বাংলাদেশে ফিরে এসে চাচাদের সঙ্গে থেকে ব্যবসাপাতির চেষ্টা করেন। এযাত্রা  তারা তাদের এক বন্ধুর (অজ্ঞাতপরিচয়) সহযোগিতায় আফ্রিকার দেশ মালাবি যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলেন।

চাঁদপুরের স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, এরা দু’ভাই ঘন ঘন পাকিস্তান যেতেন।

তালেবানি যোগাযোগ

এসবি’র জিজ্ঞাসাবাদে হুমায়ুন ও নাসিরউল্লাহ স্বীকার করেন, পাকিস্তানে থাকার সময় অনেক তালেবান নেতার সঙ্গে তাদের চেনাজানা ছিল। তাদের নানা কর্মসূচিতে তারা অংশ নিয়েছেন।   তবে কোনো জঙ্গি প্রশিক্ষণ বা আফগানিস্তান যুদ্ধে অংশ নেননি তারা।
 
গত ৮ মাসে তারা দুই ভাই কেন তিন তিনবার পাকিস্তানে গেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে হুমায়ুন জানান, পাকিস্তানে ফয়সালাবাদে বৃদ্ধা মায়ের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্যই তারা ঘন ঘন পাকিস্তান গিয়েছেন।

নাসিরউল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করে টিকে থাকতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু এখানে সুবিধা করতে না পেরে দক্ষিণ আফ্রিকা পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেন তারা।

এসবি’র জিজ্ঞাসাবাদকারী ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা দুই ভাইয়ের স্থানীয় স্বজন পরিজনদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে তাদের বক্তব্য সত্য বলে নিশ্চিত হয়েছেন বলে দাবি করেন এসবির ওই কর্মকর্তা।

গ্রেফতারে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে পুলিশ

আজ সন্দেহভাজন এ দুই তালেবান সদস্যকে আটক ও ছেড়ে দেওয়া নিয়ে প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হওয়ার পর এদের আটক করার জন্য পুলিশ মরিয়া হয়ে ওঠে। ভোরেই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বেতারবার্তা পাঠানো হয় চাঁদপুরের এসপিকে। নির্দেশনা অনুযায়ী সকালে হাজীগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার (ওসির দায়িত্বে থাকা) সাব ইন্সপেক্টর শওকত আলী পুলিশ ফোর্স নিয়ে হাজীগঞ্জের দুর্গম কালোচুর গ্রামে যান। হুমায়ুনদের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী সেখানকার একটি বাড়ি ঘেরাও করেন তারা। কিন্তু এ নামে কাউকে সেখানে খুঁজে পাননি।  

তবে বাড়িটিতে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে হুমায়ুন কবীর ও নাসিরউল্লাহ’র নামে ইস্যু করা দুটি পাকিস্তানি পাসপোর্ট খুঁজে পান তারা। সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে সাব ইন্সপেক্টর শওকত আলী বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, কালোচুর গ্রামের হুমায়ুনদের চাচার বাড়িটি স্থানীয়ভাবে পাকিস্তানি বাড়ি হিসেবে পরিচিত।

বাংলাদেশ সময় : ১৭১৫ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১০
এসআরআর/এজে/এমএমকে/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।