১১ দিনের চিকিৎসা শেষে সোমবার (০৭ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে মা-মেয়েকে জেলার অতিরিক্ত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ হাজির করে পুলিশ। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. এমদাদুল হক এ আদেশ দেন।
এর আগে নির্যাতিতা মা-মেয়েকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল (শজিমেক) হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে জানান, গত ২৮ জুলাই নির্যাতিতা মা-মেয়েকে পুলিশি নিরাপত্তায় শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার (০৪ আগস্ট) শিক্ষার্থীর ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদন দেন হাসপাতালটির চিকিৎসকরা। প্রতিবেদনে ধষর্ণের আলামত মিলেছে ও মেয়েটিকে নাবালিকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ০১ আগস্ট অতিরিক্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্যামসুন্দর রায়ের আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে তার ওপর ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দেয় মেয়েটি।
একইদিন সন্ধ্যায় অতিরিক্ত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মো. এমদাদুল হক নির্যাতিত শিক্ষার্থীকে পুলিশি নিরাপত্তা দিতে জেলার পুলিশ সুপারকে (এসপি) নির্দেশ দেন।
নির্যাতিতা শিক্ষার্থীর মা জানান, তারা পরবর্তী নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। তবে পুলিশ নিরাপত্তা দিলে নিজেদের ভাড়া বাসায়ই থাকতে পারবেন তারা।
তার মেয়ের ধর্ষক তুফান সরকার এবং তুফানের হয়ে নির্যাতনকারী কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকিসহ সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন তিনি।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বগুড়া শহর শ্রমিকলীগের আহ্বায়ক (বহিস্কৃত) তুফান সরকার সদ্য এসএসসি পাস করা মেয়েটিকে কলেজে ভর্তিতে সহায়তার কথা বলে নিজের বাসায় ডেকে নিয়ে গত ১৭ জুলাই ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের বিচার-সালিশের নামে ডেকে নিয়ে গত ২৮ জুলাই বিকেলে বগুড়া পৌরসভার ৪, ৫, ৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকির চকসূত্রাপুর এলাকার বাসায় অমানবিক নির্যাতন ও মারধরের পর মা-মেয়ের চুল কেটে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। ধর্ষক তুফান কাউন্সিলরের ছোট বোন জামাই।
২৮ জুলাই রাতেই নির্যাতিতা মায়ের করা ওই মামলার ১০ আসামির মধ্যে তুফান সরকার ও মার্জিয়া হাসান রুমকিসহ ৯ জনকে ও এজাহারের বাইরে জড়িত সন্দেহে আরো ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত অন্য আসামিরা হচ্ছেন- রুমকির মা রুমি বেগম, তুফান সরকারের স্ত্রী আশা, সহযোগী মুন্না শেখ, আলী আজম দিপু, রুপম হোসেন, আতিকুর রহমান ও গাড়িচালক জিতু। এজাহারের বাইরে গ্রেফতার হয়েছেন রুমকির বাবা জামিলুর রহমান রুনু ও মাথা ন্যাড়াকারী নাপিত জীবন রবিদাস। অন্য আসামি শিমুল পলাতক রয়েছেন।
গ্রেফতারকৃত ১১ জনের মধ্যে মুন্না শেখ, আতিকুর রহমান ও জীবন রবিদাস দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বর্তমানে কারাগারে থাকা গ্রেফতারকৃতদের কয়েক দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। আরও রিমান্ড চাওয়া হলে তুফান সরকার, মার্জিয়া হাসান রুমকি, আশা খাতুন ও রুমি বেগমকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৭
এমবিএইচ/জেএম/এএসআর