ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জলাধার উদ্ধারে সেনাবাহিনী চান মেয়র খোকন

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০১৭
জলাধার উদ্ধারে সেনাবাহিনী চান মেয়র খোকন মেয়র সাঈদ খোকন/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুতই খাল ও জলাধার উদ্ধারে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী নামানোর সুপারিশ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন। এজন্য তিনি একটি স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ গঠনেরও প্রস্তাব করেছেন।

এ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে ঢাকাকে পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।

সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠকে এসব সুপারিশ করেন তিনি।


 
ওই বৈঠকে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসার পক্ষে এটি একা ম্যানেজ করা সম্ভব নয়। আমরা এজন্য সমন্বিত পরিকল্পনা তৈরি করতে পারি। এতে মন্ত্রণালয়, ওয়াসা ও মেয়ররা থাকতে পারেন’।

‘৫৪ বছর আগের তৈরি ওয়াসা দিয়ে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এ ৫৪ বছরেও আবার ওয়াসার কোনো পরিবর্তন হয়নি। প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করতে হবে। কিছু বটল নেক আছে, সেগুলো সারাতে পারলে সমস্যার সমাধান হবে। এজন্য ব্লেইম গেম খেলার সুযোগ নেই’।
 
ডিএসসিসি’র মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘জলাবদ্ধতা দূর এবং জলাধার ও খাল উদ্ধারে একটি কর্তৃপক্ষ করা যায়। তবে সে কর্তৃপক্ষের আইনি সক্ষমতা ও ক্ষমতা থাকতে হবে। এ কর্তৃপক্ষে আমরা সেনা বাহিনীকে আনতে পারি, র‌্যাব, পুলিশকেও আনা যায়। এজন্য আইন পরিবর্তনও অবাস্তব নয়’।

‘এ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে ঢাকাকে পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব’।
 
খোকন বলেন, ‘স্বল্পমেয়াদী পদক্ষেপ হিসেবে সমন্বিত পরিকল্পনা করা যায়। তবে তাতে জলাবদ্ধতার দীর্ঘমেয়াদী ও স্থায়ী সমাধান হবে না। স্থায়ী সমাধানের জন্য রাষ্ট্রকে তার ক্ষমতা ব্যবহার করতে হবে। কারণ, রাষ্ট্রের চেয়ে ক্ষমতাধর আর কেউ নেই। রাষ্ট্র চাইলে পারে না, এমন কিছুও নেই’।
 
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করে স্বল্পমেয়াদী কোনো পদক্ষেপ এক্ষেত্রে কোনো কাজে আসবে না বলেও মন্তব্য করেন মেয়র খোকন।
 
ওই বৈঠকে ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিন এ খান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী মেসবাহুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অংশ নেন।
 
মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, বৈঠকের শুরুতেই মন্ত্রী উপস্থিত সবাইকে যুদ্ধের মনোভাব ত্যাগ করে সমস্যার সমাধানে খোলা মনে সুপারিশ দেওয়ার আহবান জানান।
 
ঢাকার জলাবদ্ধতা সম্পর্কে সাঈদ খোকন আরও বলেন, ‘আমরা যদি প্রাকৃতিক উপায়ে ফিরে যেতে পারি, তাহলেই স্থায়ী সমাধান হবে। এতে চ্যালেঞ্জ আছে, সময়াসাপেক্ষ, অর্থ সংশ্লিষ্ট এবং লম্বা সময়ের ব্যাপার। তবে অবাস্তব নয়। খাল ও জলাধার দখল মুক্ত করাও সম্ভব’।
 
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলামও ঢাকার জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়ার সুপারিশ করেন।

সুপারিশে তিনি বলেন, ‘লংটার্মে হাত দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে ঢাকার খালগুলো উদ্ধার করতে হবে, জলাধার উদ্ধার করতে হবে। খাল ও জলাধার দখল করে যেসব স্থাপনা গড়ে উঠেছে, সেগুলো সম্পূর্ণ অবৈধ। রাজউকও এ দখল বা স্থাপনাকে স্বীকার করেনি বা অনুমোদন দেয়নি। সরকার চাইলেই এসব দখলদারের হাত থেকে খাল ও জলাধার উদ্ধার করা যাবে। তবে তা ধরে রাখতে সরকারকেই আন্তরিক হতে হবে’।
 
ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান বলেন, ‘জলাবদ্ধতার মূল কারণ হলো- ঢাকাকে আমরা একটি বালতি বানিয়ে ফেলেছি। এর মূল কারণ, ঢাকা শহরের গ্রোথ, যার পুরোটাই অপরিকল্পিত। এখানে দুই কোটিরও বেশি মানুষ স্থায়ী ও এক কোটি মানুষ অস্থায়ী হিসেবে বসবাস করেন’।

‘জাতিসংঘের ঘোষণা অনুসারে একটি শহরের মূল আয়তনের কমপক্ষে ১২ শতাংশ খাল, নালা, পুকুর, লেক, জলাধার ও নিন্মাঞ্চল থাকার কথা। অথচ ঢাকায় আছে মাত্র ২ শতাংশেরও কম’।
 
তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরের পুরোটাই আক্ষরিক অর্থে ঢাকা। ৪০০ বর্গমাইলের ঢাকার ৩৭০ বর্গমাইল পুরোটাই কংক্রিটে আবদ্ধ। এ কারণে পানি ভূগর্ভে ঢুকতে পারে না। বৃষ্টির পানি রাস্তায় গিয়ে স্থান নেয়। প্রাকৃতিকভাবে ভূগর্ভে পানি ঢুকতে না পেরে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে’।

‘যেটুকু খাল আছে, তাও দখলের কারণে প্রাকৃতিক নিঃসরণ ব্যবস্থা নষ্ট হয়েছে। ঢাকায় যে ১৫ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট করা হয়েছে, তারও ডিজাইনে ভুল ছিলো। নির্মাণের আবর্জনা ড্রেনেজ ও বক্স কালভার্ট ব্যবস্থাকে অচল করে দিচ্ছে। খালগুলো ভরে গেছে কঠিন বর্জ্যে। স্বাভাবিকভাবেই বক্স কালভার্ট পরিষ্কার করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে’।
 
ওয়াসার এমডি বলেন, ‘ঢাকার নিন্মাঞ্চল ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি গিয়ে সেখানে দাড়াতে পারছে না। আবার এ ভরাটের পুরোটাই হয়েছে অবৈধ উপায়ে। ফলে ঢাকার পানি নিস্কাশন করতে হচ্ছে অনেকটা দাঁত ফেলে দিয়ে কৃত্রিম দাঁত বসানোর মতো করে। প্রাকৃতিক খাল নষ্ট ও দখল হয়ে যাওয়ায় পাঁচটি পাম্প স্টেশনের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে পানি সেচে ফেলতে হচ্ছে। এভাবে সমস্যার সমাধান করা প্রায় অসম্ভব, যদি একটানা বৃষ্টি হয়’।
 
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘ড্রেনেজের ক্ষেত্রে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন যতোটুকু জড়িত, ঢাকা ওয়াসাও ততোটাই জড়িত। তবে এসব সংস্থার মধ্যে এ নিয়ে যে ভীষণ সমন্বয়হীনতা রয়েছে, তা সুস্পষ্ট’।
 
তিনি বলেন, ‘আমরা সিটিতে বাস করবো। এজন্য সিটির সকল সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে। নাগরিকদের এ সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। তা না পারলে জনগণ সিটি কর্পোরেশন বা ওয়াসা কি তা বুঝবেন না। তারা দায়ী করবেন সরকারকে’।

‘এবারের ঢাকার জলাবদ্ধতা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। তাই সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবে’।
 
তিনি বলেন, ‘নিন্মাঞ্চল কিভাবে সৃষ্টি করবো? যেভাবে ঢাকা সিটি বড় হচ্ছে, তাতে নিন্মাঞ্চল আরো ভরাট হবে। মানুষ জলাধার ভরাট করে বাড়ি-ঘর করছেন। কেউতো আর ওয়াসার মুখের দিকে চেয়ে থাকবেন না। তবে বিষয়টিতে এখনই নজর দিতে হবে’।

‘ঢাকায় আরো ১৬টি ইউনিয়ন যুক্ত হয়েছে। সেখানে প্রচুর নিন্মাঞ্চল আছে। সেগুলোকে ব্যবহার করতে হবে, রক্ষা করতে হবে। ঢাকা ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) সভাপতি আমি। আমার কাছে তো কেউ পরিকল্পনা নিয়ে আসেন না। ওয়াসাকে ডিটেইল এরিয়া সার্ভে করে ডিটেইল প্ল্যান করতে হবে’।
 
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৭
আরএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ