একটু বৃষ্টি হলেই সড়কের এসব খানা খন্দ পানিতে ভরে গিয়ে বিঘ্ন ঘটে যান চলাচলে। এভাবে বিপদের আশঙ্কা নিয়েই যান চলাচল করছে এই মহাসড়কে।
গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসের দিকে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে খানা খন্দ ভরা এই মহাসড়কের ৯ কিলোমিটার অংশ মাইনর মেইনটেনেস প্রকল্পের অধীনে সংস্কার করা হয়েছিল। এ কাজটি বাস্তবায়ন করেছিল প্রভাবশালী একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু ৬ মাস যেতে না যেতেই এসব পিচ কার্পেটিং উঠে গিয়ে আবারও সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য গর্তের। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনা এড়াতে মহাসড়কটিতে ধীর গতিতে চলছে যানবাহন। ফলে সময়ও বেশি লাগছে এই ১২ কিলোমিটার সড়ক পার হতে।
এছাড়া মাঝে মধ্যেই রাস্তায় নষ্ট হয়ে পড়ে থাকছে যানবাহন। এ কারণে সময় মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না যানবাহন চালক ও যাত্রীরা। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।
অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক দিয়ে রাজধানী ঢাকা, দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলের যানবাহন চলাচল করে প্রতিনিয়ত।
এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে সংস্কার করা হলো এই মহাসড়ক, অথচ কয়েক মাস না যেতেই এমন বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হলো। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর এই মহাসড়কে সংস্কার কাজ শেষে বিল উত্তোলন করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। কিন্তু তার সিকিউরিটি মানির সময় সীমা এখনও শেষ হয়নি।
আর নিয়মানুসারে নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে কাজের ত্রুটি বা সমস্যা দেখা দিলে ওই ঠিকাদারের তা ঠিক করে দেওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে তা করা হয়নি। উপরোন্ত এ কাজে আবারো ৯ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এটা সরকারের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।
এদিকে সোমবার (৩১ জুলাই) সরেজমিন নাটোর-ঢাকা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, শহরের মাদ্রাসা মোড় থেকে শুরু করে বড়হরিশপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্থান ও পুলিশ লাইন্সের সামনে, দত্তপাড়া ব্রিজের দুই পাশ, গাজির বিল, আহম্মদপুর ব্রিজের পশ্চিম পাশ, কারবালা, বনপাড়ার কাছুটিয়া এলাকায় সবচেয়ে বড় বড় খানা খন্দের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, একটু বৃষ্টি হলেই সড়কের খানা খন্দে পানি জমে যায়। ফলে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এছাড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে স্কুল কলেজ থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয়।
আহম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা মোশারফ হোসেন, আকবর আলী জানান, নাটোর থেকে বনপাড়া পর্যন্ত এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে খানা খন্দের সৃষ্টি হয়নি। সড়কটি দীর্ঘদিন ধরেই নাজেহাল অবস্থায় রয়েছে। জনগণের কাছে সড়কটি এখন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
তারা আরো বলেন, সড়কটির এমন করুণ অবস্থা হয়েছে যে, যানবাহন তো পরের কথা পায়ে হেঁটেও চলাচল করা কষ্টকর। সড়কটি যদি দ্রুত সংস্কার না করা হয় তাহলে জনগণের দুর্ভোগ বেড়েই চলবে।
বনপাড়া এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম জানান, সড়কের খারাপ অবস্থার কারণে উপজেলা থেকে জেলা শহরে আসা মোটরসাইকেল যাত্রীদের দুর্ভোগ এখন চরম পর্যায়ে।
স্থানীয় অটোরিকশা চালক বেলাল হোসেন, বাস চালক অসীম সিকদার জানান, এই সড়কে যাতায়াতে রাস্তার ঝাঁকুনিতে অসুস্থ হয়ে পড়ে অধিকাংশ যাত্রী। এছাড়া মাঝে-মধ্যে তাদের যানবাহনেও বিপত্তি ঘটে।
পরিবহন ও পণ্য পরিবহন চালকরা বাংলানিউজকে জানান, সড়কের খানা-খন্দের কারণে গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগছে তিনগুণ, প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। মাঝে মধ্যে যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে। এতে গাড়িতে থাকা পণ্য সঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারায় তা নষ্ট হয়ে যায়।
নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি অনেক আগেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে ১৮ কিলোমিটার মহাসড়কের সবচেয়ে খারাপ ১২ কিলোমিটার অংশের সংস্কারের জন্য ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
যা টেন্ডার আহবানের মাধ্যমে মীর হাবিবুল আলম অ্যান্ড মীর শরিফুল আলম (জেভি) নামে এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশপত্র দেয়া হয়েছে। মে মাসের শেষের দিক থেকে শুরু করে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এই বৃষ্টির মধ্যে কাজ করা হলে তা টেকসই হবে না। কাজেই বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই মেজর মেইনটেনেস প্রকল্পের মাধ্যমে এ সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, ০১ আগস্ট, ২০১৭
আরএ