ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জামিনে ঘুরছে ছাত্রলীগনেতা সাইফুল্লাহর আত্মস্বীকৃত খুনি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১৭
জামিনে ঘুরছে ছাত্রলীগনেতা সাইফুল্লাহর আত্মস্বীকৃত খুনি খালিদ সাইফুল্লাহ

কুমিল্লাঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী এবং কাজী নজরুল হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের আজ একবছর পূর্ণ হলো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আজও নেয়নি কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। প্রধান আসামি বিপ্লব চন্দ্র দাস ঘুরে বেড়াচ্ছেন জামিনে।

 

 

এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও নিহত সাইফুল্লাহর পরিবারের সদস্যরা চরম ক্ষুব্ধ।
উল্লেখ্য, গত বছরের শোকাবহ আগস্টের প্রথম প্রহরে(১ আগস্ট মধ্যরাতে)বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের সময় ছাত্রলীগের বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

এ সময় খালিদ সাইফুল্লাহ মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। হত্যাকাণ্ডের পরে সম্ভাব্য অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ঠেকাতে ১ আগস্ট সকালে সিন্ডিকেটের ৬২তম জরুরি সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেয়  বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কমিটি হত্যাকান্ডের ২ মাস ২৬ দিন পর ২০১৬ সালের ২৬ অক্টোবর প্রতিবেদন জমা দেয়। টেন্ডারবাজি, ক্যাম্পাসে অধিপত্য বিস্তার নিয়ে অনেক দিন ধরে চলে আসছিল দ্বন্দ্ব। জানা যায়, একারণেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব ও তৎকালীন প্রক্টর মো: আইনুল হক বলেন, আমরা তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শৃঙ্খলা বোর্ড গঠন করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কেন দোষীদের শাস্তি দিচ্ছে না তাবোধগম্য নয়। ’

এ ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়

প্রশাসন সাইফুল্লাহ হত্যার বিচারে টালবাহানা করছে। ’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানান, ‘ছাত্রহত্যার মত ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ না করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছে। ফলে এ ধরনের অপরাধের প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। ’
খালিদ সাইফুল্লাহ হত্যার জের ধরে গত বছর দীর্ঘ ৫৬ দিন বন্ধ রাখার পর ৩০ আগস্ট অনুষ্ঠিত ৬৩ তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত বহাল থাকলেও নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি মানছে না খোদ প্রশাসনই। নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে ছাত্রলীগের মিছিল, সভা, সমাবেশ-সম্মেলন চলছে ক্যাম্পাসের ভেতরে। এসব অনুষ্ঠানে আবার খোদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাই অতিথি হচ্ছেন ।
প্রক্টরের দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ৫ দিনের মাথায় ১৭ জানুয়ারি প্রশাসনিক ভবনে ছাত্রলীগের কর্মীসভার অনুমতি দেন প্রক্টর। এ নিয়ে তখন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে বেশ সমালোচনায় পড়ে কর্তৃপক্ষ। এরপরও থেমে নেই সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল দেখানো।

২৭ জানুয়ারি নবীন শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করে ছাত্রলীগ। এ পর্যন্ত বিভিন্ন কলাকৌশলে নিষেধাজ্ঞার ভিতরেও ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের মিছিল, সমাবেশ করার বিষয়টি প্রশাসন এড়িয়ে যায়। গত ১৩ মে ছাত্রলীগের সম্মেলনে অতিথি হন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আলী আশরাফ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সিন্ডিকেটের সভাপতি হয়েও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখাননি স্বয়ং প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
সর্বশেষ গত ২৩ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে হল শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ দুলাল চন্দ্র নন্দী।

খালিদ সাইফুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের আগে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের মধ্যে বেশ কয়েক বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সংবাদকর্মীরা বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশ করেন তখন। কিন্তু তখন প্রশাসন কোন কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে খালিদ সাইফুল্লাহর মা ফাতেমা বেগম এখন পাগলপ্রায়। সন্তান হত্যার বিচার না হওয়ায় খালিদ সাইফুল্লাহর মা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,‘বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে আমার ছেলের লাশ উপহার দিয়েছে। আমি ছেলে হত্যার বিচারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পায়ে পায়ে ঘুরেছি। তবু কোনো বিচার পাইনি। ’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আলী আশরাফ বলেন, ‘তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছেন তা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টার কাছে পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। তিনি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দিলে সে অনুযায়ী সিন্ডিকেটে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলা করেছে, প্রশাসন এ বিষয়ে কাজ করছে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্যাম্পাস অভ্যন্তরে সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং এনিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। ’

উল্লেখ্য, হত্যার ঘটনায় ১ আগস্ট অজ্ঞাতনামা ১০০ জনকে আসামি করে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মামলাটির চার্জশিটও জমা দেয় কুমিল্লা পুলিশের গোয়েন্দা(ডিবি) শাখা। হত্যাকাণ্ডের ৫দিন পর ৬ আগস্ট মামলার প্রধান আসামি ও মার্কেটিং ৪র্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী বিপ্লব চন্দ্র দাসকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

বিপ্লব হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে জামিনে বের হন। বিপ্লব এখনো জামিনে মুক্ত আছেন।
বাংলাদেশ সময়:১৬১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১৭
আইএজে/জেএম/


 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।