ঢাকা : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে মারা যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা সন্দ্বীপ বাবুলের পরিবারের খবর এখন আর কেউ রাখে না। বৃদ্ধা মা, ৪ ভাই, ৪ বোনের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন সন্দ্বীপ বাবুল।
দেড় বছর আগে তার প্রাণপ্রিয় দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে দল বা সরকারের পক্ষ থেকে বাবুলের পরিবারের খবর কেউ নেয়নি বলে আক্ষেপের সুরে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানালেন বাবুলের ছোট ভাই বেলাল হোসেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় সন্দ্বীপ বাবুল গুরুতর আহত হন। ৩ বছর পর ২০০৭ সালের ২০ জুলাই তার মৃত্যু হয়।
সন্দ্বীপ বাবুল ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
শুক্রবার বিকেলে বাবুলের ছোট ভাই বেলাল হোসেন ভারাক্রান্ত মনে বড় ভাইয়ের মৃত্যুর দুঃসহ স্মৃতি আওড়াতে গিয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি’র এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার ভাই আওয়ামী লীগের জন্য কতখানি নিবেদিত প্রাণ ছিলেন সেটা নেতারা জানতেন।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের দৃশ্য দেখে বাবুল আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, নেত্রীকে যখন গ্রেফতার করে নিয়ে যায় তখন সেই দৃশ্য বড় ভাই সরাসরি টেলিভিশনে দেখার পর তার প্রেশার (রক্তচাপ) বেড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে গ্রিণ রোডের রেনাস কিনিকে ভর্তি করা হয় তাকে। কোনোভাবেই তার প্রেশার ২৮০/৯০ এর নীচে নামছিলো না। ডাক্তাররা প্রেশার নিয়ন্ত্রণে আনতে ৭/৮টি করে ট্যাবলেট দিয়েছেন। তার পরেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ’
বেলাল আক্ষেপ করে আরো বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম রোজায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর ইফতারের দাওয়াত পেয়েছিলাম। এবার পাইনি।
বেলাল বলেন, ‘আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো কিনা জানি না কারণ আমরা আগের বাসায় নেই। ভাড়া চালাতে না পেরে কম ভাড়ার বাসায় উঠেছি। ’
বেলাল বলেন, ‘ভাই আহত অবস্থায় যখন বিছানায় পড়ে ছিলেন তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেকেই আসতেন ভাইকে দেখতে, তাদের চোখের জলও ফেলতে দেখেছি। তাদের মুখেও শুনেছি রাজনীতিতে, আন্দোলনে-সংগ্রামে, মিছিল-মিটিংয়ে ভাইয়ের অবদানের কথা। ’
সন্দ্বীপ বাবুলের রাজনৈতিক জীবনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বেলাল বলেন, ‘আমাদের বাড়ি সন্দ্বীপ থানায়। এ কারণেই আওয়ামী লীগ নেতারা ভাইয়ের নাম দিয়েছিলেন সন্দ্বীপ বাবুল। আমার ভাই চামড়া ব্যবসায়ী ছিলেন। যা আয় করতেন তার অর্ধেক পরিবারে, আর অর্ধেক ব্যয় করতেন পার্টির জন্য।
আহত অবস্থায়ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলনের সময় ভাই ধানমন্ডির রাসেল স্কয়ারে ছুটে গেছেন। ডাক্তারের নির্দেশ মানেননি। আমার বৃদ্ধা মা এখন শুধু ভাইয়ের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন। মা প্রায়ই ভাইয়ের জামা-কাপড়, ব্যবহারের জিনিসপত্র নিয়ে কান্না-কাটি করেন।
বেলাল জানান, আগে তিনি ভাইয়ের ব্যবসায় কাজ করতেন, এখন অন্যের কাজ করেন। ছোট এক ভাই চায়ের দোকান করেন। দুই বোনের একজন ইডেন ও এক বোন সিটি কলেজে লেখাপড়া করেন। দুই ভাইয়ের সামান্য আয় দিয়ে কষ্টে সংসার চলছে।
বালাদেশ সময় ১৫৪২ ঘণ্ট, আগস্ট ২০, ২০১০