ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৮ দিনেও শনাক্ত হয়নি মিরাজের রোগ

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫১ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৭
৮ দিনেও শনাক্ত হয়নি মিরাজের রোগ অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত শিশু মিরাজ

লালমনিরহাট: আটদিনেও শনাক্ত করা যায়নি অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত শিশু মিরাজের (১২) রোগ। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রমেক) তার চিকিৎসায়  গঠিত ৪ সদস্যের  মেডিকেল বোর্ড এখনো রোগ শনাক্ত করতে পারেনি।

সোমবার (৩১ জুলাই) দুপুরে বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. অজয় কুমার।

এর আগে রোববার (২৩ জুলাই) লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে নেয়া হয় শিশু মিরাজকে।

সেখানে শিশু ওয়ার্ডে ৮ দিন ধরে চিকিৎসকদের নিবিড় পরিচর্যায় রয়েছে মিরাজ। তার চিকিৎসার জন্য ৪ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। গত ৮ দিনে তার শরীরের বিভিন্ন অংশের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে।

শিশু মিরাজ লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার পূর্ব সিন্দুর্না গ্রামের ভূমিহীন দিনমজুর আব্দুল হামিদের ছেলে। সে স্থানীয় হাতিবান্ধা ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র।

২২ জুলাই (শুক্রবার) বিকেলে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজে '' স্কুলে যেতে পারছে না মিরাজ '' এ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই খবরের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ শিশু মিরাজের পাশে এসে দাঁড়ায়। শুধু সরকারিভাবে নয় ব্যক্তিগত উদ্যোগেও মিরাজের পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই।

অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত শিশু মিরাজরংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. অজয় কুমার মোবাইলে বাংলানিউজকে জানান, শিশু মিরাজের রোগ নির্ণয় করতে কাজ করছে ৪ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। তার শরীরের বিভিন্ন অংশের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হয় নি। আরও দুইটি পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করা হবে।

মিরাজের শরীরের বেশ কিছু পদার্থ নমুনা হিসেবে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকী পরীক্ষায় ভাল ফল না এলে তাকে ঢাকায় পাঠানো হবে। প্রয়োজন হলে সরকারিভাবে মিরাজকে দেশের বাইরে পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মো. আলাউদ্দিন খাঁনের নির্দেশে মিরাজের চিকিৎসার জন্য লালমনিরহাট সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক, চিকিৎসক ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কিছু অর্থ ওই তহবিলে জমা করা হয়েছে। সেই অর্থেই চলছে তার চিকিৎসা ও বাড়ির খরচ। সব কিছু তত্ত্বাবধান করছেন লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. আমিরুজ্জামান।

তিনি বলেন, মিরাজের চিকিৎসায় পাশে দাঁড়াতে ইচ্ছুক বিত্তবানরা ওই তহবিলে জমা করতে পারেন। এ জন্য তিনি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।

এছাড়াও লালমনিরহাট পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক সাম্প্রতিক সময় জেলা প্রশাসনের একটি সভায় মিরাজের পরিবারকে অর্থিক সহায়তা দিতে পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দেন।

ওই সভায় লালমনিরহাট পুলিশ সুপার বাংলানিউজকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলানিউজে খবর প্রকাশের কারণে মিরাজকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানরাও এগিয়ে আসছে। সভায় তিনি মিরাজের সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।

উল্লেখ্য, জন্মের ৬ মাস বয়সে গায়ে চুলকানী হয় শিশু মিরাজের। আস্তে আস্তে তা পুরো শরীরের ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার পর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চর্মরোগ বিভাগে চিকিৎসা করা হলেও উন্নতি হয়নি। বর্তমানে মিরাজের শরীর ফুলে যাওয়ায় শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। সেইসঙ্গে শরীর দিয়ে পড়ছে দুর্গন্ধযুক্ত রস। এ জন্য মিরাজের কাছে কেউ ভিড়তে চায় না বলে  বিদ্যালয়ে যেতে নিষেধ করেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবুও মিরাজ স্কুলে যাওয়া অব্যাহত রেখেছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, ৩১ জুলাই, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।