এ নিয়ে প্রধান আসামি বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি (৩২) ও তার মা রুমি বেগমসহ (৪৮) ৯ আসামিই গ্রেফতার হলেন।
রোববার (৩০ জুলাই) দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে গ্রেফতারকৃত তিনজন হলেন- বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক (বহিস্কৃত) তুফান সরকারের স্ত্রী আশা, জিতু ও মুন্না।
ঢাকার সাভার এলাকায় ঢাকা জেলা পুলিশ হেডকোয়ার্টার ও বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে।
দিবাগত রাত ১২টার দিকে বগুড়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল বাংলানিউজকে গ্রেফতারের বিষয়টি জানান।
এর আগে রাত ৮টার দিকে পাবনায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ নারী কাউন্সিলর রুমকি ও তার মা রুমিকে গ্রেফতার করে। রুমকি বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর এলাকার জাহিদ হাসানের স্ত্রী এবং তার মা রুমি শহরের বাদুরতলা এলাকার জামিলুর রহমান রুনুর স্ত্রী।
আর নির্যাতনের মামলার পরই শনিবার (২৯ জুলাই) ভোর রাতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ কাউন্সিলরের ছোট বোন জামাই বগুড়া শহর শ্রমিকলীগের আহ্বায়ক (বহিস্কৃত) ধর্ষক তুফান সরকার, সহযোগী আলী আজম দিপু, রুপম হোসেন ও আতিকুর রহমানকে গ্রেফতার করে।
প্রথমে গ্রেফতারকৃত চারজনের মধ্যে আসামি আতিকুর রহমান ইতোমধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। ওই আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলকজবানবন্দিও দিয়েছেন।
তাই তাকে বাদ দিয়ে রোববার (৩০ জুলাই) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে আসামিদের হাজির করে সাতদিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানান। বিকেলে আদালত ওই তিনজনের রিমান্ডের আবেদন মঞ্জুর করেন।
শুক্রবার (২৮ জুলাই) বিকেলে বগুড়া পৌরসভার ৪, ৫, ৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকির চকসূত্রাপুর এলাকার বাসায় সদ্য এসএসসি পাস করা ধর্ষিতা মেয়েটি ও তার মায়ের ওপর শালিসের নামে অমানবিক ওই নির্যাতন চালানো হয়। আহত ছাত্রীটিকে ওই রাতে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পরে রাতেই নির্যাতনের শিকার মা এ ঘটনায় নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকিসহ মোট ৯ জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার বাদিনী নির্যাতিতা গৃহবধূ জানান, তার স্বামী নন্দীগ্রাম উপজেলার আতাইল গ্রামে চায়ের দোকান করে সংসার চালান। লেখাপড়ার কারণে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে শহরের চকসূত্রাপুর বেগম বাজার লেন এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। মেয়েটি এবার বাদুড়তলার জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছে।
মেয়েকে ভালো কলেজে ভর্তি করাতে নারী কাউন্সিলর রুমকির ভগ্নিপতি (ছোট বোন জামাই) তুফানের বন্ধু আলী আযম দিপুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। দিপু তাদেরকে নিয়ে গেলে কলেজে ভর্তিতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তুফান। এরই প্রেক্ষিতে তুফানের সঙ্গে মাঝে-মাঝেই মোবাইলে যোগাযোগ করতো মেয়েটি।
ওই মা অভিযোগ করেন, গত ১৭ জুলাই বন্ধু আতিক কৌশলে তার মেয়েকে ডেকে চকসূত্রাপুর চামড়া গুদাম এলাকার তুফানের বাসায় নিয়ে যান। সেখানে তুফান মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। পরদিন ১৮ জুলাই মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান তিনি।
এদিকে তুফানের স্ত্রী আশা খাতুন বিষয়টি জানতে পেরে তার বড় বোন স্থানীয় নারী কাউন্সিলর রুমকিকে জানান। তারা অভিযোগ তোলেন, ওই ছাত্রী তুফানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।
এ অভিযোগে গত ১৮ জুলাই বিকেলে কাউন্সিলর রুমকি ওই ছাত্রীদের ভাড়া বাসায় গিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। নিজের বাড়ির পাশে মেয়েটির নানার বাড়িতে গিয়েও হুমকি-ধমকি দেন কাউন্সিলর। ঘটনার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ওই বাড়ির তালা খোলা হবে না বলেও জানান রুমকি।
বিষয়টি জানার পর বাদিনী তার মেয়েকে নিয়ে শুক্রবার বগুড়ায় ফেরেন।
বিকেলে রুমকির বাসায় যান মা-মেয়ে। এ সময় রুমকির মা রুমি বেগম ও ছোট বোন তুফানের স্ত্রী আশা ওই বাসাতেই ছিলেন। তারা মা ও মেয়েকে বসিয়ে রেখে মোবাইল ফোনে দিপু, আতিক, মুন্না, রূপমসহ কয়েকজনকে ডেকে নেন। নারী কাউন্সিলর কোনো শালিস দরবার না করেই মা-মেয়েকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এর প্রতিবাদ করায় রুমকি এবং তার মা-বোন তাদেরকে মারধর করেন।
একপর্যায়ে তারা মুন্নার সহায়তায় ওই ছাত্রী ও তার মায়ের চুল কেটে মাথা ন্যাড়া করে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ০২০০ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৭
এমবিএইচ/এএসআর