ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

একশ বছর মেয়াদী ‘ডেল্টা প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
একশ বছর মেয়াদী ‘ডেল্টা প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে পানি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা: ১২টি দেশের সহযোগিতায় বাংলাদেশ একশ বছর মেয়াদী ‘ডেল্টা প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও এ তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ‘ঢাকা পানি সম্মেলন-২০১৭’ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় ভালো প্রস্তুতি রয়েছে

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ মেয়াদী সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় আগামী একশ বছর-মেয়াদী ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ নামে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

যাতে একশ বছরে পানির প্রাপ্যতা, তার ব্যবহার এবং প্রতিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রাখা হয়েছে।  

এ পরিকল্পনায় ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও পানির বৈশিষ্টের ভিন্নতা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এতে সমতল, পাহাড় ও উপকূলীয় এলাকাকে ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনার আওতায় নেওয়া হয়েছে।

আর্সেনিক ও লবণাক্ততা, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস, ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণের অপ্রতুলতা, পানির অপচয় এবং শিল্প বর্জ্যসহ নানা কারণে পানি দূষণ বাংলাদেশে পানির ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় মূল সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব সমস্যা মোকাবিলা করতে আমরা স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ-মেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি।  

জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে পানি ব্যবস্থাপনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ে পৃথক তহবিল গঠনের দাবির কথা আবারো উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

এর আগে গত বছরের ১৫ নভেম্বর মরক্কোর মারাকাস শহরে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তহবিল গঠনের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোটা বিশ্বে এ মুহূর্তে ২৪০ কোটি মানুষ স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এছাড়া নিরাপদ পানির অভাবে পৃথিবীতে বছরে ১০ লাখ মানুষ মারা যান, যাদের অধিকাংশই শিশু। প্রতিদিন গড়ে বিশ্বে এক হাজার শিশু বিশুদ্ধ পানির অভাবে প্রাণ হারায়।

পৃথিবীর শতকরা ৯০ভাগ বিপর্যয়ের জন্য পানিকে দায়ী করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুর শতকরা ৭০ভাগই সংঘটিত হয় বন্যা এবং অন্যান্য পানি-সংক্রান্ত দুর্যোগে।

বিশুদ্ধ খাবার পানি শুধু আমাদের বেঁচে থাকার জন্যই নয়, সব প্রাণিকূলেরও বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বে শতকরা ১ ভাগেরও কম পানিসম্পদ পান করার জন্য নিরাপদ বলে বিবেচনা করা হয়। ফলে এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ১শ কোটি মানুষের সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।

তিনি বলেন, বিশ্বের প্রায় একশ’ সাত কোটিরও বেশি মানুষ নদী অববাহিকায় বসবাস করেও পানির চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। মানুষের সৃষ্ট ৮০ শতাংশেরও বেশি অপরিশোধিত বর্জ্য পানি ও প্রকৃতিতে ফিরে গিয়ে আরও বড় আকারে পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি করছে।

‘ঢাকা পানি সম্মেলন-২০১৭’, ডেল্টা সামিটের ওয়ার্কিং সেশন এবং শেরপা বৈঠকগুলোতে বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনা ও পয়ঃনিষ্কাশনের পথে চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত হবে এবং এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভবিষ্যৎ কর্মকৌশলও বেরিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আর্সেনিক সমস্যা মোকাবিলায় ‘ন্যাশনাল পলিসি ফর আর্সেনিক মিটিগেশন অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন প্লান’ বাস্তবায়ন, লবণাক্ত পানি-প্রবণ এলাকায় পুকুরের পানি ফিল্টার করে লবণাক্ততা মুক্ত করা হয়েছে ৭ হাজার পুকুর এবং ৩২ হাজার ৬শ’ গভীর কূপ খনন করা, বর্ষার পানি সংরক্ষণে ৪ হাজার ৭শ জলাধার নির্মাণ, শিল্পাঞ্চল, বড় বড় আবাসিক এলাকায় জলাধার তৈরি, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, বর্জ্য ও দূষিত পানি নিষ্কাশনের পদক্ষেপ নেওয়া, নাব্যতা হ্রাস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রমসহ নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনায় সরকারের নেয়া বিভিন্ন  কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানির সংরক্ষণ ও ব্যবহারের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ২০২১ সালের মধ্যেই সবার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে পারবেন বলে দৃঢ় আশা প্রকাশ করেন।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।

দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও ডেল্টা কোয়ালিশনভুক্ত অঞ্চলের ২৭টি দেশের মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রীসহ ৮২জন বিদেশি প্রতিনিধি অংশ গ্রহণ দু’দিনব্যাপী (২৯ ও ৩০ জুলাই) এ সম্মেলন শুরু হয়েছে। এ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘টেকসই উন্নয়নে পানি’।
 
ঢাকায় প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এই সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও ডেল্টা কোয়ালিশনভুক্ত অঞ্চলের ২৭টি দেশের মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রীসহ ৮২ জন বিদেশী প্রতিনিধি অংশ গ্রহণ করবেন।
 
সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে সুপারিশক্রমে ‘ঢাকা পানি ঘোষণাপত্র’ গৃহীত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
এমইউএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad