মিরাজ লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার পূর্ব সিন্দুর্না গ্রামের ভূমিহীন দিনমজুর আব্দুল হামিদের ছেলে। সে স্থানীয় হাতিবান্ধা ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র।
শুক্রবার (২১ জুলাই) বিকেলে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে '' স্কুলে যেতে পারছে না মিরাজ '' এ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই খবরের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ শিশু মিরাজের পাশে দাঁড়ায়। শুধু সরকারিভাবে নয় ব্যক্তিগত উদ্যোগেও মিরাজে পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই।
শুক্রবার রাতে জার্মান প্রবাসী মি. মিজান নামে এক ব্যক্তি আর্থিক সহযোগিতা দিতে মিরাজের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে মিরাজের বাবা আব্দুল হামিদ বাংলানিউজকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনাদের খবর দেখে শনিবার ভোর বেলা আমার বাড়িতে এসে হাজির হন হাতিবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রমজান আলী। তিনি মিরাজ ও আমাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
সেখানে ছুটে আসেন জেলা প্রশাসক ও জেলার চিকিৎসকরা। তাৎক্ষণিক পারিবারিক খরচ চালাবার জন্য জেলা প্রশাসক মিরাজের পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা দেন।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. আমিরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের মহা পরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদের নির্দেশেই তারা মিরাজকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। রোববার (২৩ জুলাই) সকালে মিরাজকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে। সেখানে চিকিৎসকদের নিয়ে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ওই বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত শিশু মিরাজের চিকিৎসা করা হবে। প্রয়োজন হলে সরকারিভাবে মিরাজকে দেশের বাইরে পাঠানো হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মো. আলাউদ্দিন খাঁন বাংলানিউজককে বলেন, বাংলানিউজে খবর পড়ে মিরাজের বিষয়টি অবগত হয়েছি। শনিবার রাতেই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে মিরাজের খোঁজ খবর নিতে বলি। তারা মিরাজকে নিয়ে এসে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। মিরাজের চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসাকালীন মিরাজের বাড়ির খরচ চালাবার জন্য সমাজসেবা দপ্তর ও জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।
মূলত মিরাজের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। বস্তুনিষ্ট সংবাদ তুলে ধরে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বাংলানিউজ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মো. আলাউদ্দিন খাঁন। সেই সঙ্গে মিরাজের সুস্থতা কামনায় সবার কাছে দোয়া চান তিনি।
উল্লেখ্য, জন্মের ৬ মাস বয়সে গায়ে চুলকানী হয় শিশু মিরাজের। আস্তে আস্তে তা পুরো শরীরের ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার পর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চর্মরোগ বিভাগে চিকিৎসা করা হলেও উন্নতি হয় নি। বর্তমানে মিরাজের শরীর ফুলে গেছে। এতে তার শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। সেই সঙ্গে শরীর দিয়ে পড়ছে দুর্গন্ধযুক্ত রস। এ জন্য মিরাজের কাছে কেউ ভিড়তে চায় না। স্কুলে কেউ তার কাছে বসতে চায় না সেজন্য তাকে স্কুলে যেতে নিষেধ করেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবুও বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করেনি মিরাজ।
** স্কুলে যেতে পারছে না মিরাজ
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, ২২ জুলাই, ২০১৭
আরএ