ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

যাবজ্জীবন সাজাভোগী একজন এমদাদুরের অধ্যবসায়

তাহজিব হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১০
যাবজ্জীবন সাজাভোগী একজন এমদাদুরের অধ্যবসায়

সিলেট: অদম্য ইচ্ছা থাকলে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠও যে লক্ষ্যপথে বাধ সাধতে পারে না- তার অনন্য উদাহরণ যাবজ্জীবন সাজাভোগী একজন এমদাদুর রহমান।

খুনের মামলায় বাবা চান মিয়া, চাচা রশিদ মিয়াসহ এমদাদুরদের পরিবারের ছয় জন ১৯৮৯ সালে গ্রেপ্তার হন।

সেই থেকেই কারাগারের বন্দিজীবন শুরু তাদের। এরপর মামলার রায় হয়। সেই রায়ে যাবজ্জীবন সাজা হওয়ায় আর মুক্তির স্বাদ পাওয়া হয়নি তাদের।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার সিলেট কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন এমদাদুরসহ এমনই ৫২ যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি। তবে বাদবাকি বন্দিদের চেয়ে এমদাদুরের গল্পটা একটু ভিন্ন।

খুনের মামলার বিচারকাজ চলা অবস্থায়ই জেলে থেকে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেন এমদাদুর। হয়তো সেদিন বন্দিত্ব তাকে পাসের আনন্দ উদযাপন করতে দেয়নি। তাই বলে থেমে থাকলে কী হয়! বন্দিত্ব তার পড়াশোনা করার অদম্য ইচ্ছাটাকে বন্দি করে রাখতে পারেনি।

কর্তৃপক্ষের কাছে আরও পড়াশোনা করার আবেদন জানান তিনি। ইচ্ছার জোরেই এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হন ১৯৯৩ সালে। এরপর ১৯৯৭ সালে বিএ।

‘প্রথম প্রথম আমার মাঝে খুব হতাশা কাজ করতো। পরে চিন্তা করে দেখলাম এভাবে দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকলে মন খারাপ থাকে। শরীরও ভেঙে পড়বে। তাই সব দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে পড়াশুনায় মনোযোগী হয়েছি’, শুক্রবার কারামুক্তির পর বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে তার বড় অর্জনকে এমন সাদামাটা কথায় তুলে ধরেন এমদাদুর রহমান।

আইন বিষয়ে (এলএলবি) পড়ারও ইচ্ছা ছিল তার। তবে হয়ে ওঠেনি। তবে এমদাদুর নিজে নন এতে বাধ সাধে কারা আইন। কারাগারে থেকে আইন বিষয়ে পড়ার বিষয়ে বিধিনিষেধ থাকাতেই সেই ইচ্ছা পূরন হয়নি তার।  

এমদাদুর বলেন, ‘এলএলবি পড়ার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু কারাবন্দি থেকে এলএলবি পড়ার নিয়ম না থাকায় পড়তে পারিনি। আমার মতো হতভাগাদের সহায়তা দেওয়ার জন্যই এই বিষয়টিতে পড়ার ব্যাপারে মনস্থির করেছিলাম। ’

এখনো আইন বিষয়ে পড়ার বিষয়ে অটল এমদাদুর।

‘এবার ব্যবসা করব এবং পাশাপাশি এলএলবিটা কমপ্লিট করবো’, বলছিলেন তিনি।

এমদাদুরের দাবি, যে খুনের মামলায় তার সাজা হয়েছিল তার লাশও তিনি দেখেননি।

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নেসার আলম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘সে সব সময় কারাগারের নিয়ম-শৃংখলা ঠিকভাবে মেনে চলতো। খুব ভদ্র স্বাভাবের ছেলে। অদম্য ইচ্ছার অধিকারী। সেই জোরেই সে বিএ পাস করেছে। আমাদের কাছে আইন বিষয় নিয়ে পড়ার আবেদন করেছিল। বিধিনিষেধের কারণে তা হয়নি। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।