ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

টেংরার জাত উদ্ভাবন, ফিরবে বিপন্ন অন্য দেশি মাছও!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৭ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১৭
টেংরার জাত উদ্ভাবন, ফিরবে বিপন্ন অন্য দেশি মাছও! উদ্ভাবিত টেংরা/ছবি: বাংলানিউজ

নীলফামারী: বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের সৈয়দপুর স্বাদু পানি উপকেন্দ্রে দেশি জাতের বিলুপ্তপ্রায় মাছ ফিরিয়ে আনতে গবেষণা চলছে। প্রথমবারের মতো এ উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা টেংরা মাছের বিপন্ন প্রজাতির কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও পোনা প্রতিপাদন কলা-কৌশল উদ্ভাবন করেছেন, যা ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করা হয়েছে।

দেশে এ ধরনের উপকেন্দ্র রয়েছে ৫টি। এর মধ্যে সৈয়দপুর-রংপুর মহাসড়কের পাশে উপজেলার কামারপুরে স্বাদু পানি উপকেন্দ্রটি ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রায় ১০ একর জায়গার উপকেন্দ্রটিতে উত্তরের বিলুপ্তপ্রায় ৫০ প্রজাতির দেশি মাছ নিয়ে গবেষণা, জাত উদ্ভাবন, চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণ ও হাতে-কলমে শিক্ষা, পরামর্শ ও প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ চলছে। দেওয়া হচ্ছে রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটসহ উত্তরের বিভিন্ন জেলায় দেশি জাতের মাছ চাষ-প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সহায়তাও।

টেংরা মাছের ১০ দিন বয়সী পোনাসরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপকেন্দ্রের ১৫টি পুকুরে মাগুর, শিং, কৈ, রুই, কাতলা, জেনাটিক্যালি ইমপ্রুভড তেলাপিয়া, কালচে ও সাদা বর্ণের (গিফ্ট) সরপুটি, টেংরা, ভোদা, শোল, টাকি, গুতুমসহ নানা দেশি বিলুপ্তপ্রায় মাছের জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়নের কাজ চলছে। পুকুরগুলোতে দেশি মাছের লাফালাফিতে প্রাণ জুড়িয়ে যায়।

এরই মধ্যে টেংরার জাত উদ্ভাবনের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খোন্দকার রশীদুল হাসানের নেতৃত্বে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালিহা হোসেন মৌ ও শওকত আহম্মেদ। গুতুম মাছের উন্নত জাত উদ্ভাবনে গবেষণার কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা।

চলছে গবেষণাটেংরা গবেষণা দলে থাকা নারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালিহা হোসেন মৌ বলেন, ‘টিমে কাজ করতে পেরে খুব গর্ববোধ করছি। মানুষ এখন বেশি বেশি সুস্বাদু টেংরা খেতে পারবেন’।

এ সাফল্যের পর দায়িত্ব-কর্তব্য আরও বেড়েছে বলেও মনে করেন তিনি।  

উপকেন্দ্রের প্রধান ড. খোন্দকার রশীদুল হাসান জানান, টেংরা উদ্ভাবনের পর গুতুম মাছের জাত উদ্ভাবনও প্রায় শেষ পর্যায়ে এসেছে। এ উপকেন্দ্র থেকে সরকারি কর্মকর্তা, মাছচাষি, খামারিসহ প্রায় ১ হাজার ২০০ জনকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণলব্ধ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সফলতা অর্জন করেছেন অনেকেই।

গিফ্ট জাতীয় তেলাপিয়াতিনি জানান, মিঠা পানির জলাশয়ে বিশেষ করে পুকুর, নদী-নালা, খাল-বিলে যে মাছগুলো পাওয়া যায়, তার মধ্যে টেংরা মাছ খুবই সুস্বাদু, অনুপুষ্টি সমৃদ্ধ। কাটা কম থাকায় সকলের কাছে প্রিয়।

হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগে ডিম থেকে রেণু পোনা তৈরি করে ১০ দিনের মধ্যে পুকুরে ছাড়া হয়। বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত টেংরা মাছের প্রজননকাল। এ সময় ৮/১০ গ্রাম ওজনের টেংরা সংগ্রহ করে প্রস্ততকৃত পুকুরে মজুদ করে কৃত্রিম প্রজননের জন্য ব্রুড তৈরি করা হয়।  

রেণু পোনা ছাড়ার আগে পুকুর শুকিয়ে প্রথমে প্রতি শতাংশে এক কেজি হারে চুন প্রয়োগের পাঁচদিন পর ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৭৫ গ্রাম টিএসপি ও চার কেজি গোবর ব্যবহার করা হয়।   ব্রুড প্রতিপালন পুকুরের চারপাশে জালের বেষ্টনি দিয়ে ঘেরা দিতে হবে। একইসঙ্গে নির্দেশিকা মতো খাবার ও যত্ন নিতে হয়। পুকুরে ছাড়ার ৮/১০ মাসের মধ্যে এ টেংরা খাবার উপযোগী হয়ে ওঠে।

কামারপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম লোকমানসহ অনেক এলাকাবাসী বলেন, উত্তর জনপদের অবহেলিত মাছ চাষিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য প্রতিষ্ঠানটি আশীর্বাদস্বরূপ। তবে স্বাদু পানি উপকেন্দ্রটিকে পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র করা প্রয়োজন। এতে করে বৈজ্ঞানিকরা আরও গবেষণার সুযোগ পাবেন। তাদের সফলতায় তখন বিলুপ্তপ্রায় দেশি জাতের মাছ চাষ করে চাষিরা উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি আমিষসহ মাছের ঘাটতিও থাকবে না।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মোহাম্মদও সৈয়দপুরের স্বাদু পানি উপকেন্দ্রের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। মোবাইল ফোনে তিনি জানান, টেংরা মাছের প্রজনন, রেণু পোনা তৈরি ও লালন-পালনের প্রযুক্তি মৎস্য অধিদফতরের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। ফার্ম ম্যানেজারদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

খুব তাড়াতাড়ি দেশি জাতের এ টেংরা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এলাকাবাসী ও দুই জাতীয় সংসদ সদস্য স্বাদু পানি উপকেন্দ্রটিকে পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রে রূপান্তরের জন্য বলেছেন। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করছে বলেও উল্লেখ করেন ড. ইয়াহিয়া মোহাম্মদ।

বাংলাদেশ সময়: ০২০০ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।