ঢাকা: ঈদে যাত্রী পরিবহণের জন্য ফিটনেসবিহীন ও চলাচলের অযোগ্য অনেক লঞ্চ মেরামত করা শুরু হয়েছে। ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ২৭টি ছোটবড় ডকে এসব লঞ্চ মেরামত এবং রং করার কাজ চলছে।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডির অনুসন্ধানে জানা যায়, সদরঘাটের বিপরীত দিকে বুড়িগঙ্গার তীরের ডকগুলো প্রায় পক্ষকাল থেকে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। ঈদের আগ পর্যন্ত প্রত্যেকটি ডকই একাজের জন্য বুকিং দেওয়া হয়েছে। ঈদের আগেই পানিতে ভাসানোর জন্য রাতদিন লঞ্চগুলো মেরামত আর রংয়ের কাজ চলছে।
‘বেবি সাহেবের ডক-এর স্বত্তাধিকারী মোহাম্মদ হোসেন বেবি শুক্রবার বিকেলে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘ঈদের আগে লঞ্চের মেরামতের কাজ বেড়ে যায়। ডক ভাড়া নেওয়ার জন্য আগে থেকেই লঞ্চ মালিকরা যোগাযোগ করেন। ’
প্রায় ৪০ বছরের ডক ব্যবসার অভিজ্ঞতার আলোকে মোহাম্মদ হোসেন বেবি জানান, ফিটনেস থাকা এবং না থাকা সব ধরনের লঞ্চই ডকে আসে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডকে আসা লঞ্চগুলোর মেরামতের কাজ তারা করেন না, তারা শুধু ডকের জায়গা ভাড়া দেন। মেরামতের কাজ করে অন্যরা। ’
লঞ্চ মেরামতের জন্য দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জে নদী সংলগ্ন এলাকায় অন্তত দুই শতাধিক ব্যক্তি আছেন যারা চুক্তিতে জাহাজ মেরামত করে থাকেন বলে জানান তিনি।
চুক্তিতে লঞ্চ মেরামতকারীদের মধ্যে রয়েছেন ‘বিছমিল্লাহ মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং’য়ের স্বত্তাধিকারী রফিক উদ্দিন ভুঁইয়া। শুক্রবার বিকেলে বুড়িগঙ্গার তীরে একটি লঞ্চ মেরামতের তদারকি করছিলেন। কাজের ফাঁকে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘কোথায় কি কাজ করতে হবে লঞ্চের মালিক তা বলে দিলে আমরা কাজ করি। এছাড়া অনেকসময় আমরাও পরামর্শ দিয়ে থাকি কোন কাজ করতে হবে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর থেকে জরিপকারী দল এসে মাঝেমধ্যে কাজ দেখে যায়। তবে সব লঞ্চের ক্ষেত্রে তারা এভাবে দেখতে আসেনা। ’
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নিয়ম হলো বার্ষিক জরিপের মাধ্যমে নৌ-পথে চলাচলকারী লঞ্চগুলোর ফিটনেস পরীা করে দেখা এবং ফিটনেসবিহীন লঞ্চ চলতে না দেওয়া। এই কাজের জন্য সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের ৩০ জন পরিদর্শক রয়েছেন।
২০০৫ সালে একশটি লঞ্চ এবং ২০০৬ সালে একশ’ সাতটি লঞ্চ ‘আনফিট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও গত চারবছরেও এ লঞ্চগুলোর যাত্রী পরিবহণ বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। ‘ফিটনেস’ সার্টিফিকেট পাওয়া লঞ্চগুলোই যেখানে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনায় পতিত হয় সেখানে চলাচলের অযোগ্য লঞ্চগুলোর ঝুঁকি আরো বেশি।
বিআইডব্লিউটিএ’র হিসাব অনুযায়ী ১৯৯৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে নৌ দুর্ঘটনায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।
সারাদেশে প্রায় আট হাজার লঞ্চ বিভিন্ন রুটে নিয়মিত যাত্রী পরিবহনের কাজ করছে। এর মধ্যে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের নিবন্ধনকৃত লঞ্চ মাত্র দুই হাজার ৮২টি। এর মধ্যে আবার নৌযান পরীা-নিরীার জন্য কাগজপত্র জমা দিলে এক হাজার ৩শ’ ৫৪টি লঞ্চকে ত্রুটিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। তবে ত্রটিপূর্ণ এসব লঞ্চ এখনো চলছে বলে সূত্রে জানা যায়।
‘বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ’ (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মিয়া শুক্রবার বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি বলেন, ‘ঈদের সময় প্রচুর চাপ থাকে। এ সময় ফাঁকে ফোকরে হয়তো ‘ফিটনেসবিহীন’ কোনো লঞ্চ চলাচলের সুযোগ নিতেও পারে। ’
তিনি বলেন, ‘ফিটনেস না থাকা লঞ্চগুলো অনেক সময় মূল বন্দরের জেটিতে না থেমে বন্দরের আগে বা পরে যাত্রী নামিয়ে দেয়। ’
তবে ফিটনেস ছাড়া কোনো লঞ্চকে ঈদের সময় চলাচলের জন্য ঢাকা নৌ বন্দরের সময়সূচীর অন্তর্ভুক্ত করা হবে না বলে জানান আব্দুল মালেক মিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, ২০ আগস্ট ২০১০