ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাগরে ইলিশের আকাল: সংকটে ৪০ হাজার জেলে পরিবার

আবু জাফর সালেহ্, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১১
সাগরে ইলিশের আকাল: সংকটে ৪০ হাজার জেলে পরিবার

বরগুনা: একদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, অন্যদিকে ভরা মৌসুমে সাগরে ইলিশের দেখা না মেলায় বরগুনার উপকূলীয় প্রায় ৪০ হাজার জেলে পরিবার হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। এ অবস্থায় ঘরে বসে মহাজনের টাকা খেয়ে ঋণের জালে আস্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছে তারা।



অপরদিকে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া মাথায় নিয়ে জীবন ও জীবিকার তাগিদে কিছু জেলে সাগরে গেলেও প্রায়শ পড়ছে জলদস্যুদের খপ্পড়ে। জাল-নৌকা লুঠসহ তারা প্রায়ই মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে জেলেদের। প্রতিনিয়ত অর্থনৈতিক দৈন্যে আর সংকটে জেলে পরিবারগুলোতে চলছে চরম অসহনীয় অবস্থা।

প্রতিবার ৩০/৩৫ হাজার টাকা খরচ করে বড় আশা নিয়ে জেলেরা সাগরে গেলেও হতাশা নিয়ে ফিরতে হয়। তার ওপরে রয়েছে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জান-মাল খোয়ানোর শংকা। গত কয়েকদিনের বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাঁচ শতাধিক মাছ ধরা ট্রলার পাথরঘাটা মৎস্য বন্দর ও আশেপাশের এলাকায় নোঙর করে আছে। অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছে এসব জেলেদের পরিবারের। এর প্রতিকারে চাপা কান্না আর হতাশা ছাড়া কিছুই করার নাই তাদের।

অন্যান্য বার ইলিশের ভরা মৌসুমে পাথরঘাটা মৎস্য বন্দরে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার ইলিশ বেচাকেনা হতো। এবার দৈনিক ১০/১৫ লাখ টাকারও ইলিশ বেচাকেনা হয়নি বলে জানা গেছে মৎস্য বন্দর সূত্রে।

বরগুনা, পাথরঘাটা, আমতলী, তালতলীসহ উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ৪০ হাজার মৎসজীবী পরিবার রয়েছে। মাছ শিকার করতে না পারলে তাদের পরিবারে আহার জোটেনা। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার থেকে সাগর উত্তাল রয়েছে। জেলেরা সাগরে টিকতে না পেরে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে আসছে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত পাথরঘাটা মৎস্য বন্দরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঁচ শতাধিক ট্রলার নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে।

বরগুনার ফকিরহাটের জেলে সালাম, এনামুল, জাহাঙ্গীর ও শহিদুল সহ একাধিক জেলে বাংলানিউজকে বলেন, সাগরে মাছ নাই, মোগো খাওন নাই। আল্লায় ভালো না পাইলে মোগো দ্যাহারও (দেখার) কেউ নাই।

পাথরঘাটার মৎস্য ব্যবসায়ী সগীর হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ‘জেলেদের কাছে তাদের অনেক টাকা পাওনা রয়েছে। জেলেরা ৩০/৩৫ হাজার টাকা খরচ করে সাগরে গিয়ে খালী হাতে ফিরে আসছে। এসব জেলেদের ঘরে এখন খাবার নেই। ’
 
বরগুনা জেলা ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল মান্নান বাংলানিউজকে জানান, অধিকাংশ জেলে পরিবারে চুল জ্বলছে না। অভাবে-অনাহারে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতি সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, জেলেদের জালে মাছ ধরা না পড়ায় আল্লাহর করুণা কামনায় গত বুধবার পাথরঘাটা মৎস্য বন্দরে মোনাজাত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।