ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

রাজধানীতে আবার পুরনো ভাঙাচোরা গাড়ি ॥ তীব্র যানজটে দুর্ভোগ চরমে

মুরসালিন হক জুনায়েদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১০
রাজধানীতে আবার পুরনো ভাঙাচোরা গাড়ি ॥ তীব্র যানজটে দুর্ভোগ চরমে

ঢাকা: পুলিশি অভিযান মুখ থুবরে পড়ায় পুরনো আর লক্কড়ঝক্কড় মার্কা গাড়িতে আবার সয়লাব হয়ে গেছে রাজধানী। এমনকি সারা যেসব গাড়ি রাস্তায় দেখা যায়নি ঈদকে সামনে রেখে সেসব গাড়িও নেমেছে রাজধানীর সড়কে।

রঙ পাল্টে কোনোরকমে চলাচলের উপযোগী করে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে গাড়িগুলো। ফলে দুঃসহ যানজট, শব্দ দূষণ আর কালো ধোঁয়ায় নগরবাসীর প্রাণ ওষ্ঠাগত।

অভিযোগ রয়েছে, সরকার ঘোষিত ২০ বছরের পুরোনো ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি উচ্ছেদ অভিযানের শিথিলতার সুযোগে ঢাকার রাস্তায় ওইসব গাড়ি নামছে। ফলে যানজট থেকে নরগরবাসীকে মুক্তি দেওয়ার সরকারের কোনো উদ্যোগই আলোর মুখ দেখছে না। রাস্তার তুলনায় গাড়ির সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় ট্রাফিক বিভাগ যানজট সামলাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে।

রোজার মাসে যানজট কমাতে গত বৃহস্পতিবার সরকারি এক আদেশে ঢাকাসহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রায় একমাসের জন্য ছুটি দেওয়া হয়। এছাড়াও সিগন্যাল বাতি মানা, লেন মেনে গাড়ি চালানোর মত ট্রাফিক আদেশগুলো রমজান মাস উপলক্ষ্যে চালু করা হয়। অথচ এসব উদ্যোগে কোনো লাভই হচ্ছে না বলে একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন।

গত শনিবার (৭ আগস্ট) ডিএমপি কমিশনার লেন মেনে গাড়ি চলা বাধ্যতামূলক বলে পুনরায় ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে রাজধানীর অধিকাংশ সড়কেই তীব্র যানজট শুরু হয়। এ ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাজধানীতে গাড়ি না কমালে কোনোভাবেই যানজট নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না। কিন্তু কোনোমতেই লেন অমান্য করে গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সকালে অফিসে যাওয়ার সময় গাড়ি চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক থাকলেও অফিস ছুটির পর সবগুলো সড়কেই অচলাবস্থার সুষ্টি হয়। বিকেল তিনটার পর কোনো সড়কেই দ্রুত চলাচলের বিন্দুমাত্র সুযোগ থাকে না।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মোরশেদ সরকার জানালেন তিনি আড়াইটার সময় সদরঘাট থেকে হতে কারওয়ান বাজারের উদ্দেশ্যে বাসে ওঠেন। কিন্তু বাংলামোটর পৌঁছাতেই তার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পেরিয়ে যায়।

ধানমন্ডির স্কলারস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, ঈদের কেনাকাটার জন্য অফিস শেষে বেলা দেড়টায় তিনি ধানমন্ডি থেকে পান্থপথের বসুন্ধরা সিটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে তিনটার সময় পৌঁছান। কেনাকাটা শেষে চারটার সময় মার্কেট থেকে বের হয়ে দুই ঘন্টা কারওয়ান বাজারের স্টপেজে দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো বাস পাননি। হাতে গোনা যে কয়টি বাস রাস্তায় চলে সেগুলোতে উঠতেও রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়।

এদিকে পুরনো গাড়ি বিরোধী অভিযান চলাকালেও রাজধানীতে ব্যাপক সংখ্যক লক্কড় ঝক্কড় মার্কা গাড়ির দেখা মিলেছে। শুধুমাত্র সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বহনের কাজে নিয়োজিত থাকার অজুহাতে এসব গাড়ির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সরকারি কাজে ৪০ বছরের পুরনো গাড়ি !

এক হিসাবে জানা যায়, খোদ সরকারি সেক্টরে পরিবহনের কাজে নিয়োজিত আছে প্রায় ১৫শ’ হতে ১৬ শ’ গাড়ি। বিশ বা পঁচিশ বছর নয়, সবগুলো গাড়িই অন্তত চল্লিশ বছরের পুরনো। অথচ অভিযান চলার সময় এসব গাড়ির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএ’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, এসব গাড়িতে সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চলাচলের কারণে গাড়িগুলো উচ্ছেদের আন্তরিক ইচ্ছা থাকলেও তা সম্ভব হয়না। অভিযান পরিচালনাকারি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ ব্যাপারে কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাংলাদেশের সময়: ১২৩৬ ঘণ্টা, ২০ আগস্ট, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।