প্রকৃতির টানে পর্যটন অঞ্চল শ্রীমঙ্গলে প্রতিদিন বেড়াতে যাওয়া লোকজনের কাছে সমাদৃত জলঢুপি আনারস। সিলেটে বেড়াতে আসা লোকজনও বাস কিংবা ট্রেনে ফেরার পথে শ্রীমঙ্গল থেকে কিনে নেন এই আনারস।
শ্রীমঙ্গলের আনারস বিক্রেতা চন্দন কুমার দাস বলছিলেন, ‘শ্রীমঙ্গলে দুই ধরনের আনারস পাওয়া যায়। এরমধ্যে আকারে বড় ‘ক্যালেন্ডার’ ও আকারে ছোট গোলাকৃতির ‘জলঢুপি’। ক্যালেন্ডার ৫০ টাকা ও জলঢুপি প্রকারভেদে ৩০-৪০ টাকা হালি বিক্রি হয়। ’
শ্রীমঙ্গলে চাষ হলেও মূলত জলঢুপি আনারসের উৎপত্তিস্থল সিলেটের বিয়ানীবাজারের জলঢুপ গ্রামে। ওই গ্রামের নামেই আনারসের নামকরণ। সেখানে উঁচু-নিচু টিলাতে, বাড়ির আশপাশে আনারস চাষ হতো, এখনো হয়। সেই আনারস শ্রীমঙ্গলে বিস্তৃতি লাভ করে।
বর্তমানে শ্রীমঙ্গলের অসংখ্য টিলায় আনারস চাষ হয়। এমন তথ্য জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। বৃহত্তর সিলেটের মধ্যে সর্বাধিক আনারস চাষের রেকর্ড মৌলভীবাজার তথা শ্রীমঙ্গলে। এখন এই আনারস ধরে রেখেছে শ্রীমঙ্গলের সুনাম। চাষিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মূলত দুই ধরণের আনারস চাষ হয় শ্রীমঙ্গলে। এ দু’টি হলো ক্যালেন্ডার আর জলঢুপি। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে দু’টির স্বাদ আলাদা। রসালো জলঢুপি খেতে মিষ্টি। ক্যালেন্ডারে মিষ্টির পরিমাণ কিছুটা কম।
তবে বানরের উৎপাতে আনারসের চাষ থেকে ক্রমশ মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন চাষিরা। চাষিদের অনেকে বলেন, আনারস চাষ করলে পারিপক্ক হওয়ার আগে বানরের দল এসে বাগানে ডুকে ফলগুলো নষ্ট করে দেয়। বানরগুলো পাকা আনারস নিয়ে খেয়ে ফেলে। কিন্তু জীববৈচিত্র্য সংরক্ষের দায়বদ্ধতা থেকে বানরকে মারতে পারেন না। ফলে অনেক চাষি লেবু চাষের দিকে ঝুঁকছেন। কারণ লেবু টক হওয়ায় বানররা খেতে পারে না।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সিলেট বিভাগে মোট ১ হাজার ৮শ’ ৯৭ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়। এর মধ্যে সর্বাধিক আনারস চাষ হয় মৌলভীবাজারে ১ হাজার ১২৪ হেক্টর এবং সর্বনিম্ন সুনামগঞ্জে ২৭ হেক্টর এলাকায়। সিলেটে ১৯৪ হেক্টর ও হবিগঞ্জে ৫৫২ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়ে থাকে।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মামুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণত টিলা বা এমন এলাকায় আনারস চাষ হয়ে থাকে। যে কারণে মৌলভীবাজারে আনারসের ফলন বেশি হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৭
এনইউ/এইচএ/