অভিযোগ উঠেছে নিয়ম মতো টিসিবির পণ্য তুলছেন ঠিকই। কিন্তু সেই পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানছেন না ডিলাররা।
বিক্রয় চালান ও সরবরাহ আদেশে টিসিবি পণ্যের নাম, বিক্রির স্থানসহ দাম উল্লেখ করার কথা রয়েছে। কিন্তু তা মানা হচ্ছে না। ফলে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারা জানতে পারছেন না তাদের এলাকায় টিসিবি পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে, কতো দামে বিক্রি করা হচ্ছে আর কি কি পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
সরবরাহ আদেশের ৫ নম্বর শর্তে উল্লেখ করা হয়, পণ্যের নাম ও বিক্রি মূল্যসহ ৬ ফুট প্রশস্ত ও ৩ ফুট লম্বা আকারের ব্যানারে (লাল কাপড়ে সাদা কালিতে) ‘এখানে টিসিবি পণ্যসামগ্রী ন্যায্য মূল্যে বিক্রয় করা হয়’ লিখে ডিলারের দোকানের সামনে টাঙিয়ে রাখতে হবে। তবে বেলদার পাড়ার টিসিবি ডিলার মেসার্স আলী ট্রেডার্সে (কাজল ভাণ্ডার) গিয়ে দেখা যায় তারা ওই ব্যানার লাগাননি। কেবল বেলদার পাড়াই নয়, সপুরা বিসিক শিল্প এলাকা, শালবাগান ও নওদাপাড়ায় গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে।
টিসিবি থেকে পণ্য তুলে ডিলাররা দেদারসে তা বিক্রি করছেন বাজার দরেই। এর মধ্যে রয়েছে চিনি, ৫ লিটারের সয়াবিন তেল (পুষ্টি), অস্ট্রেলিয়ার মসুরের ডাল ও ছোলা। অথচ টিসিবি পণ্যগুলোর নির্ধারিত মূল্য যথাক্রমে চিনি (বিএসএফআইসি) ৫৫ টাকা, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল (পুষ্টি) ৮৫ টাকা, মশুর ডাল (অস্ট্রেলিয়া) ৮০ টাকা ও প্রতি কেজি ছোলা (অস্ট্রেলিয়া) ৭০ টাকা।
বর্তমান বাজারে পণ্যগুলোর খুচরা মূল্য চিনি প্রতিকেজি ৭০ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৯৫-১শ টাকা, ছোলা ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। স্থানীয়দের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ব্যানার না টাঙিয়ে ডিলারদের অনেকেই এ পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি করে লুটছেন বাড়তি মুনাফা।
জানতে চাইলে মেসার্স আলী ট্রেডার্সের (কাজল ভান্ডার) স্বত্ত্বাধিকারী মোস্তাক আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিনের পণ্য প্রতিদিনই বিক্রি হয়ে যায়। এছাড়াও দোকানে অনেক পণ্য থাকে। তাই টিসিবির পণ্য বিক্রি হয়ে গেলেই ব্যানার খুলে রাখা হয়। ব্যানার টাঙানো হয় না, এমন অভিযোগ সত্য নয়।
তবে ওই এলাকার অধিবাসী মুনতাজুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ব্যানার না টাঙানোয় তারা বুঝতেই পারেন না ওই দোকানে টিসিবির পণ্য আছে। ফলে তারা বাজার দরেই পণ্য কিনে আনেন। দাম বেশি নেওয়ায় তার মতো অন্য ক্রেতারাও বিষয়টি বুঝতে পারেন না।
এজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
বিষয়টি জনতে চাইলে টিসিবির রাজশাহী আঞ্চলিক অফিস প্রধান প্রতাপ কুমার বাংলানিউজকে জানান, মেসার্স আলী ট্রেডার্সের (কাজল ভাণ্ডার) ব্যাপারে তার কাছেও অভিযোগ এসেছে। তিনি এজন্য কাজল ভাণ্ডারের স্বত্ত্বাধিকারীকে শোকজ করবেন। এরপর তার জবাব সন্তোষজনক না হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া যদি আরও কোনো ডিলারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রয়োজনে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর ডিলারশিপ বাতিল করা হবে বলেও জানান টিসিবির এ কর্মকর্তা।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতাপ কুমার বলেন, তারা বিষয়টি নিয়ে সতর্ক আছেন। কিন্তু তাদের জনবল কম। তাই সব সময় সবকিছু মনিটরিং করা সম্ভব হয় না। তবে যারা টিসিবির পণ্য তুলছেন তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সেই তালিকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বরাবর পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
এছাড়া গোয়ান্দা সংস্থাগুলোকে এ তালিকা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৭
এসএস/জিপি/এএ