আর পূর্ব নির্ধারিত চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথম বা শেষ সপ্তাহে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে আবহাওয়াজনিত কারণে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেও যেতে পারে উৎক্ষেপণের ক্ষণ।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কেপ ক্যানাভেরাল থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে।
ফ্রান্সে তৈরিকৃত স্যাটেলাইটির নির্মাণ কাজ পরিদর্শন শেষে দেশে ফিরে সোমবার (২৯ মে) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
গত ২০ থেকে ২৫ মে ফ্রান্স সফরে দেশটির থ্যালাস এলেনিয়ার ফ্যাক্টরিতে স্যাটেলাইট নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন প্রতিমন্ত্রী।
দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী জানান, স্যাটেলাইটের ফ্যাক্টরি এক্সেপটেন্স, সার্ভিস মডিউল ম্যানুফ্যাকচারিং, সার্ভিস মডিউল ডেলিভারি, কমিউনিকেশন মডিউল ডেলিভারিসহ কয়েকটি কাজ হয়ে গেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ স্যাটেলাইট নেটিংও গত সপ্তাহে হয়ে গেছে।
“এসব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া স্যাটেলাইটটির নাম হলো ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’।
আগামী ৯ নভেম্বর স্যাটেলাইটের ডেলিভারি দেওয়া হবে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, এর আগে কিছু পরীক্ষা করা হবে। মহাকাশে উৎক্ষেপণের সময় যে শব্দ হয় সে সময় কম্পন সহনীয়তা পরীক্ষা করা হবে। পরবর্তীতে ভেক্যুয়াম রুমে নিয়ে গিয়ে শব্দহীনতার পরীক্ষা করা হবে।
ইনিশিয়াল পারফরমেন্স টেস্ট, ফরমাল ভ্যাকুয়াম টেস্ট, ফাইনাল পারফরমেন্স টেস্ট, ফাইনাল প্রিপারেশন টেস্ট করার পর শিপমেন্ট হবে। সোলার রেট ও অ্যান্টেনা আলাদাভাবে তৈরি করে ফ্যাক্টরির মধ্যে রাখা হয়েছে। সেগুলো যুক্ত করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, যে টার্গেট ধরে এগিয়েছি, সময়মতো সম্পন্ন হয়ে গেছে। টেস্টের পর্যায়গুলোতে কোনো সমস্যা না হলে আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বাণিজ্যিক অপারেশনে যেতে পারবে ২০১৮ সালের জুনে।
তবে তার আগে কয়েকটি পর্যায় অতিক্রম করতে হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোম্পানি গঠনের জন্য ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কাছে চলে গেছে। এ কোম্পানি স্যাটেলাইটের কাজগুলো পরিচালনা করবে।
তিনি বলেন, জুলাই মাসে ফ্রান্সের কোম্পানি সভা করে আবহাওয়াসহ আনুষঙ্গিক বিষয় দেখে উৎক্ষেপণের জন্য সময় দেবে। আবহাওয়ার উপর সময় নির্ধারণ করা হবে জানিয়ে বলেন, ১০ মিনিট আগেও জানানো যাবে না।
“বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সম্পূর্ণ কাজ মোটামুটি সময়মতোই শেষ। শুধু পরীক্ষাটুকু বাকি। আমরা ডিসেম্বরের প্রথম বা শেষ সপ্তাহে উৎক্ষেপণ করবো। তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের কারণে কোনো সমস্যা হলে জানুয়ারিতে যেতে পারি। ’’
প্রধানমন্ত্রী ফ্লোরিডায় না গিয়ে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের আনন্দ ভাগাভাগি করতে চান বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
গাজীপুরের গ্রাউন্ড স্টেশনের প্রিলিমিনারি হ্যান্ডওভার আগস্টে হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বেতবুনিয়াতে দ্বিতীয় গ্রাউন্ড স্টেশন ব্যাকআপ হিসেবে রাখা হয়েছে। বেতবুনিয়ার স্টেশন এক’দু মাস দেরি হলেও সমস্যা নেই।
স্যাটেলাইট নিয়ে বাংলাদেশে আটজন তরুণ কাজ করছেন জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেবে থ্যালাস। যদি কোনো কারণে কোনো সমস্যা দেখা যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ফ্রি সার্ভিস দেবে থ্যালাস।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাউথ এশিয়ান স্যাটেলাইটের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পার্থক্য রয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটেই কেবল রোবট ব্যবহার হয়েছে, আর কোনোটিতে হয়নি। এ স্যাটেলাইটের প্রতিটি জিনিস ম্যানুয়ালি করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি একটি বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট এবং আলাদাভাবে স্পট থেকে তৈরি হওয়া নিজস্ব স্যাটেলাইট। বাংলাদেশকে সার্ভিস দেওয়ার জন্য আলাদাভাবে ২০টি ট্রান্সপন্ডার রাখা হয়েছে।
এ স্যাটেলাইটের মেয়াদ ১৫ বছর জানিয়ে তিনি বলেন, এরপর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২, ৩ যাবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অরবিটাল স্লট আমরা কিনে ফেলেছি। স্লট পরিবর্তনের আর কোনো সুযোগ নেই। কোন তাপমাত্রা কতটুকু তা নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে।
সাউথ এশিয়ান স্যাটেলাইটের দু’টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশের জন্য দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ই-লার্নিংয়ের জন্য ব্যবহার হবে।
উৎক্ষেপণের আগে এক সপ্তাহ আগে থেকে কাউন্টডাউন করা হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৭/আপডেট: ১৪৪০ ঘণ্টা
এমআইএইচ/জেডএস