ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ইসলামী ব্যাংকের অনুদান ফেরত দিচ্ছে

রহমান মাসুদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১০
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ইসলামী ব্যাংকের অনুদান ফেরত দিচ্ছে

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ড ইসলামী ব্যাংকের দেওয়া অনুদানের টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মফিদুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের অর্থে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর তৈরি হতে পারে না।



একই মত পোষণ করেন জাদুঘরের আরেক ট্রাস্টি আক্কু চৌধুরীও। এ ব্যাপারে তারা দু’এক দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন বলে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান।

আর ৩৫টি ব্যাংকের মতো ‘ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড’ও অনুদান হিসেবে ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’-এর স্থায়ী ভবন তৈরিতে ৫০ লাখ টাকা দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধবিরোধী ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত এ ব্যাংক থেকে এ কাজে অর্থ নেওয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত এ নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে ইসলামী ব্যাংকের চেক প্রদানের সংবাদটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি এই অনুদানের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অনুসন্ধানে নামার পর  জাদুঘরের ট্রাস্টিরা এ টাকা ফেরত দেওয়ার তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেন।

গত ১৬ আগস্ট ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু নাসের মোহাম্মদ আব্দুজ জাহের আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ৫০ লাখ টাকার অনুদানের চেক তুলে দেন। এ সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হকও উপস্থিত ছিলেন।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট আশিক আহমেদ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্থায়ী ভবন তৈরিতে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলেন। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়েই গত ১৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর হাতে ৫০ লাখ টাকার চেক তুলে দেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চেয়ারম্যান। ’

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্থায়ী ভবন তৈরির জন্য মোট ২৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার চেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হিসেবে ইসলামী ব্যাংকও এ তালিকায় ঢুকে পড়েছে। তবে কোনো মতেই তাদের টাকা নেওয়া হবে না। ’

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের আরেক সদস্য আক্কু চৌধুরী বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘রাজাকারের টাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর তৈরি হতে পারে না। আমরা দুই এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান লিখিত আকারে প্রকাশ করব।

ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বেশিরভাগ সদস্যই জামায়াতে ইসলামীর প্রভাবশালী জ্যেষ্ঠ সদস্য। তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ব্যাংকটির বিরুদ্ধে যুদ্ধপরাধীদের সহায়তা করা, জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডে মদদ দেওয়ার অভিযোগের তদন্ত চলছে। এছাড়া এ ব্যাংকের অধিকাংশ কর্মীই জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এরা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ইসলামী ব্যাংক থেকে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে থাকেন।

সম্প্রতি দেশে যুদ্ধপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় নানাভাবে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করছে জামায়াতে ইসলামী। মিডিয়ায় তাদের বিজ্ঞাপন প্রচারও আগের চাইতে বাড়িয়ে দিয়েছে।

এছাড়া, দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা সর্বাধিক হলেও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর তৈরি প্রকল্পে তাদের অনুদান সে তুলনায় খুবই সামান্য। কয়েকটি ছোট ব্যাংক এ তহবিলে অনুদান হিসেবে এক কোটির টাকারও বেশি দিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, ১৯ আগস্ট ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ