ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

তেল চুরি করে কোটিপতি ডিসিসির অর্ধশতাধিক ড্রাইভার

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১০
তেল চুরি করে কোটিপতি ডিসিসির অর্ধশতাধিক ড্রাইভার

ঢাকা: গাড়ির তেল চুরি করে কোটিপতি বনেছেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) অর্ধশতাধিক ড্রাইভার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তেল চুরির সঙ্গে জড়িত ড্রাইভারদের প্রত্যেকেরই একাধিক বাড়ি বা ফ্ল্যাট আছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়।

ব্যক্তিগত ও পরিবারের ব্যবহারের জন্য আছে নানা মডেলের গাড়ি। একাধিক ব্যবসা আর নতুন বাড়ি তৈরির জমিও আছে কারও কারও।

এদিকে তেল চুরির কারণে ডিসিসিকে প্রতি মাসে ৬০ লাখেরও বেশি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে করপোরেশন সূত্র।

সূত্রমতে, ডিসিসিতে ড্রাইভার সংখ্যা প্রায় ৪শ’। এদের অন্তত ১শ’ জন ক্লিনার কাম ড্রাইভার। তারা বেতন পান ক্লিনার হিসেবে। তবে ভুয়া ভাউচারে তেল তুলে অন্যত্র বিক্রি করে বা তেল না তুলেই ডিসিসি থেকে টাকা উঠিয়ে প্রকৃত ড্রাইভারের পাশাপাশি উপরি আয়ের সুযোগ নিচ্ছেন তারাও।

তারা যাত্রাবাড়ির ও গাবতলির দুটি পাম্প থেকে তেল বা তেলের স্লিপ সংগ্রহ করেন বলেও জানা গেছে।

এদিকে সিনিয়র ড্রাইভার ও ড্রাইভার অ্যাসোসিয়েশন নেতারা কাজ না করেও প্রতি মাসে বেতনের সঙ্গে তেলচুরির ভাগ হিসেবে এক থেকে দেড় লাখ টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে। আর কিনার কাম ড্রাইভারররা বেতন ছাড়াই মাসে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করছেন। তাদের সঙ্গে পরিবহন বিভাগের প্রকৌশলীদের যোগসাজস রয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্রমতে, ডিসিসিতে কাগজে-কলমে ৫৬১টি গাড়ি রয়েছে। এসবের মধ্যে ট্রাক ৪০৩টি, হাইড্রলিক লোডার ৫৭টি, পিকআপ ২৪টি, জিপ ৩৮টি, মাইক্রোবাস ১২টি, স্টাফবাস ২টি, পানির গাড়ি ৪টি, অ্যাম্বুলেন্স ৫টি, মোটরসাইকেল ২১৭টি ও ট্রাকলট ১টি।

কিন্তু জিপ, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, পিকআপ ও পানির গাড়িসহ এ পর্যন্ত মাত্র ৬২টি গাড়ি সিএনজিতে রূপান্তর করা হয়েছে। তেল চুরি চক্রের বিরোধীতায় বাকি গাড়িগুলোকে আর সিএনজিতে রূপান্তরিত করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

ডিসিসির এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, ড্রাইভারদের দাপটে তাদের তেল চুরির কথা কেউই বলতে সাহস পায় না। কেউ কিছু বললেই অফিস ঘেরাও, ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচি শুরু হয়ে যায়।

জানা গেছে, তেল চুরির মূল হোতা হিসেব পরিচিত ডিসিসি ড্রাইভার অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি মো: আক্তার দেওয়ান ধলপুরের আউটফল স্টাফ কোয়ার্টারে থাকলেও ধানমন্ডিতে ফ্লাট, উত্তরায় জমি ও বাড়ি আছে তার। এক ছেলে পড়াশুনা করছে অস্ট্রেলিয়ায়। হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা আছে তার নামে।

এছাড়া আখতার দেওয়ানের বিভিন্ন মডেলের ৮টি গাড়ি ভাড়ায় চলছে বলে জানা গেছে। সিটি করপোরেশনের মার্কেটগুলোতে একাধিক দোকান রয়েছে তার।

সিনিয়র ড্রাইভার ও সংগঠনের সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবির, সাধারণ সম্পাদক ময়েজ উদ্দিন ময়েজ ও পরিবহনের ম্যানেজার মিল্লাতুল ইসলামসহ অর্ধশতাধিক ড্রাইভারের ঢাকায় বাড়ি, বিভিন্ন মার্কেটে দোকান ও বাড়ি করার জমি রয়েছে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডির সঙ্গে আলাপকালে ঢাকায় ফ্ল্যাট থাকার কথা স্বীকার করেন আক্তার দেওয়ান। এছাড়া স্বীকার করেন ছেলের অস্ট্রেলিয়ায় পড়ার কথাও। তবে তেল চুরির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘কারা তেল চুরি করছে তা বলতে পারি না। এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।