ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিন্ন আইন তিন বছর ধরে হিমাগারে

উবায়দুল্লাহ বাদল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১০
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিন্ন আইন তিন বছর ধরে হিমাগারে

ঢাকা: তিন বছর ধরে হিমাগারে রয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য প্রণীত অভিন্ন আইনের খসড়া। তিন বছর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও এর কোনো অগ্রগতি নেই।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অভিন্ন আইন নিয়ে এ মুহূর্তে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই বলেও জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

তিনি বলেন, সরকার এ নিয়ে এখন আর ভাবছে না। তবে শিক্ষাবিদরা বলছেন, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আইনের অধীনে আনা জরুরি। সরকারের উচিত এ ধরনের আইন প্রণয়ন করা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উদ্যোগে পাবলিক বিশবিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি অভিন্ন আইন প্রণয়ন করা উচিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের করা আইনটি গ্রহণ না করলেও তাদের উদ্যোগকে গ্রহণ করে সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি আইন প্রণয়ন করলে সরকারের জন্য ভালো হবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য ও শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। ’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় করা একটি খসড়া এখনো মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে। এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একটি আইনের আওতায় আনতে এটি করা হয়েছিল। কিন্তু ওই সময় কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের অনীহার কারণে তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বয় আনতে সরকার চাইলে এ ধরনের আইন করতে পারে। ’

এ ধরনের আইন খুবই প্রয়োজন উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও অভিন্ন খসড়া আইন প্রণয়ন কমিটির সাবেক সদস্য ড. তারেক শামসুর রেহমান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘শিক্ষক ও ছাত্ররাজনীতি সীমিত করার বিধান রেখে ইউনিফর্ম অর্ডিন্যান্স ফর পাবলিক ইউনিভার্সিটিজ অব বাংলাদেশ, ২০০৭ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে ২০০৭ সালের ১৫ জুলাই মন্ত্রণালয়ে সর্বশেষ বৈঠক হয়। ’

খসড়ায় যা আছে
খসড়া আইনে ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের বিদ্যমান ও প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের ইতিবাচক দিকগুলোর তুলনামূলক আলোচনা করা হয়েছে। মোট ১৮টি ভাগে ৫০টির মতো পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে। শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতির অধিকার রাখা হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শীর্ষপদ পূরণে একজন সাবেক উপাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিতে ইউজিসি চেয়ারম্যান, একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বা সাবেক উপাচার্য এবং দু’জন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে সদস্য করে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ কমিটি তিনজনের একটি প্যানেল চ্যান্সেলরের (আচার্য) কাছে প্রস্তাব করবে নিয়োগের জন্য। একই প্রক্রিয়া উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) এবং কোষাধ্য নিয়োগের ক্ষেত্রেও অনুসরণ করা হবে।

খসড়ায় ১৭ সদস্যের পরিবর্তে ১৬ সদস্যের সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়েছে। ভিসি, প্রো-ভিসির পাশাপাশি প্রস্তাবিত আইনে কোষাধ্যকেও সিন্ডিকেট সদস্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। শিক্ষক প্রতিনিধি সংখ্যা ছয়জনের পরিবর্তে সাতজন এবং নির্বাচনের পরিবর্তে বিভিন্ন কোটায় মনোনীত হয়ে আসার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিনেটের গঠন কাঠামোতেও পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে খসড়ায়। ১০৪ সদস্যের এ সিনেটে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মধ্যে শিক্ষক প্রতিনিধি ৩৫ এবং রেজিস্ট্রার গ্র্যাজুয়েট থাকবেন ২৫ জন। প্রস্তাবিত আইনে নির্বাচনকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

ওই কাঠামোতে ভিসি, প্রো-ভিসি এবং কোষাধ্যক্ষ ছাড়াও রয়েছেন তিনজন সরকারি কর্মকর্তা, ইউজিসির চেয়ারম্যান বা তার ১জন মনোনীত  প্রতিনিধি, দু’জন সাংসদ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভিসি, তিনজন শিক্ষাবিদ, গবেষণা সংস্থার একজন প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইনস্টিটিউটের একজন পরিচালক, অধিভুক্ত কলেজগুলোর একজন অধ্যক্ষ প্রতিনিধি, সব ডিন, প্রত্যেক অনুষদ থেকে দুজন করে জ্যেষ্ঠ ও একজন করে সহযোগী অধ্যাপক, একজন আইনজীবী, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের তিনজন সদস্য। তবে এতে কোনো ছাত্র প্রতিনিধি রাখা হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।