ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ওএমএস-এ অনিয়মের মচ্ছব!

মসিউর আহমেদ মাসুম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১০
ওএমএস-এ অনিয়মের মচ্ছব!

ঢাকা: ওএমএস’র চাল বিক্রিতে ব্যাপক অনিয়ম পাওয়া গেছে। ডিলার ও সরকার-নিযুক্ত খাদ্য পরিদর্শকদের যোগসাজসে এক শ্রেণীর দালাল নানা কৌশলে নামে-বেনামে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে চাল।

পরে তা বিক্রি করা হচ্ছে বাদামতলীসহ রাজধানীর বিভিন্ন আড়তে। বাদামতলীর আড়তে গিয়ে এর চাক্ষুষ প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমাদের ফটো সাংবাদিক জীবন আমীর সেখানে গিয়ে ওএমএস’র চালের বস্তার ছবিও তুলে এনেছেন।

গ্রিনরোড, বাংলামোটর ,পলাশিবাজার,আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ এলাকায় ওএমএস’ ডিলারের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে প্রকাশ্যেই তারা ইচ্ছেমতো নাম লিখে ও তার নিচে নিজেদের আঙ্গুলের টিপ বসিয়ে চাল আত্মসাৎ করছেন।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি’র অনুসন্ধানে রাজধানীর বহু স্থানে এরকম সব দৃশ্য ধরা পড়েছে। ক্যামেরাবন্দি করা হয়েছে ভূয়া টিপসই দেওয়ার ও বাদামতলীর আড়তে ওএমএস-এর চাল বিক্রির দৃশ্য।  

রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় ট্রাকে করে ওএমএস-এর চাল বিক্রির সময় সে দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি।

এছাড়াও গ্রিন রোড, আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ, পলাশি বাজার এলাকায় দেখা গেছে অভিন্ন চিত্র।

বাদামতলীর চালের বিভিন্ন আড়ত থেকে তুলে আনা হয়েছে ওএমএস-এর চাল বিক্রির দৃশ্য।  

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা গেছে ওএমএস-এর চাল কেনার ভিড় নেই,অথচ তালিকায় একের পর এক নাম লিখে আঙ্গুলের টিপ দিয়ে চাল সরিয়ে ফেলছেন বিক্রেতারা।

ওএমএস কার্যক্রমের অনিয়মের ব্যাপারে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘অনিয়ম দূর করতে আমরা মনিটরিং জোরদার করার চেষ্টা করছি। ’

ওএমএস চালের চাহিদা কম হওয়ায় ডিলাররা এ সুযোগ নিচ্ছেন বলে দাবি করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে আপনাদের জানানো হবে। ’

খাদ্যমন্ত্রী মনিটরিং এর কথা বললেও রাজধানীর অনেক এলাকা ঘুরেও তার কোনো নমুনা চোখে পড়েনি। ওএমএস কার্যক্রমে প্রকাশ্য অনিয়মের অনেক ঘটনাই এই প্রতিবেদকের নজরে এসেছে। যে কয়টি স্পট ঘুরে দেখা হয়েছে তার প্রত্যেকটিতেই দেখা গেছে অনিয়ম।
 
ট্রাকের কাছে সরকারের কোনো প্রতিনিধি না থাকলেও ট্রাক ঘিরে আছে এক শ্রেণীর দালাল। পরিচয় গোপন করে ট্রাকের লোকজনের কাছ থেকে  ওএমএস’র চাল বিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে পাশ থেকে এসে দালালরা আগ বাড়িয়ে তর্ক জুড়ে দিচ্ছেন।

সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দালালদের কাছে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা দাবি করেন, সরকার বা ডিলার কারোর লোক নন।
 
তাহলে ওএমএস’র চালের ট্রাক ঘিরে রেখেছেন কেন?’--  এ প্রশ্ন করতেই দ্রুত সটকে পড়েন সবাই।

গ্রিন রোডে স্পটে দেখা গেছে এক লোক বস্তা ভরে চাল নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি নিজেকে বেসরকারি সংস্থা আর.এস কর্পোরেশনের কর্মচারি নূর আলম বলে পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সংস্থা বিভিন্ন ব্যাংককে লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়। এখানে আমরা ৪০ জন কাজ করি। ২০/২ নর্থ ধানমন্ডিতে স্যারের (আর এস কর্পোরেশনের ম্যানেজিং পার্টনার সোহেল রহমান) বাসায় থাকি। ওএমএস চালু হওয়ার পর থেকে স্যার এখান থেকে চাল নিয়েই আমাদের খাওয়ান। ’

এসময় উপ-খাদ্য পরিদর্শক লিটন কুমার রায় ওই ব্যক্তিকে ধমকে ওঠেন এবং  কথা বলতে বাধা দেন।

‘নূর আলম নামের এই লোককে কেন বস্তা ভরে চাল দেওয়া হচ্ছে’ --এ প্রশ্নের জবাবে লিটন কুমার রায় বলেন, ‘আমি চা খেতে গিয়েছিলাম আর সেই সুযোগে অন্যরা এ চাল দিয়ে দিয়েছে। ’

পলাশী বাজারে গিয়ে দেখা গেল ট্রাকের সামনে চাল নেওয়ার কেউ নেই । তাতে কী! তালিকায়  বিক্রেতা একের পর এক নাম লিখে যাচ্ছেন একমনে ।

খাদ্য পরিদর্শক জয়কৃষ্ণ গুপ্ত বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘আমি একা ছাপড়া মসজিদ ও পলাশী বাজারে দায়িত্ব পালন করছি।   আমার চোখের আড়ালে কিছু অনিয়ম হয়ে থাকতে পারে। ’

আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খাদ্য অধিদপ্তরের সরবরাহ করা নামের তালিকার বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে সাধারণ কাগজে লেখা ডিলারের মনপসন্দ তালিকা।

জানতে চাইলে নিজেকে ডিলারের লোক বলে পরিচয় দিয়ে রাজীব নামের একজন বলেন, ‘ডিজি স্যার দেখে গেছেন কিছু বলেননি। মাস্টার রোলে তালিকা রাখা বাধ্যতামূলক না। ’

বাংলামোটরে গিয়ে দেখা গেলো হুমায়ুন কবির নামের এক ব্যক্তি নিজেই তালিকায় ইচ্ছেমতো নাম লিখে আঙ্গুলের টিপ দিয়ে যাচ্ছেন। একটু পরপর হাতের দুই আঙ্গুলে কালি লাগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।    

এ বিষয়ে উপ-খাদ্য পরিদর্শক আবদুর রহিম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, যারা চাল নিয়ে গেছে তাদেরই নাম লিখে ও টিপসই দিচ্ছেন তিনি।

‘চাল নেওয়ার সময় টিপসই না নিয়ে এখন তাদের হয়ে নিজেরাই টিপসই দিচ্ছিনকেন? --এ প্রশ্ন করতেই নিরুত্তর থাকেন তিনি।

এদিকে বাদামতলীর বিভিন্ন চালের আড়তে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে ওএমএস-এর সিল দেওয়া চালের বস্তা থেকে চাল বিক্রি চলছে প্রকাশ্যে।

বাংলাদেশ সময় ১৭৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।