ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বাংলা ভাইয়ের নির্দেশে সাংবাদিক দীপঙ্করকে হত্যা

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০১৭
বাংলা ভাইয়ের নির্দেশে সাংবাদিক দীপঙ্করকে হত্যা সাংবদিক দীপঙ্কর হত্যায় সংশ্লিষ্ট জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী

বগুড়া: প্রায় ১৩ বছরের মাথায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক দুর্জয় বাংলার নির্বাহী সম্পাদক দীপঙ্কর চক্রবর্তী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। 

জেএমবি সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ ও বিভিন্ন মিটিংয়ে জেএমবির কার্যক্রম সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করায় শুরা সদস্য সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইয়ের নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়।  

চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে হলি আর্টিজান হামলার অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী জেএমবি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ওরফে নাছির ওরফে রাজীব গান্ধী ওরফে সুভাস ওরফে শান্ত ওরফে জাহিদ ওরফে জাকির ওরফে আদিল ওরফে টাইগার ওরফে আবু ওমর আল বাঙ্গাল পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

মঙ্গলবার (০৭ মার্চ) দুপুরে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপারের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান বিপিএম চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পুরো চিত্র তুলে ধরেন।  

তিনি বলেন, সম্প্রতি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার জোয়ানপুর কুটিরভিটায় জেএমবির আস্তানায় বোমা বিস্ফোরণ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেএমবি সদস্য জাহাঙ্গীর আলমকে রিমাণ্ডে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে সাংবাদিক দীপঙ্কর চক্রবর্তী হত্যাকাণ্ডের পুরো বর্ণনা দেয়।  

পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বিপিএম বলেন, জাহাঙ্গীর আলম ২০০১ সালে জেএমবিতে যোগ দেয়। ২০০৪ সালের মাঝামাঝি সময় সরোয়ার জাহান ওরফে মানিক তাকে হিজরত করতে বলে। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাহাঙ্গীর গাইবান্ধার সাঘাটা থেকে সিরাজগঞ্জের ডা. নজরুলের কাছে যায়। পরে একটি মেসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শাহাদত, মানিকসহ ৫-৬ জন আগে থেকেই অবস্থান করছিল। প্রায় দুই মাস সেখানে অবস্থান করে জাহাঙ্গীর।  

পরে তাদের পরামর্শে চলে আসে বগুড়ায়। শহরের জহুরুল নগর এলাকায় ভাইবোন নামে একটি মেসে ওঠে। নুরুল্লাহ, সানাউল্লাহ, রাহাত, সিহাব, ওসমানসহ ১০-১২ জনকে সেখানে সঙ্গী হিসেবে পায়।  

ওই মেসেই হয় সাংবাদিক দীপঙ্কর হত্যার পরিকল্পনা। হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা আঁকে শায়খ আব্দুল আওয়াল। বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, নুরুল্লাহ, সানাউল্লাহ ও মানিককে। এদের মধ্যে তিনজন সাংবাদিক দীপঙ্করের গতিবিধি রেকি করে।  

তিনি আরো জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী মানিক মোটরসাইকেল চালায়। এ হত্যাকাণ্ডে ১০০ সিসি হিরো স্পেলন্ডার মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়। নুরুল্লাহ ও সানাউল্লাহ চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। জাহাঙ্গীর আলম ঘটনাস্থলের পাশে দাঁড়িয়ে লোকজনের গতিবিধি লক্ষ্য করে।  

পরে তারা মেসে ফিরে এসে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি শায়খ আব্দুল আওয়ালকে জানায়। এই কাজের পুরস্কার হিসেবে জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধীকে জেলার দুপচাঁচিয়া ও শিবগঞ্জ থানার দায়িত্ব দেওয়া হয়।  

সংবাদ সম্মেলনে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল, আব্দুল জলিলসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  

২০০৪ সালের ২ অক্টোবর (রোববার) রাতে পেশাগত দায়িত্বপালন শেষে সাংবাদিক দীপঙ্কর চক্রবর্তী বগুড়ার কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে শেরপুর পৌরশহরের স্যানালপাড়াস্থ নিজ বাসার সামনে নির্মমভাবে খুন হন। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বগুড়াসহ দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।  

ঘটনার পরদিন নিহতের ছেলে পার্থ সারথী অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে শেরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ০৩)। মামলা তদন্ত করে শেরপুর থানা পুলিশ। পরে সিআইডিকে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়। ২০০৭ সালে ২৬ নভেম্বর সিআইডি আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

পরে বাদী নারাজি আবেদন করলে আদালত পুনরায় মামলাটি তদন্তের আদেশ দেন। তদন্তের ভার দেওয়া হয় শেরপুর থানা পুলিশের ওপর। ২০১২ সালের ১১ জুলাই শেরপুর থানা পুলিশ আদালতে পুনরায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।  

বাদী আবারো নারাজি আবেদন করলে আদালত সিআইডির একজন সহকারী পুলিশ সুপারকে দিয়ে মামলাটি তদন্ত করার আদেশ দেন। ২০১৩ সালের ১৩ জুলাই সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুস সামাদ মিঞাও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন আদালতে।  

এবারও বাদী আদালতে নারাজি আবেদন করেন। আদালত ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওপর মামলার তদন্ত ভার দেয়। সবশেষ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মজিবর রহমান মামলাটি তদন্ত করছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৭
এমবিএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।