ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চাঁদপুরের ৪০ গ্রামে আজ ঈদ

জি এম শাহীন, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১১ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১১

চাঁদপুর: চাঁদপুরের ৪০টি গ্রামে মঙ্গলবার আগাম ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। দীর্ঘ ৮৩ বছরেও চাঁদপুরে আগাম ঈদ উদযাপন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার অবসান হয় নি।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা দরবার শরীফের প্রায় লক্ষাধিক অনুসারী এবারও আরব দেশসমূহের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একদিন আগে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন।

গত ৮৩ বছর ধরে আরব দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সাদ্রাসহ ৪০টি গ্রামে ঈদ উদযাপিত হয়ে আসছে। হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা গ্রামে ১৯২৮ সাল থেকে একদিন আগে ঈদ উদযাপন প্রথা চালু করলেও এখন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ একদিন আগে ঈদ উদযাপন করছেন।

১৯২৮ সালে হাজীগঞ্জ উপজেলার রামচন্দ্রপুর মাদ্রাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইছহাক খান আরব দেশগুলোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঈদ উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু গ্রামবাসী অসহযোগিতা করলে  সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

দেশে সরকারি নিয়মের বাইরে একদিন আগে ঈদ পালনের উদ্যোগ গ্রহণের দায়ে মাওলানা খানকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি  দেওয়া হয়। ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান মাওলানা খান ওই বছরই চলে আসেন নিজ গ্রাম একই উপজেলার সাদ্রায়।

আরব দেশের রীতি অনুযায়ী, ধর্ম-কর্ম পালনের জন্য প্রথমে নিজ গ্রামে ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেন। গ্রামের অসহায়, দুস্থ মুসলমানদের প্রচুর আর্থিক সাহায্য দিয়ে আরব দেশগুলোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একদিন আগে ঈদসহ সকল ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপন প্রথা চালু করেন।

মাওলানা খানের মতে, হানাফি, মালেকি ও হাম্বলী মাজহাবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদসহ সর্ব ধরনের ধর্মীয় কার্যক্রম বিশ্বের সব দেশে একসাথে পালিত হবে।

বাংলাদেশ পবিত্র কাবাঘর থেকে ৫০.১২ দ্রাঘিমাংশ পূর্বে অবস্থিত। মক্কার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সময়ের ব্যবধান ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড। সময়ের ব্যবধান এত অল্প হলে একসঙ্গে রোজা রাখা ঈদ উদযাপন করতে বাধা থাকার কথা নয় বলে তাদের দাবি।

মাওলানা ইছহাক খান ১৯৮৫ সালের ১৩ নভেম্বর ইন্তেকাল করলে তার কবরকে ঘিরে মাজার গড়ে ওঠে। ইছহাক খানের ৬ ছেলে, ১ মেয়ে, মাও. আবু জাফর হাই, আলহাজ্ব মাও. আবু বকর, মো. ইসমাঈল, মাও. আবুল খায়ের, মাও. মো. শেখ ইলিয়াস, আলহাজ্ব মাও. আবু ইয়াহিয়া, মো. জাকারিয়া আলমাদানী, হাফেজ মাও. আহাম্মদ হোসাইন, মাও. শাহ মো. হাসান ও ওয়াহরেহা ফাতেমাতুজ জোহরা। ৬ সন্তানই বাবার মতবাদ প্রচারে সদা নিবেদিত।

সেই সঙ্গে ওই মতবাদ প্রচারে কাজ করছেন মাও. খানের অসংখ্য মুরিদ। সাদ্রা ছাড়াও জেলার ৪০টি গ্রামের একাংশে ওই পীরের অনুসারীরা একদিন আগে ঈদ উদযাপন করেন।

গ্রামগুলো হচ্ছে- হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল, শ্রীপুর, মনিহার, বরকুল, অলীপুর, বেলচোঁ, রাজারগাঁও, জাকনি, কালচোঁ, মেনাপুর, ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাচনমেঘ, খিলা, উভারামপুর, পাইকপাডা, বিঘা, উটতলী, বালিথুবা, শোলা, রূপসা, গোয়ালভাওর, কড়ইতলী, নয়ারহাট, মতলবের মহনপুর, এখলাসপুর, দশানী, নাযরেগাঁও,  বেলতলীসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ছাড়াও চাঁদপুরের পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও শরীয়তপুর জেলার কয়েকটি স্থানে মাও. ইছহাক খানের অনুসারীরা একদিন আগে ঈদ উদযাপন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ