ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শিক্ষক-অভিভাবক-ছাত্রনেতাদের কঠোর সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১০
শিক্ষক-অভিভাবক-ছাত্রনেতাদের কঠোর সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা: শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রনেতাদের মানসিকতার কঠোর সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকতা ছিল একটি আদর্শ পেশা।

এখন এ আদর্শ পেশা থেকে আস্তে আস্তে আদর্শ ও নীতিবোধ উধাও হয়ে যাচ্ছে’। তিনি অভিভাবকদের মানসিকতারও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিযোগিতা এখন শিক্ষার্থীদের মধ্যে নয়, প্রতিযোগিতা চলে অভিভাবকদের মধ্যে। ’ ছাত্রনেতাদের ভর্তি বাণিজ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভর্তি বাণিজ্য চলতে দেওয়া যায় না’।

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ‘জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি’র (নায়েম) ১ম স্টাফ কোর্স ও প্রশাসনিক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

শিক্ষা নিয়ে এক শ্রেণীর শিক্ষকের ‘শিক্ষা বাণিজ্যে’র তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জীবন চলতে অর্থের প্রয়োজন আছে, কিন্তু অর্থই সব নয় এটাও মনে রাখতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষা দেওয়ার চেয়ে বাণিজ্যই শিক্ষকদের কাছে প্রধান হয়ে উঠেছে। ’

তিনি বলেন, ‘প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়া কিংবা কোচিং সেন্টারে যাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। নির্দিষ্ট শিক্ষকের কাছে না পড়লে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের পাসও করানো হয় না। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের অনিয়মের মানসিকতা বদলাতে হবে। ’

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরার বাণিজ্য মানসিকতার উর্ধ্বে নন বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও একটি বড় অংশ কনসালটেন্সি বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর পেছনে সময় ব্যয় করেন। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দিনের পর দিন নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাস নেন না। এতে করে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। ’

অভিভাবকদের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্তানের পড়ালেখার গুণগত মানের চেয়ে অন্য শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করাই এখন অনেক অভিভাবকের প্রধান লক্ষ্য’।

তিনি বলেন, ‘স্কুলের সামনে বসে থেকে অন্য অভিভাবকের কথা শুনে বাসায় ফিরে নিজ সন্তানের ওপর অত্যাচার করেন অনেক অভিভাবক। ’

অনেক অভিভাবক আর্থিক সচ্ছলতার প্রভাব সন্তানের ওপর পড়তে সাহায্য করেন বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘শিশু শিক্ষার্থীরাও এখন কাসে গিয়ে অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে গর্ব করে বলে আজ সে কোন মডেলের গাড়িতে  চড়ে স্কুলে এসেছে। ’

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করে বলেন, ‘শিশুদের এ ধরনের মানসিকতা হবে কেন’। তিনি এজন্য অভিভাবকদেরই দায়ী করেন।

তিনি বলেন, ‘’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোর দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে সমাজে দুরারোগ্য ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে’।

এ ধরনের মানসিকতা পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নিজ জীবনের একটি গল্প বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন আমার বাবা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) আমেরিকা থেকে একটি ঘড়ি কিনে আনেন। সেই ঘড়ি পড়ে আমি স্কুলে গেলে শিক্ষক আমাকে ডেকে বলেন, এটি আর যেন স্কুলে পড়ে না আসি। কারণ হিসেবে ওই শিক্ষক আমাকে বুঝিয়ে দেন, এটি পড়লে আমার অন্য সহপাঠীরা মন খারাপ করবে কারণ তাদের বাবারা এ ধরনের ঘড়ি কিনে দিতে পারেনি। আমি এরপর কোনোদিন আর ওই ঘড়ি পড়ে স্কুলে যাইনি। ’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের এ ধরনের মানসিকতা ও শিক্ষা দেওয়ার কথাতো আর শোনা যায় না। ’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রনেতাদের ভর্তি-বাণিজ্যের তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্রনেতারা ভর্তি ফরম বেচে টাকা নেয় এবং ঘুষের বিনিময়ে ভর্তি করায় বলে শোনা যায়। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের ভর্তিবাণিজ্য যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় এ ধরনের বাণিজ্য চলতে দেওয়া যায় না। ’

প্রধানমন্ত্রী অবশ্য এ কাজে জড়িত কোনো ছাত্র সংগঠনের নাম উল্লেখ করেননি।

তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও ছাত্রজীবনে কলেজের ভিপি হয়েছিলাম, কিন্তু ফরম বেচে এবং ভর্তি করিয়ে টাকা নেব এটাতো ভাবতেই পারিনি। ’

প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সময় দর্শক সারিতে উপস্থিত ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখা যায়।

প্রধানমন্ত্রী ৪৫ মিনিট দেওয়া বক্তব্যে আরো বলেন, ‘বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় ১ হাজার ৫০০টি নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের কাজ চলছে’।

উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পাসের হার বেশি হলে মিডিয়ায় বলা হয় এতো শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে না। কিন্তু এটাতো হতে পারে না। আমি চাই, পাসের হার হলেও শতভাগ যেন সবাই পরবর্তী শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারে। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এজন্য দেশের সবগুলো বৃহত্তর জেলাতেই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর’।

নতুন শিক্ষানীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজ্ঞান ও কর্মমূখী শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাকেও নতুন শিক্ষানীতিতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। ’

দেশে সাক্ষরতার হার শতভাগে উন্নীত করার জন্য তিনি শিক্ষাখাতে জড়িত সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।       

অনুষ্ঠানে বক্তব্যের আগে নায়েমের ১৫ তলা ভিত্তির প্রশাসনিক ভবনের ৭ম তলা পর্যন্ত নির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কাজে ব্যয় হয়েছে ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী সরকারি ও বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এবং সিনিয়র শিক্ষকদের জন্য ‘১ম স্টাফ কোর্স’ উদ্বোধন করেন। এ কোর্স শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষান মানোন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনাকে আরো উন্নত করবে বলে আশা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণ ছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থাপনার কোনো উন্নতি হয় না। ’

নায়েমের মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শিক্ষাসচিব সৈয়দ আতাউর রহমান। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন।     

বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, ১৭ আগস্ট ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad
welcome-ad