ঢাকা: পুরান ঢাকার নিমতলীতে স্মরণকালের ভয়াবহতম অগ্নিকান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে আবাসিক এলাকা থেকে দাহ্য কেমিক্যাল (রাসায়নিক) কারখানা ও গুদামের মজুদ অপসারণের জন্য সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা ১৭ আগস্ট মঙ্গলবার শেষ হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি‘র পক্ষ থেকে অপসারনের কাজ শুরু হয়েছে বলে দাবি করা হলেও সোমবার পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ কারখানা ও গুদাম সেখান থেকে সরানো হয় নি।
এদিকে সরকারের এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের সব গুদাম ও কারখানা কারখানা সরিয়ে নিতে হবে না। বিস্ফোরক অধিদপ্তর নির্দিষ্ট করে বলে দিয়েছে ২০ ধরণের দাহ্য রাসায়নিকের কারখানা বা গুদাম সরিয়ে নিতে হবে। গত সপ্তাহে বিস্ফোরক অধিদপ্তর থেকে ব্যবসায়ীদের এ তালিকা দেওয়া হয় ।
এ বিষয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে মঙ্গলবার শিল্প মন্ত্রানালয়ে শিল্পমন্ত্রী দিলিপ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ ও শিল্প মন্ত্রানালয় যৌথ বৈঠকে বসবে। শিল্প মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারসহ পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
তবে, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) পুরান ঢাকার কেমিক্যাল ব্যবসা স্থানান্তরের সময়সীমা এক মাস বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।
পুরান ঢাকার নীমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর সরকার পুরান ঢাকায় অবস্থিত সকল কেমিকেল ব্যবসায়ীদের তাঁদের রাসায়নিক দ্রব্যের মজুদ অন্যত্র নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের জন্য ১৭ আগস্ট পর্যন্ত সময় সীমা বেঁধে দেয়।
পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে এই সময়সীমা বৃদ্ধি ও ‘একটি স্পেশাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন‘ প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
ডিসিসিআই এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, পুরান ঢাকার কেমিক্যাল ব্যবসা অতি স্বল্পসময়ে স্থানান্তর করা বাস্তবসম্মত নয়। সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে এ ব্যবসাকে স্থানান্তরিত করা প্রয়োজন। বিশেষ করে রমজান মাস উপলক্ষ্যে ডিসিসিআই এই কেমিক্যাল ব্যবসা স্থানান্তরের সময়সীমা আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি শাহেদুল ইসলাম বাংলানিউজটোয়িন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন-গত সপ্তাহে বিস্ফোরক অধিদপ্তর থেকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া ২০ ধরণের দাহ্য রাসায়নিক (কেমিক্যাল) সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে দু-এক দিনে এগুলো সরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়, কিছুটা সময় লাগবে।
এছাড়া তিনি এসব এলাকার দোকানগুলোর আগুনের নিরাপত্তা বিষয়ে ফায়ার লাইসেন্সিং এর কাজও শুরু হয়েছে বলে জানান।
যোগাযোগ করা হলে শিল্পমন্ত্রী দিলিপ বড়–য়া বাংলানিউজটোয়িন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন ‘আগামীকালের যৌথ বৈঠকে ঐ এলাকার কেমিক্যাল কতটা সরানো হয়েছে - তা সহ পুরো বিষয় পর্যালোচনা করা হবে। ’
তবে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের বেঁধে দেয়া ২০ ধরনের কেমিকেল সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সরকার কোনো আপস করবে না বলে জানান শিল্পমন্ত্রী ।
‘সময়সীমা শেষের দিনে যৌথ বৈঠক ডাকা আসলে সময়সীমা বাড়ানোরই ইঙ্গিত বহন করে কিনা’ - এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন আলোচনার পরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ প্রতিবেদক সোমবার পুরান ঢাকার আগাসাদেক রোড, আগামাছিহ লেন, কাজী আলাউদ্দিন রোডসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানান ব্যবসায়ীরা কারখানা বা গুদাম সরিয়ে নেয়ার কোন কার্যক্রমের খবর পাননি। বরং অধিকাংশ দোকনাদার ও দোকান মালিক এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার দাহ্য কেমিক্যাল সরিয়ে নেওয়ার সময়সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে - এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাজী আলাউদ্দিন রোডের রেকসিন জোনের শফিকুল ইসলাম জানান এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। একই অবস্থা দেখা গেছে ঐ এলাকার অধিকাংশ দোকানদারদের মধ্যে।
এর আগে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে দাহ্য ও বিপজ্জনক রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানার বিরুদ্ধে পরিচালিত টাস্কফোর্সের অভিযান জুন মাসের ১৭ তারিখে ২ মাসের জন্য স্থগিত করে সরকার। পরে ১৭ আগস্টের মধ্যে এসব গুদাম ও কারখানা অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এরপর গত ২৯ জুলাই ব্যবাসায়ীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় কেমিক্যাল কারখানা অপসারনের সময়সীমা কোনো অবস্থাতেই আর বাড়ানো হবে না বলে জানিয়ে দেন শিল্প মন্ত্রী দিলিপ বড়ুয়া।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, ১৭ আগস্ট, ২০১০।