ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

প্রাণ পেলেও জীবনের লড়াইয়ে ক্লান্ত মাহবুবা

জাহিদুর রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১১
প্রাণ পেলেও জীবনের লড়াইয়ে ক্লান্ত মাহবুবা

ঢাকা: ‘অনেকে ভেবেছিলো আমি মৃত। ভাবাই স্বাভাবিক।

হতে পারতো আজ আমার সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। খবরের কাগজে নিজের সেই বিভৎস ছবি দেখে আজো আঁতকে উঠি আর বিস্ময়ে হতবাক হই আমি! নানা কষ্টের মাঝে তখন সান্ত¡না খুঁজে পাই সৌভাগ্যক্রমে নিজের বেঁচে থাকায়!’

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলায় বর্তমান রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানের পাশে যে তিনজন নারী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন তাদেরই একজন সাভারের মাহবুবা পারভীন। বাংলানিউজের সাথে একান্ত স্বাক্ষাতকারে এ কথাগুলো বলছিলেন তিনি।

সেদিন এই নারকীয় হামলায় ঘটনাস্থলে নিহত হন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ দলের ২৪ জন নেতা-কর্মী। এছাড়াও দলের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দসহ আহত হন পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী। আহতদের অনেকেই হাত-পা হারিয়ে চিরজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন। অসংখ্য ব্যক্তি এখনও নিজের দেহে বয়ে বেড়াচ্ছেন ঘাতক গ্রেনেডের ¯িপ্রন্টার। তাদেরই একজন ঢাকা  জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবা পারভীন। দেহের মধ্যে ১৮শ’ ¯িপ্রন্টার। সারাক্ষণ তীব্র যন্ত্রণাকে সঙ্গি করে বেঁচে আছে এখনো। অপেক্ষায় সেই নারকীয় ঘটনায় জড়িতদের বিচার দেখার।

মাহবুব বলেন, ‘মাত্র ২০ মিনিটের বক্তৃতা শেষে নেত্রী (শেখ হাসিনা) ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ উচ্চারণ করে মিছিল শুরুর ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাবেশস্থলের দক্ষিণ দিক থেকে ভেসে এলো প্রচ- শব্দ। সেখানে মঞ্চকে লক্ষ্য করেই নিক্ষেপ করা হয় গ্রেনেড। এর পর একের পর এক গ্রেনেডের বিস্ফোরণের বিকট শব্দে ল-ভ- হয়ে যায় সবকিছু। তারপর আর কিছু মনে নেই। ’

মৃত ভেবেই মাহবুবা পারভীনকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশ কাটা ঘরে। সেখানেই পরে থাকেন প্রায় ছয় ঘণ্টা। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আশিষ কুমার মজুমদার সেখানে লাশ সনাক্ত করতে গেলে মাহবুবা পারভীনকে তিনি জীবিত দেখতে পান। মর্গ থেকে দ্রুত তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে। ৭২ ঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরে এলে সুচিকিৎসার জন্যে তাকে পাঠানো হয় ভারতে।

এখন তিনি কিছুটা সুস্থ্য হলেও দেহের ১৮শ’ স্প্রিন্টার আর বাইরের অসহায় পরিবেশ তাকে করেছে বিপন্ন। একদিকে নিজ দেহে থাকা অসংখ্য স্প্রিন্টারের যন্ত্রণা, অন্যদিকে দারিদ্রতা। এ দুইয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে অসহায় হয়ে পড়েছেন তিনি। স্বামী বিমান বাহিনীর  সাবেক ফ্লাইট সার্জেন্ট এমএ মাসুদ ও সন্তানদের নিয়ে সাভার পৌরসভার ব্যাংক টাউনের একটি বাসায় বসবাস করছেন মাহবুবা পারভীন। যা এক প্রকার মানবেতর জীবন যাপন।

এমএ মাসুদ বাংলানিউজকে জানান, পরিবারের আপত্তি সত্বেও বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসার টানে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নেমেছিলেন তিনি। পরিবারকে সময় দিতে না পারলেও দলের বিভিন্ন কর্মসূচি, সভা ও সমাবেশে তিনি ছিলেন প্রথম সারির একজন।

তিনি জানান, তার দেহে থাকা অসংখ্য স্প্রিন্টারের মধ্যে মাথায় থাকা দু’টি স্প্রিন্টার তাকে প্রচ- কষ্ট দেয়। মাঝে মধ্যেই খিচুনী ওঠার মতো দু’হাতে মাথা চেপে ধরে যন্ত্রণায় চিৎকার চেচামেচি করে।

মাহবুবা জানান, প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে পর্যাপ্ত চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। দিন যায় আর শারীরিক অচলাবস্থাও যেন বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। এর মধ্যে বাম হাত অবশ, ডান কানে কম শোনাসহ কোমড়ে শক্তি নেই বললেই চলে।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিকিৎসার জন্য মাত্র ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এভাবে আর চলতে পারছিনা বলে ডুকরে কেঁদে ওঠেন মাহবুবা পারভিন।

তিনি জানান, ‘২১ আগস্ট এলেই সেই স্মৃতি পরিণত হয় ক্ষোভে। গভীর দুঃখ আর কষ্টে কান্নায় ভিজে যায় তার চোখ-মুখ। ব্যয়বহুল চিকিৎসার জন্যে তাকে থাইল্যান্ডে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় চিকিৎসকরা। সেটার জন্যে এ মূহুর্তে প্রয়োজন প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা।

দুই ছেলে মাসুদ আশা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা ও নোশাদ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য বিভাগে পড়ালেখা করছে। সন্তানদের মানুষ করার জন্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়াও নিজ সংগঠন ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসবেক লীগ সামান্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে বলে জানান তিনি। গ্রেনেডের হাত থেকে প্রাণে রক্ষা পেলেও এখন প্রাণ বাঁচাতেই জীবনের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে তাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।