ঢাকা: ভোলা-৩ আসনের সাংসদ নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের পিস্তলের গুলিতে ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম আহমেদ নিহত হওয়ার ঘটনায় তার পরিবার ‘হত্যা মামলা’ দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছে। সাংসদ শাওনকেই মামলায় প্রধান আসামি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইব্রাহীমের পরিবারের সদস্যরা।
ইব্রাহিমের বাবা সালেহ আহমেদ ও ছোট ভাই মাসুম আহমেদের সঙ্গে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডির পক্ষ থেকে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ইব্রাহিমের চাচা মোস্তাক আহমেদ, ফুফাতো ভাই ফুয়াদ হোসেনসহ স্বজনরা প্রায় সবাই বলেছেন, ইব্রাহিমকে পরিকল্পিতভাবেই খুন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে শাওন জড়িত রয়েছেন বলেই তারা জোর দাবি করেছেন।
রোববার দুপুরে ইব্রাহিম আহমেদের বাবা সালেহ আহমেদ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি কে বলেন, ‘ভোলার রাজনীতিতে শাওনের উত্থানের পেছনে ইব্রাহিমের ভূমিকা সবাই জানেন। উপ-নির্বাচনে শাওনের জন্য ইব্রাহিম জীবনবাজি রেখে পরিশ্রম করেছে। তার প্রতিদান হিসেবে ইব্রাহিমকে লাশ বানিয়ে দেওয়া হলো? এ কেমন বিচার?এতবড় অন্যায় কিভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়?’
এসব কথা বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সালেহ আহমেদ।
শেরেবাংলানগর থানার পুলিশ ইব্রাহিমের হত্যাকান্ড নিয়ে টালবাহানা করছে বলেও অভিযোগ করেন সালেহ আহমেদ। তিনি বলেন, যে পিস্তলের গুলিতে ইব্রাহিম মারা গেছে বলে এমপি শাওন ও তার গাড়ি চালক দাবি করছেন- শাওনের সেই পিস্তলটি জব্দ করা নিয়েও পুলিশের গড়িমসি করছে। ’
ইব্রাহিম নিহত হওয়ার পর তার মৃতদেহ নিয়ে দাফন-কাফন থেকে শুরু করে পারিবারিক যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন ফুফাতো ভাই ফুয়াদ হোসেন। তিনি গুলিস্তান এলাকার একটি মসজিদের ইমাম।
ফুয়াদ হোসেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘পিস্তলটি জব্দ করে দ্রুত ফিঙ্গার প্রিন্ট কেন করা হলো না? ওই পিস্তলের ট্রিগারে কার আঙ্গুলের ছাপ আছে তা পরীক্ষা করলেই আসল ঘটনা বের হয়ে আসবে।
পিস্তলের ট্রিগার থেকে আঙ্গুলের ছাপ মুছে মূল আলামত নষ্ট করার কাজে পুলিশ সময় ক্ষেপণ করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
নিহত ইব্রাহিম আহমেদের ছোট ভাই মাসুম আহমেদ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি কে বলেন, এমপি শাওনের সাংগঠনিক কাজ থেকে শুরু করে নির্বাচনী কাজ পর্যন্ত সব কিছুতেই আমার ভাইয়ের অবদান ছিল। এমপি শাওনের গাড়িতে তার পিস্তলের গুলিতেই নিহত হলেন তিনি।
এ হত্যায় যদি জড়িতই না থাকবেন তাহলে সাংসদ শাওন কেনো তার জানাজা’য় শরিক হননি, প্রশ্ন তোলেন মাসুস আহমেদ।
তিনি আরো বলেন, ‘হাসপাতালের আঙ্গিনায় কুকুর-বিড়ালের মৃতদেহের মতো আমার ভাইয়ের মৃতদেহটি ফেলে রেখে কিভাবে শাওন ভাই পালিয়ে গেলেন, তা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে। ’
এদিকে ইব্রাহিম আহমেদের স্ত্রী আওয়ামী লীগ নেত্রী রীনা ইসলাম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি কে জানান, ইব্রাহিম নিহত হওয়ার তিন দিন পর এমপি নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন রোববার দুপুরে তাদের বাসায় সান্ত্বনা দিতে যান। এমপি শাওন তাদের বলেছেন, তার গাড়িতে তারই পিস্তলের গুলিতে ইব্রাহিমের মতো একজন ত্যাগী কর্মীর মৃত্যুতে তিনি খুবই শোকাহত।
ইব্রাহিমের অবর্তমানে তার বাবা-ভাইসহ পুরো পরিবারের আজীবন সংসার পরিচালনার ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেওয়ারও ঘোষণা দেন এমপি শাওন।
রীনা ইসলাম আরো জানান, এককালীন ২০/২৫ লাখ টাকা দেওয়ার ব্যাপারেও এমপি শাওন আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি ইব্রাহিমের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাইছেন।
আর্থিক সহায়তা প্রস্তাবের কথা স্বীকার করলেন শাওন
এসব ব্যাপারে রোববার এমপি নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি নিহত ইব্রাহিমের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা সংক্রান্ত প্রস্তাব দেওয়ার কথা অস্বীকার করেননি। সাংসদ শাওন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি কে বলেন, ‘বিভিন্ন টেন্ডারে অংশ নেওয়ার কারণে ইব্রাহিমের বেশ কিছু টাকা আমার কাছে জমা আছে। জমা থাকা ১০/১২ লাখ টাকা আমি তার পরিবারকে ফেরতও দিতে চেয়েছি। তাছাড়া আমার নিঃস্বার্থ কর্মী হিসেবে ইব্রাহিমের পরিবারকে নানাভাবেই সহযোগিতা করাটাও আমার কর্তব্য। ’
বাংলাদেশ সময় ১৮২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১০