ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জলিলকে হাইকোর্টে হাজির হবার নির্দেশে নওগাঁয় তোলপাড়

শফিক ছোটন, জেলা সংবাদদাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১১
জলিলকে হাইকোর্টে হাজির হবার নির্দেশে নওগাঁয় তোলপাড়

নওগাঁ: নওগাঁর দুবলহাটি রাজবাড়ী এলাকায় মার্কেন্টাইল ব্যাংকের উদ্যোগে হাসপাতাল নির্মাণকে কেন্দ্র করে ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলকে ১৬ আগস্ট হাইকোর্টে হাজির হবার নির্দেশে জেলা আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীসহ সব মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

একদিকে রাজ এস্টেটের রানীমাতা কর্তৃক মন্দির ভাঙ্গার অভিযোগ, অন্যদিকে জলিলকে হাইকোর্টের তলব চায়ের টেবিলে আলোচনার ঝড় তুলছে।

অপরদিকে জেলার বিভিন্ন মন্দির পরিচালনা কমিটির প্রধানরা রানীমাতার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করায় তর্ক-বিতর্ক নয়া মাত্রা পাচ্ছে।

এদিকে, জেলা প্রশাসন বিষয়টি এড়িয়ে চলছেন। সব মিলিয়ে জনমনে ব্যাপক কৌতুহলের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নওগাঁর দুবলহাটি রাজ এস্টেটের রানীমাতা অরুণা রায় চৌধুরী ২৬ জুলাই নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্দির ভেঙ্গে হাসপাতাল নির্মাণের অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি বলেন, ‘মহামান্য হাইকোর্টের স্থিতাবস্থার আদেশ অমান্য করে দুবলহাটি রাজবাড়ির প্রায় ২ শ’ বছরের পুরাতন রঘুনাথ মন্দির ভেঙ্গে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নামে একটি চ্যারিটেবল হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। ’

গত ২৭ জুলাই এ সংবাদ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলে হাইকোর্ট স্বপ্রনোদিত হয়ে ওই মন্দির সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে নওগাঁ জেলা প্রশাসককে ভবিষ্যতে এটি দখলের চেষ্টাকারীদের গ্রেপ্তার করারও নির্দেশ দেওয়া হয়।

মন্দির ভেঙ্গে হাসপাতাল নির্মাণ মামলা শুনানীকালে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নওগাঁর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. নাজমানারা খানুম ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থপনা পরিচালক একেএম সিদ্দিকুর রহমানসহ ৪ কর্মকর্তা ৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালে হাইকোর্টে হাজির হন। অপর দুই কর্মকর্তা হলেন, নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নওগাঁ শাখার ব্যবস্থাপক।

আদালতে জেলা প্রশাসক নাজমানারা মন্দিরের জায়গাটি সরকারি সম্পত্তি উল্লে¬খ করে বলেন, ‘হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের পর থেকে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কয়েক দফা নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা নোটিশ উপেক্ষা করেই নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখেন। ’

মন্দির ভেঙ্গে হাসপাতাল নির্মাণের অভিযোগে আদালত মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলসহ ব্যাংকের শীর্ষ  কর্মকর্তাদের তলব করেন। আগামী ১৬ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টায় সশরীরে আদালতে হাজির  হয়ে অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এসব ঘটনা পরম্পরায় নওগাঁয় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে আব্দুল জলিলকে হাইকোর্টে তলব করায় জেলা আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে হিন্দু নেতৃবৃন্দ বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তারা একজোট হয়ে রাজ এস্টেটের রানীমাতার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।

জেলার বিভিন্ন মন্দির পরিচালনা কমিটির পক্ষে শহরের কালীতলা শ্রীশ্রী বুড়া কালীমাতা পূজা ম-প কমিটির সভাপতি নিরোদ বরন সাহা চন্দন বাংলানিউজকে বলেন, ‘যেখানে চ্যারিটেবল হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে আদৌ কোনও মন্দির নেই। সেটি আসলে রাজার সময়ের নাট্যশালা। কাজেই মন্দিরের জায়গা দখল করে হাসপাতাল নির্মাণ উদ্যোগের অভিযোগটি সত্য নয়। ’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্মল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘সংসদ সদস্য আব্দুল জলিল একজন অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি। তিনি জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের কল্যাণে অনেক অবদান রেখেছেন। এলাকার লোকজনের মতামতের ভিত্তিতেই তিনি দুবলহাটি রাজবাড়ির একটি পরিত্যক্ত অংশে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে আব্দুল জলিলের দূরত্ব সৃষ্টির লক্ষে একটি মহল এ ধুম্রজালের সৃষ্টি করেছে। ’

দুবলহাটি রাজ এস্টেটের রানীমাতা অরুণা রায় চৌধুরীর ছেলে অরুণ রায় চৌধুরী সোমবার বাংলানিউজকে বলেন, ‘হাইকোর্ট তাদের পরিবারকে নিরাপত্তার নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে প্রশাসনের লোকজন প্রায়ই তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। রাজবাড়ি এলাকা পাহারা দেওয়া হচ্ছে। যেখানে ভাংচুর করা হয়েছে সেখানে সাধারণ কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছেনা। ’

তবে ইতোমধ্যে সেখান থেকে মার্কেন্টাইল ব্যাংক হাসপাতালের সাইনবোর্ড ও নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেওয়া হলেও বিষয়টি আপোষ-মীমাংসা করে নিতে বিভিন্ন জনের মারফত তাদের কাছে প্রস্তাব আসছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, ইতোপূর্বে প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে তথ্য প্রদান করে থাকলেও সম্প্রতি আর কোনও কথা বলছেন না। সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে যোগাযোগ করা হলে বিভিন্ন অজুহাতে এড়িয়ে যান তারা।

বাংলানিউজের পক্ষ থেকে সোমবার অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক (রাজস্ব) ড. মোজাফ্ফর হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দুবলহাটি রাজ এস্টেট সম্পর্কে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

জেলা প্রশাসক ড. নাজমানারা খানুমের সঙ্গেও যোগাযোগ করে দুবলহাটি মন্দিরের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনিও ব্যাস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে যান।


বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।