ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগমুক্ত হচ্ছেন ৯৭ বিডিআর জওয়ান

রমেন দাশগুপ্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১১
রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগমুক্ত হচ্ছেন ৯৭ বিডিআর জওয়ান

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বাইতুল ইজ্জতে বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড স্কুলে বিদ্রোহ সংঘটনকারী ৯৭ জন জওয়ানের বিরুদ্ধে আনা রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তবে মন্ত্রণালয় দু’জন জ্যেষ্ঠ বিডিআর সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার না করারও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এরা হলেন, ওই ট্রেনিং স্কুলের তৎকালীন সহকারী পরিচালক (আরডিও-১১৭) হারুন অর রশিদ এবং উপ-সহকারী পরিচালক (আরডিও-১৬৭) মো.নূরুন্নবী।

রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ৯৯ জন বিডিআর সদস্যের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বিকাশ চন্দ্র সাহা’র আদালতে বিচার শুরুর পূর্ব প্রক্রিয়ায় আছে।

ওই আদালতে গত সোমবার চট্টগ্রাম জেলা পিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম ‘নালিশি মামলা আংশিক প্রত্যাহার’ সংক্রান্ত একটি আবেদন দাখিল করেন। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর এ আবেদনের উপর শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।

জেলা পিপি আবুল হাশেম বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারায় আমি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছি। শুনানির পর আদালত এ ব্যাপারে আদেশ দেবেন। ’

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্র“য়ারী ঢাকায় পিলখানা বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় দেশের একমাত্র বিডিআর ট্রেনিং সেন্টার বাইতুল ইজ্জতের বিডিআর জওয়ানরা।

২৬ ফেব্র“য়ারী সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময়ে তারা অগ্নিসংযোগ,অস্ত্র লুট, হামলা, মারধর এবং সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের সাথে অশোভন আচরণ করেন।

এ ঘটনায় মে মাসে সাতকানিয়া থানার তৎকালীন ওসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ফৌজদারি কার্যবিধির ১২০ (খ), ১২১, ১২১(ক), ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ৩৫৩, ৩৪১, ৩০৭, ৩৪২, ৪৩৫, ৪৩৭, ৪৪৮, ৩৮০, ১১৪, ১০৯/৩ (ক) ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ১০০ জন জওয়ানকে (পরে এক জওয়ান মারা যান) অভিযুক্ত করে আদালতে একটি নালিশি মামলা দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের দু’বছর পর ২০১১ সালের ৯ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা-১ এর সহকারী সচিব আবু সাইদ মোল্লা স্বাক্ষরিত এক পত্রে (স্মারক নং-স্ব ম (আইন-১)/ বিবিধ-৪/২০১০/৯১৯) মামলাটি আংশিক প্রত্যাহারের ব্যাপারে কার্যক্রম গ্রহণের জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, ‘বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত বিডিআর সদস্যদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করার লক্ষ্যে ইতিপূর্বে অত্র মন্ত্রণালয়ের ২০০৯ সালের ৫ মে তারিখের ৩৫৬ নম্বর স্মারকমূলে জারিকৃত আদেশে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারায় ক্ষমতা প্রদান করা হয়। কিন্তু তিনি থানায় কোনও নিয়মিত মামলা রুজু না করে বিজ্ঞ আদালতে ১২ মে,২০০৯ তারিখে সিআর নং-৬৫/২০০৯ মামলা দায়ের করেন। ’

আদেশে আরও বলা হয়েছে, ‘এক্ষণে উক্ত নালিশি মামলার আসামী বিডিআর এডি হারুন অর রশিদ ও ডিএডি মো.নূরুল হুদা ব্যতীত আসামীদের নাম প্রত্যাহারের কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ’

এরপর গত ৭ আগস্ট রোববার চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এম এ এইচ হুমায়ুন কবীর এক পত্রে (স্মারক নং-০০.২৯১.০০৬.৫২.০০.০৪৬.২০১১-১০০৫) এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা পিপিকে নির্দেশ দেন।

পরদিন সোমবার জেলা পিপি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন আদালতে জমা দেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা তুলে ধরে জেলা পিপি বাংলানিউজকে বলেন, ‘বায়তুল ইজ্জতের ঘটনায় আদালতে নালিশি (সিআর) মামলা না হয়ে যদি থানায় নিয়মিত (জিআর) মামলা হত তাহলে বিডিআর বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণের সম্ভাবনা বেশি থাকত। যেহেতু মামলাটি আদালতে দায়ের করা হয়েছে তাই সার্বিক বিবেচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা প্রত্যাহারের যৌক্তিক সিদ্ধান্ত  গ্রহণ করেছে। ’

দু’আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার না করা প্রসঙ্গে জেলা পিপি বাংলানিউজকে বলেন, ‘দু’আসামি তাদের অধস্তন জওয়ানদের বিদ্রোহে যোগদানে বারণ না করে বরং নির্দেশ এবং ইন্ধন দিয়েছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের মত সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। ’

আদালত সূত্র জানায়, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত ৯৯ জন সহ বিডিআর ট্রেনিং স্কুলের মোট ১৫৩ আসামিকে একই ঘটনায় দায়ের করা অপর একটি মামলায় গত ২৮ এপ্রিল বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয় এ সংক্রান্ত বিশেষ আদালত।

নগরীর হালিশহরে ২৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নে স্থাপিত বিশেষ আদালত-১৬ তে এ রায় ঘোষণার সময় আসামীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সংঘটনের বিষয়ে ৩২ দফা অভিযোগ তুলে ধরা হয়। তাতে বলা হয়, ‘আসামীরা সম্মিলিতভাবে বিদ্রোহের সূত্রপাত করেন, বিদ্রোহে ইন্ধন যোগান, কারণ ঘটান অথবা যোগদান করেন অথবা বিদ্রোহ কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহিতা সংঘটিত হবার স্থানে উপস্থিত থেকে তা দমনের সর্বাত্মক চেষ্টা না করেন, অথবা বিদ্রোহ কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহ হচ্ছে জেনেও অথবা তা বিদ্যমান থাকার বিষয়ে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ থাকা সত্ত্বেও কোন রকম বিলম্ব ব্যতিরেকে তার অধিনায়ক অথবা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।