নরসিংদী: গর্ভবতী স্ত্রী জেসমিন সুলতানাকে গুম করার অভিযোগে মোস্তফা কামাল নামে সুনামগঞ্জের এক ট্রাফিক কনস্টেবলকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কনস্টেবল মোস্তফা কামাল আদালতে জামিন নিতে এলে নরসিংদীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদার জামিন না-মঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জেসমিনের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট সুনামগঞ্জ জেলার দুয়ারা থানার বাগানবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা পুলিশ কনস্টেবল মোস্তফা কামালের সঙ্গে মনোহরদী উপজেলার মাদারটেক গ্রামের হোসেন আলীর মেয়ে জেসমিন সুলতানার বিয়ে হয়।
সুনামগঞ্জ শহরে বসবাসকারী জেসমিনের বড় বোন স্বপ্নার স্বামীর বন্ধু পরিচয়ে কনস্টেবল মোস্তফা কামাল তার আগের বিয়ের কথা গোপন করে জেসমিনকে বিয়ে করেন।
পরবর্তীতে এ ঘটনা জানাজানি হলে কনস্টেবল মোস্তফা কামাল ও জেসমিনের মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এতে কনস্টেবল মোস্তফা কামাল জেসমিনকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। একপর্যায়ে জেসমিনকে মারাত্মক জখম করে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে জেসমিন সুলতানা বাদী হয়ে ২০১০ সালে নরসিংদীর নারী ও শিশু নির্যাতন টাইব্যুনালে তার স্বামী কনস্টেবল মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। চতুর মোস্তফা কামাল তড়িঘড়ি করে জেসমিনদের বাড়ি গিয়ে তার হাতেপায়ে ধরে একটি আপোশনামা তৈরি করেন।
মোস্তফা এ আপোশনামা দিয়ে আদালত থেকে জামিন লাভ করেন। পরে জেসমিনকে তার বাপের বাড়িতে রেখে সপ্তাহে ২/১ দিন শ্বশুরবাড়িতে এসে থাকতেন। এর মধ্যে জেসমিন গর্ভবতী হন।
এ খবর মোস্তফা জানার পর গত ১৪ জুন জেসমিনকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে তার কর্মস্থল সুনামগঞ্জের বাগানবাড়ি নিয়ে আসেন। পরের দিন ১৫ জুন তিনি শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের মোবাইল ফোনে জানান জেসমিনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
এ খবর পেয়ে জেসমিনের আত্মীয়-স্বজনরা সুনামগঞ্জ এসে জেসমিন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে মো. মোস্তফা জানান, জেসমিন কোথায় চলে গেছে, তা সে জানে না।
এ ঘটনার পর তারা জেসমিনকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে জেসমিনের মা লাইলি বেগম পূর্ববর্তী মামলার সূত্রে নরসিংদীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এক অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে বলা হয়, মোস্তফা কামাল জেসমিনকে হত্যা করে তার লাশ গুম করে ফেলেছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদার এ ব্যাপারে মামলা গ্রহণ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতকে অবহিতকরণসহ ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য মনোহরদী থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। বিচারকের নির্দেশ অনুযায়ী, মনোহরদী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়।
বৃহস্পতিবার কনস্টেবল মোস্তফা কামাল আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন জানালে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ ব্যাপারে মনোহরদী থানার ওসি সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, নিখোঁজ জেসমিনকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তিনি জানান, আসামি কনস্টেবল মোস্তফা কামালকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১১