নাটোর: নাটোরের লালপুর উপজেলায় কাংনী মহিষের (মহিলা মহিষ) বাথানে গলাফোলা রোগে দেখা দিয়েছে। এই মধ্যে উপজেলার দুটি গ্রামে ১১ টি মহিষ মারা গেছে।
আঞ্চলিক প্রাণী রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগার জয়পুরহাটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নূরুল আমীন সরেজমিনে মহিষের রক্ত সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন। প্রাথমিকভাবে এটি হিমোরেজিক সেপ্টিসিমিয়া-এইচএস বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ঢাকায় কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আরও জানান, বিক্ষিপ্তভাবে গলাফোলা রোগের মোড়ক দেখা দেওয়ায় কোনো পশু অসুস্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সুস্থদের অতিসত্ত্বর প্রতিশেধক টিকা দিতে হবে।
অসুস্থ পশু জবাই করে মাংস না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
নাটোর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা এ টি এম ফজলুল কাদের মল্লিক বৃহষ্পতিবার বাংলানিউজকে জানান, এ ঘটনায় নাটোর সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (ইউএলও) আনিসুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের চিকিৎসক দল গঠন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, চিকিৎসক দল নিয়মিত কাজ করছেন। এরই মধ্যে সাড়ে ৪শ গরু-মহিষকে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে। আতংকিত হওয়ার কিছু নেই।
লালপুর উপজেলার প্রায় ৫ হাজার একর পদ্মার খাস চড় ভূমি আছে। এখানে প্রচুর প্রাকৃতিক ঘাস জন্মে। সহজ ও বিনামূল্যে গোখাদ্য পাওয়ার কারণে পদ্মার চড়ে কাংনী মহিষ পালন, মহিষের বাচ্চা ও দুধ বিক্রি করে প্রায় ৫ হাজার লোক জীবিকা নির্বাহ করে।
মাধবপুর গ্রামের নাজিম উদ্দিন জানান, তার নিজের, ছেলে ও ভাই-ভাতিজাদের ৪৫ টি কাংনী মহিষের বাখান আছে। মহিষ নিয়ে তারা পদ্মার চর ও আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় চারণভূমিতে নিয়ে বেড়ান। রোজার শুরুতে ঈশ্বরদীর হরিপুর চরে থাকা অবস্থায় হঠাৎ দুইটি মহিষের জ্বর হয়। এক দিনের মধ্যে মুখ দিয়ে লালা ঝড়াতে ঝড়াতে মারা যায় মহিষটি। এর পর গোপালপুর মহিষ বাথানে নিয়ে আসা হলে পালের আরও দুইটি মহিষ একইভাবে মারা যায়। বুধবার পর্যন্ত সাত দিনে ১১ টি মহিষ মারা গেছে।
লালপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, জনবল সংকটের কারণে উপজেলায় পশু চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। তার কার্যালয়ে ১১ টি পদের বিপরীতে ভেটেরিনারি সার্জন একজন ও ভেটেরিনারি ফিল্ড এসিস্টেন্ট তিন জনের দুজন নেই।
চিকিৎসক দলের প্রধান নাটোর সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (ইউএলও) আনিসুর রহমান জানান, গলাফোলা রোগের লক্ষণ ১০৫/১০৬ ডিগ্রির ওপরে জ্বর, পেট ফোলা, শ্বাস কষ্ট ও লালা নির্গত হতে হতে পশু দুই দিনের মধ্যে মারা যায়। রোগের লক্ষণ নিশ্চিত হয়ে অসুস্থ পশুকে অ্যানাপ্লামসিস টিকা দেওয়া হচ্ছে।
এরই মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪শ পশুকে প্রতিশেধক হিসাবে ইমিডোকার্ড টিকা প্রদান করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১১