ময়মনসিংহ: রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কৃষি প্রকৌশলী ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. মো. রফিকুল হককে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) নতুন উপচার্য হিসেবে আগামী ৪ বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতরের সেকশন অফিসার কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অধ্যাপক ড. মো রফিকুল হক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের কৃষি প্রকৌশলী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২তম ভাইস-চ্যান্সেলর। এর আগে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরী অনুষদের অন্যতম প্রবীণ প্রফেসর হিসেবে সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
ড. হক ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলার কালিসীমায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজসেবী এবং জনপ্রতিনিধি মরহুম হাজী নাইব উদ্দিন আহমেদ ও মা মরহুমা অরিজুননেছা। প্রফেসর হক নেত্রকোনা সরকারি কলেজের স্বনামধন্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ মরহুম তছ্দকত আহমাদের জামাতা।
শিক্ষা জীবনে কৃতিত্বের অধিকারী প্রফেসর হক ১৯৬৪ সনে নিকলি জিসি হাইস্কুল, কিশোরগঞ্জ থেকে এসএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরী অনুষদ থেকে ১৯৭০ সনে কৃতিত্বের সঙ্গে বিএসসি ইন এগ্রি-ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডেনমার্কের দি রয়েল ভেটেরিনারি অ্যান্ড এগ্রিকালচার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮১ সানে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি থাইল্যান্ডের ব্যাংককে এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ১৯৮৯-৯০ সনে পোষ্ট ডক্টরাল করেন।
ড. রফিকুল হক ১৯৭২ সালের ১ নভেম্বর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২০ মার্চ ১৯৭৫ সালে সহকারী প্রফেসর, ৭ আগস্ট ১৯৮৬-তে সহযোগী প্রফেসর এবং ৮ ফেব্রয়ারি ১৯৯২ সালে প্রফেসর পদে উন্নীত হন।
ড. হক বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ ও কনফারেন্সে যোগদান করে গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং বিভিন্ন টেকনিক্যাল সেশনে চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেন।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী প্রফেসর ড. রফিকুল হক উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কমিটির কো-অর্ডিনটর, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম কৃষি প্রকৌশলী হিসেবে বিভাগীয় প্রধান, হল প্রভোস্ট, প্রভোস্ট কাউন্সিলের কনভেনর, সদস্য, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটি ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে এফএও, কৃষি মন্ত্রণালয়, বিশ্বব্যাংকে এবং এশিয়ান ডেভলাপমেন্ট ব্যাংকে কাজ করেছেন। এ ছাড়া ড. হক বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালের এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সনে ড. রফিকুল হক সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ভারতের দেরাদুনের তান্দুয়ায় মুজিব বাহিনীর কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ‘লিডিং ফ্রিডম ফাইটার স্পেশাল কমান্ডো ট্রেনিং কোর্সে’ ভালো ফলাফল করায় উক্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষক হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষাবিদ কৃষি প্রকৌশলী প্রফেসর ড. হক ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব, ১৯৯৭ সারে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের সদস্য।
এ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পেশাগত সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।
ব্যক্তিগত জীবনে প্রফেসর ড. মো. রফিকুল হক বিবাহিত এবং ৩ কন্যার জনক।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১১