ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

টানা বৃষ্টিতে রাজধানীতে তীব্র যানজট: দুর্ভোগ চরমে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১২ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১১

ঢাকা: কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাতে রাজধানীর অধিকাংশ সড়কগুলোতে পানি জমে যানবাহন চলাচলে ব্যাপক বিঘœ ঘটায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চলাচলের সময় নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।



এদিকে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সারাদেশে গত কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুধবারও সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত চলছে। এতে করে নগরীর বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলো হাটু সমান পানিতে ডুবে গেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়াম ও গুলশান, মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা আনন্দনগর, ডেমরা, শ্যামপুর, মাতুয়াইল, শনির আখড়াসহ নিম্ন অঞ্চলের বাড়িঘর এবং সড়কে পানি জমে আছে।

ফলে এসব এলাকার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যবহত হচ্ছে। পাশাপাশি সড়কে যান চলাচলে মারাত্মক বিঘœ ঘটায় গন্তব্যে পৌঁছাতে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় বেশি লাগছে। কারণ প্রতিটি সিগন্যাল অতিক্রম করতে যাত্রীদের ২০ থেকে ২৫ মিনিট অধিক সময় লাগছে।

বুধবার সকালেও মিরপুরের কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ার রাস্তায় হাটু পানি জমে গেছে। সকালে এ রাস্তার পানিতে এক কিশোরকে টিনের তৈরী একটি ভেলা চালাতে দেখা গেছে।    

কাজীপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, বৃষ্টি হলেই এ এলাকার রাস্তায় পানি জমে থাকে। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের কান ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

উত্তরার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফরহাদ হোসেন জানান, সকালে মিরপুর-১১ নম্বর থেকে কাজীপাড়া-শেওড়াপাড়া অতিক্রম করতে সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টা। উত্তরা পৌঁছাতে প্রায় চার ঘণ্টা সময় লেগেছে। অথচ গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগে সর্বোচ্চ দেড় ঘণ্টা।

মিরপুর ১০ নম্বর গোল চক্করে কর্তব্যরত ট্রাফিক কর্মকর্তা ফিরোজ কবীর বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে রাস্তায় পানি জমে যান চলাচলে বিঘœ ঘটছে। এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ’

মৌচাকে রাস্তায় বুধবার হাটু পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। এ এলাকার বাসিন্দা জাহিদ জানান, গত দু’দিন থেকে রাস্তায় পানি জমে থাকায় চলাচলে মারাত্মক গ্লানি পোহাতে হচ্ছে।

মাতুয়াইলয়ের সড়কে হাটু পানি জমে থাকায় এ এলাকায় জনদুর্ভোগ নেমে এসেছে। প্রবল বৃষ্টির ফলে বাসাবো, মাদারটেক, নন্দীপাড়ার রাস্তাগুলোর মধ্যে গর্ত তৈরি হয়েছে। ফলে ছোট-খাট দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে।

ডেমরার নিম্নাঞ্চলে জমে থাকা পানিতে এলাকাবাসী মাছ ধরছে। উত্তর বাড্ডা, আনন্দনগর এলাকায় বেশ কিছু ঘর বাড়িতে পানি উঠেছে। বুধবার কয়েকটি বাড়িতে মাঁচার ওপর রান্না করতে দেখা গেছে।

এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে বের হচ্ছে না। যারা বের হচ্ছে তারাই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষ যারা ‘দিন আনে দিন খায়’ তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে আরও বেশি। প্রয়োজন মাফিক আয় না হওয়ায় নগরীর ওএমএস এর চালের দোকানগুলোতে বৃষ্টির মধ্যে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।

রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় রিকশা চালক রহমত আলী বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে খ্যাপ কম হচ্ছে। অন্যান্য দিন তিন থেকে চারশ’ টাকা আয় হলেও এ আবহাওয়ায় আয় হচ্ছে দেড় থেকে দুইশ’ টাকা। এ টাকা দিয়ে চার সদস্যের পরিবারের খাবার যোগান দেওয়া কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। ’

মিরপুর দশ নম্বর গোল চক্কর এলাকায় ফুটপাতে মোবাইল ফোনের খুচরা জিনিসপত্র বিক্রি করেন আরিফ। টানা বৃষ্টিতেও তিনি পলিথিন দিয়ে কোন রকম দোকান ঢেকে রেখে বিক্রির আশায় বসে আছেন।

আরিফ জানালেন, বাড়িতে মা-ভাই-বোনসহ চার জনের খাবার যোগান দেওয়া তার দায়িত্ব। গত দু’দিন বৃষ্টির কারণে বেচাকেনা বন্ধ ছিল। জমানো কিছু টাকাও শেষ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে তিনি বৃষ্টির মধ্যেই এভাবে দোকান খুলে আছেন। তবে ক্রেতা একদম কম বলে জানান তিনি।     

অপর দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় দেশের সর্বত্র বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এরকম আবহাওয়া আরও দুই-এক দিন থাকতে পারে। সমুদ্র বন্দরগুলোতে ৩ নম্বর এবং নদী বন্দরগুলোতে ২ নম্বর সতর্কতা সঙ্কেত বহাল রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাহমুদুল হক জানান, ঢাকায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১৪ মি.লি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন বগুড়ায় সর্বোচ্চ ২০৩ মি.লি. বৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে আরও দুই এক দিন সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ