ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আলোর মুখ দেখে না শ্রমিক হত্যার বিচার

উর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৬
আলোর মুখ দেখে না শ্রমিক হত্যার বিচার

ঢাকা: সারাকা থেকে টাম্পাকো- গত ২৬ বছরে ৩ শতাধিক দুর্ঘটনায় ২ হাজারের বেশি শ্রমিক মারা গেলেও কোনোটির জন্যই দায়ীদের বিচার হয়নি। সবই রযেছে কেবলই বিচার প্রক্রিয়ার জালে।

 

দেশের ইতিহাসে কোনো শ্রমিক হত্যার বিচারই আলোর মুখ দেখে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ সালে থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৩ শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজারেরও বেশি শ্রমিক। কিন্তু কোনোটির বিচারই শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।  

১৯৯০ সালে সারাকা গার্মেন্টেসে অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ২৭ জন শ্রমিক। নিহত শ্রমিকদের ২৫ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলেও বিচার হয়নি জড়িতদের।  

১৯৯৫ সালে লুকাস অ্যাপারেলসে নিহত হন ১০ শ্রমিক। ১৯৯৬ সালে  পল্লবীর সান্তেক্স গার্মেন্টস ও  তাহিদুল ফ্যাশনে নিহত হন ২৮ জন। ১৯৯৭ সালে রহমান অ্যান্ড রহমান ও তামান্না গার্মেন্টসে নিহত হয় ৪৯ জন।  

২০০০ সালে ফের দু’টি কারখানা গ্লোব নিটিং ফ্যাশন ও চৌধুরী নিটওয়্যার লিমিটেডে দুর্ঘটনায় নিহত হন ৬৫ জন। ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনটি পোশাক শিল্প কারখানায় নিহত হন আরও ১১৬ জন। ২০০৬ সালে চট্টগ্রামের কেটিএস অ্যাপারেলে দুর্ঘটনায় একসঙ্গে নিহত হন ৬৫ জন শ্রমিক। ২০১০ সালে গরিব অ্যান্ড গরিবে নিহত হন ৩৬ শ্রমিক। একই বছর হামীম গ্রুপে নিহত হন ৩১ জন জন।  

২০১২ সালে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যান ১১১ জন শ্রমিক। ২০১৩ সালে রানা প্লাজার ভবন ধ্বসে নিহত হন ১১ শতাধিক শ্রমিক। সর্বশেষ টাম্পাকোর অগ্নিকাণ্ডে ৪০ জনেরও বেশি শ্রমিক নিহত হন।

গত ২৬ বছরে উল্লেখ্যযোগ্য শিল্প দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৮টি। কিন্তু তার একটিরও বিচার হয়নি। বিচারহীনতার কারণেই যেমন বাড়ছে শিল্প দুর্ঘটনা, তেমনি বাড়ছে শ্রমিকের মরদেহের সংখ্যা বলে মন্তব্য করেছেন শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশু।

মোশরেফা মিশু বাংলানিউজকে বলেন, ‘শ্রমিক নিহত হলেই তা দুর্ঘটনা হয়ে যায়। আমি এগুলোকে দুর্ঘটনা বলবো না, ঘটনা বলবো। এসব ঘটনায় দায়ীদের কখনোই শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। যেসব শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে, তাদের বিচার কখনো আলোর মুখ দেখে না। ফলে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সচেতন হন না। মালিকরাও বুঝে যান, শ্রমিক হত্যার কোনো বিচার হয় না’।  

‘বিচারহীনতার কারণেই বেড়ে যাচ্ছে এসব ঘটনা। বাড়ছে আমাদের শ্রমিক ভাই-বোনদের মরদেহের মিছিল’।

আইনের ফাঁক-ফোকর গলে এসব দুর্ঘটনায় দায়ীরা বেঁচে যান বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘কোনো দুর্ঘটনায় যখন আমাদের শ্রমিক নিহত হন, তখন আমরা আন্দোলন করি। প্রশাসন আমাদের আন্দোলনের মুখে দায়ীদের কাউকে কাউকে গ্রেফতার করলেও তারা সহজেই আদালত থেকে জামিন নিয়ে আসেন। বিচার প্রক্রিয়া সেখানেই যেন থমকে যায়’।  

‘তারা মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঘুরে বেড়ান। আর আমাদের শ্রমিকদের আত্মা ডুকরে কেঁদে বেড়ায়’।

বিচার প্রক্রিয়ার এ দীর্ঘসূত্রতা দূর করা না হলে ভবিষ্যতে তা আরো বিপদজনক হতে পারে বলে মনে করছেন শ্রম আইন বিশেষজ্ঞরা।

শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে যতো শিল্প দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার কোনোটিরই আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি। যা কোনো শিল্পের জন্য ইতিবাচক হতে পারে না। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা দূর করে এসব শ্রমিক নিহতের ঘটনার বিচার করা উচিত। তাহলে ভবিষ্যতে এ ধরনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা সচেতন হবেন।

বাংলাদেশ সময়: বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৬
ইউএম/এএসআর 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।