ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

সাক্ষাৎকারে সাখাওয়াত: ৪৩ বছরের বাতিঘর জেসিআই

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০১৬
সাক্ষাৎকারে সাখাওয়াত: ৪৩ বছরের বাতিঘর জেসিআই

দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে জীবনকে সাফল্য মণ্ডিত করতে তরুণদের পথ দেখাচ্ছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) বাংলাদেশ। তবে এরও আগে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে সময়ই বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ার কাজেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভূমিকা ছিল স্বেচ্ছাসেবী এই প্রতিষ্ঠানের।

শুধু তাই নয়, স্বাধীনতা উত্তর আজকের বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত শতশত ব্যবসায়ী কিংবা পেশাদার এই জেসিআই থেকেই চিনে নিয়েছেন নিজনিজ সাফল্যের সিঁড়ি। যা সফলভাবে মাড়িয়ে আজ তারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।

সংস্থাটির বর্তমান সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন মামুন বাংলানিউজকে দেওয়া সাক্ষাতকারে এসব নিয়েই বলেছেন নানা কথা। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ইকরাম-উদ দৌলা।
 
বাংলানিউজ: জেসিআই আসলে কী এবং কিভাবে গঠন হলো?
সাখাওয়াত হোসেন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত শতকের শুরুর দিকে যখন তরুণরা বিপথগামী ছিল, তখন হেনরি গিসিমবার্গ তার তিন বন্ধুকে নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী একটি প্রতিষ্ঠান গড়েন। ১৯১৫ সালে তার গড়া এই প্রতিষ্ঠানটিই হচ্ছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল। মূলত: তরুণ সমাজকে আলোর পথ দেখাতে, তাদের ভেতর নেতৃত্বগুণাবলী সৃষ্টি করাই এর মূল লক্ষ্য। বর্তমানে এটি ব্যক্তির উন্নয়ন, সমাজ কর্ম ও ব্যবসার উন্নয়ন নিয়ে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করার কাজ করছে। জেসিআই বিশ্বের ১২০টি দেশে কাজ করছে।

বাংলানিউজ: বাংলাদেশে কবে থেকে কাজ করছে এবং কিভাবে কোথায় কাজ করছে?
সাখাওয়াত হোসেন: ১৯৭১ সালে তৎকালীন প্রবাসী সরকারের ভ্রাম্যমাণ রাষ্ট্রদূত আব্দুল কাদির ভারতের জেসিআই এর মাধ্যমে প্রথম কাজ শুরু করেন। সে বছর নভেম্বরে পানামাতে অনুষ্ঠিত সংস্থার ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তোলেন তিনি। এরপর দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭৩ সালে আব্দুল কাদির গড়ে তোলেন জেসিআই বাংলাদেশ। দেশে বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠান মোট ১২টি চ্যাপ্টারে কাজ করছে। এরমধ্যে ১০টি ঢাকায়, ১টি চট্টগ্রাম ও ১টি সিলেটে। আর একটি রয়েছে ন্যাশনাল বোর্ড। যার অধীনেই চ্যাপ্টারগুলো পরিচালিত হয়।
 
জেসিআই বাংলাদেশের প্রায় ৮শ এর মত বিভিন্ন পেশার সদস্য রয়েছে। সদস্যরা আবার দু’ধরণের। একটি হচ্ছে পেশাজীবি সদস্য। যারা প্রতি বছর সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা ফি দিয়ে সদস্য হন। আর স্টুডেন্ট সদস্য, যাদের একটি টোকেন ফি অর্থাৎ ১ হাজার টাকা ফি দিয়ে সদস্য হতে হয়। সদস্যদের বয়স হতে হয় ১৮ থেকে ৪০ এর মধ্যে। পেশাজীবি সদস্যরা ভোট দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। আর ছাত্র সদস্যরা ভোট দিতে পারেন না।
 
এই তরুণ সদস্যদের নিয়ে প্রতি মাসে অন্তত একটি সভা হয় প্রতিটি চ্যাপ্টার। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে দু’টি করে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যেখানে সবার সমস্যা এবং তা কাটিয়ে উঠার উপর আলোচনা হয়। আলোচনা করেন দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত সব পেশাজীবিরা। যারা ‍এক সময় জেসিআই সদস্যই ছিলেন। তবে জেসিআই এর সদস্য না হলেও যে কোনো তরুণ ৫শ’ টাকা ফি দিয়ে যে কোনো প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারেন।
 
বাংলানিউজ: তরুণরা এখান সঠিক পথটা চেনেন কিভাবে?
সাখাওয়াত হোসেন: এখানে আলোচনার মাধ্যমে বেরিয়ে আসে কার কি সম্ভাবনা। কার কি সমস্যা সেটাও বেরিয়ে আসে। কাজেই খুব সহজেই একজন বুঝতে পারে তার কি করা উচিত। এক্ষেত্রে জেসিআই আর্থিক সহায়তা ছাড়া অন্য সহযোগিতাগুলো করে।
 
বাংলানিউজ: অন্য সহযোগিতা বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়?
সাখাওয়াত হোসেন: উদ্বুদ্ধকরণ একটা বড় কাজ। এটি হলে কেউ কেউ হয়তো বর্তমান চাকরি ছেড়ে অন্য চাকরি করতে চায়। তখন জেসিআই এর প্রতিষ্ঠিত সদস্য যারা আছেন তাদের কাছেই ওই ব্যক্তিকে পাঠাই। মূলত: মোটিভেশনের পর নেটওয়ার্কিং এর কাজটাও করে দিই। আর কেউ যদি চাকরি ছেড়ে ব্যবসা করতে চান, তবে তাকে আমরা সংশ্লিষ্ট সদস্যকে ব্যবসায়ীর কাছে পাঠাই। এভাবেই গড়ে উঠছে এক একটা উদ্যোক্তা বা সফল চাকরিজীবি।
 
বাংলানিউজ: জেসিআই এর মূল লক্ষ্য কী?
সাখাওয়াত হোসেন: প্রকৃতপক্ষে তরুণদের যা আছে, তার চেয়ে ভাল কিছু হতে তরুণদের তাগিদ দেয় জেসিআই। আমাদের মূল স্লোগান হচ্ছে ‘বি বেটার’। এক্ষেত্রে একজন মানুষ যে ক্ষেত্রেই থাকুক, তাকে আমরা সে ক্ষেত্রে নেতৃত্বের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পন্থাটা ধরিয়ে দিই। এজন্য প্রশিক্ষণ ছাড়াও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কাজও করে জেসিআই। যারমধ্যে নিউট্রিশন কর্মসূচি, বস্তিবাসীর উন্নয়ন কর্মসূচিও রয়েছে।  
রাষ্ট্র একজন নাগরিককে অনেক কিছু দেয়। তাই রাষ্ট্রকেও তার কিছু দেওয়া উচিত, এটাই জেসিআই’র মূল বক্তব্য।
 
বাংলানিউজ: তরুণদের উদ্দেশ্যে আপনার আহ্বান কী
সাখাওয়াত হোসেন: তাদের বলব, প্রয়োজন মনে করলে জেসিআই বাংলাদেশ-এর সদস্য হোন। নিজেকে উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অংশ নিন। এছাড়া জেসিআই এর স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজেও অংশ নিন।
 
বাংলানিউজ: আপনি ব্যক্তিগতভাবে এখানে এসে কী পেয়েছেন?
সাখাওয়াত হোসেন: আমি ২০০৮ সালে ঢাকা সাউথ চ্যাপ্টারের সদস্য হই। তখন মানুষের সামনে কথাও বলতে পারতাম না। শাই ফিল করতাম। হাত-পা কাঁপত। কিন্তু সেই আমিই এখন ন্যাশনাল বোর্ডের সভাপতি হয়েছি। মন্ত্রী-এমপিসহ দেশের বড় বড় মানুষের সামনে ঘন্টাখানেক বক্তৃতা করতেও সমস্যা হয় না। এছাড়া এখানে এসেই আমি জানতে পেরেছি কিভাবে আইটি ব্যবসা করা যায়। বর্তমানে আমার একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান আছে, যা জেসিআই ‌এর মোটিভেশন ও নেটওয়ার্কিং মাধ্যমেই গড়ে উঠেছে।
 
বাংলানিউজ: বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের মধ্যে কারা জেসিআই’র সদস্য ছিলেন?
সাখাওয়াত হোসেন: ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি সবুর খান, বর্তমান সভাপতি, এফবিসিসিআই অন্তত ছয়জন সাবেক সভাপতিসহ শতশত বড়বড় ব্যবসায়ী ও অন্যান্য পেশাজীবি জেসিআই এর সদস্য ছিলেন। বর্তমানে সদস্যদের মধ্যেও ১০০ জনের বেশি রয়েছে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। সেই ১৯৭৩ সাল থেকে দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরেই ভাল থাকার পথ দেখাচ্ছে জেসিআই বাংলাদেশ।
 
বাংলানিউজ: সদস্য ছাড়া অন্যদের জন্য কী করছে জেসিআই?
সাখাওয়াত হোসেন: প্রতিবছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে লিড দেওয়ার জন্য ১০ জন তরুণকে সম্মাননা দেয় জেসিআই। যা অন্যদের উৎসাহ দেয়। এছাড়া আমাদের স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ সব সময় রয়েছে।

বাংলানিউজ: আপনাকে ধন্যবাদ।
সাখাওয়াত হোসেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১০১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৬
ইইউডি/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।