ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অ্যানেসথেটিস্ট সঙ্কটে রামেক হাসপাতালে সাধারণ অস্ত্রোপচার হচ্ছে না

জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১০
অ্যানেসথেটিস্ট সঙ্কটে রামেক হাসপাতালে সাধারণ অস্ত্রোপচার হচ্ছে না

রাজশাহী: অ্যানেসথেটিস্ট সঙ্কটে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বন্ধের উপক্রম হয়েছে। সাধারণ রোগীদের অস্ত্রোপচার প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে।

এখন কেবল জরুরি বিভাগের দু’একটি অপারেশন করা হচ্ছে।

এ অবস্থায় চিকিৎসা সেবার জন্য উত্তরাঞ্চলের সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা রামেক হাসপাতালে দেখা দিয়েছে ‘অপারেশন জট’। অর্থোপেডিক, নিউরো, গাইনি, পেডিয়াট্রিক, ইএনটি ও চু বিভাগের প্রায় শতাধিক রোগী অপারেশনের অপোয় মাসের পর মাস হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছেন।

রামেক হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে রামেকের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগে ছয় জন ডাক্তার রয়েছেন। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বর্তমানে রোগীর সংখ্যা কয়েক গুণ বাড়লেও ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। উল্টো গত চার মাসে এ বিভাগ থেকে পদোন্নতির কারণে পাঁচ জন ডাক্তার অন্যত্র বদলি হয়েছেন। যে কারণে এ বিভাগের ছয়টির মধ্যে ৫টি পদই এখন শূন্য।

তিনি বলেন, ‘এছাড়া বিভাগীয় ইনচার্জ ডা. এম আর খানের পরিবার ঢাকায় অবস্থান করায় মাসের বেশিরভাগ সময় তিনি ঢাকাতেই অবস্থান করেন। ’

এ ব্যাপারে অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আতাউর রহমান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, চারজন সহকারী চিকিৎসক এনে কোনো রকমে মর্নিং, ইভিনিং ও নাইট শিফ্ট চালানো হচ্ছে। এর ফলে জরুরি ছাড়া অন্য কোনো অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি আরো জানান, এ বিভাগের শূন্য পদ দ্রুত পূরণের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে অভিজ্ঞ কয়েকজন অ্যানেসথেটিস্টের তালিকাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো কোনো পদপে গ্রহণ করা হয়নি।

রোগীদের স্বজনরা জানান, হাসপাতালে ভর্তি হয়ে অস্ত্রোপচার অপোয় থাকা শতাধিক রোগী অসহনীয় অপোর প্রহর গুণছেন।

তারা আরও জানান, দীর্ঘ অপোর পর ডাক্তারদের পরামর্শে স্বচ্ছল রোগীদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন কিনিকে গিয়ে জরুরি অস্ত্রোপচার করিয়ে নেন। কিন্তু দরিদ্র রোগীদের বাধ্য হয়েই রামেক হাসপাতালের বিছানায় বা মেঝেতে শুয়ে অপোর প্রহর গুণতে হচ্ছে। তবে অপোয় থাকতে থাকতে হতাশ হয়ে দরিদ্র রোগীদেরও অনেকেই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

রাজশাহী মহানগরীর বিলসিমলা এলাকার আফরোজা বানু জানান, গলার চিকিৎসার জন্য চার মাস আগে রামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। দুই মাস চিকিৎসার পর ডাক্তার তাকে জানান গলায় একটি ছোট অপারেশনের পরই তিনি বাড়ি যেতে পারবেন। কিন্তু এরপর থেকে গত দুই মাস হাসপাতালের ৬নং ওয়ার্ডের বিছানায় পড়ে থেকে তিনি অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষা করছেন।

আফরোজা জানান, কয়েক দফায় অপারেশনের তারিখ জানানো হলেও এখনো পর্যন্ত তার গলার অস্ত্রোপচার হয়নি।

রামেক হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা দিদার রসুল রোগীদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এ জন্য চারজন সহকারী চিকিৎসককে ওই বিভাগে কাজ করানো হচ্ছে। কিন্তু রোগীর চাপ বেশি থাকায় জরুরি বিভাগ ছাড়া নিয়মিত রোগীদের অপারেশেন করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘হাসপাতালের অ্যানেসথেটিস্ট ডাক্তারের শূন্য পদ পূরণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে কয়েক দফা চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।