ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সৈয়দ শামসুল হক ‘বড় ভালো লোক ছিলো’

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৬
সৈয়দ শামসুল হক ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ সৈয়দ শামসুল হক, ছবি: নূর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সাহিত্যের পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্যের নানা অঙ্গনে মেধার স্বাক্ষর রেখে সৈয়দ শামসুল হক হয়ে উঠেছিলেন সব্যসাচী লেখক। এর মধ্যে তার লেখা মঞ্চনাটক আর বেশকিছু গান অবিস্মরণীয়।

সমান দক্ষতা ছিলো চিত্রনাট্য রচনা আর চলচ্চিত্র পরিচালনায়ও।

মধ্যবিত্ত সমাজের আবেগ-অনুভূতি সহজভাবে উঠে এসেছে সৈয়দ হকের লেখনীতে। নাট্যকার হিসেবে তিনি ছিলেন দারুণ সফল। দেশের মঞ্চনাটক সমৃদ্ধ হয়েছে তার হাত ধরে। নাট্যকার হিসেবে তার পথচলা শুরু বিবিসি বাংলায় নাটক করার অভিজ্ঞতা থেকে। লন্ডনে বিবিসি বাংলা বিভাগে কর্মজীবনের প্রায় সাত বছর কাট‍ান তিনি। ধ্রুপদী নাটক অনুবাদে বিশেষ আগ্রহ ছিলো তার।

সৈয়দ শামসুল হক রচিত কাব্যনাট্য ‘নুরলদীনের সারাজীবন’ (নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়) এবং ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ (থিয়েটার বেইলি রোড) বাংলা নাটকে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। নাটকে শব্দের ব্যবহার, রূপকল্প, কাব্যময়তা তার মতো আর কেউ ঘটাতে প‍ারেনি। তার লেখা নাটকের মধ্যে আরও আছে ‘ঈর্ষা’, ‘ম্যাকবেথ’ প্রভৃতি।

সৈয়দ হক খুব বেশি গান লেখেননি। যা-ই লিখেছেন, সবই শ্রোতারা শুনেছেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো। ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ ছবিতে আলম খানের সুরে এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস’ লিখেছিলেন মানুষের শেষ গন্তব্য নিয়ে। সবশ্রেণীর শ্রোতার মুখে মুখে আজও ফেরে এটি।

‘আশীর্বাদ’ ছবির জন্য সৈয়দ হকের কথা ও আলম খানের সুরে রুন‍া লায়লা ও এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া ‘চাঁদের সাথে আমি দেবো না তোমার তুলনা’কে ভাবা হয় দেশীয় চলচ্চিত্রের সেরা ১০টি প্রেমের গানের মধ্যে অন্যতম।

শ্রোতাদের হৃদয়ে গেঁথে থাকা সৈয়দ হকের কালজয়ী গানের তালিকায় আরও রয়েছে ‘সুতরাং’ ছবির ‘এই যে আকাশ এই যে বাতাস’, ‘আয়না ও অবশিষ্ট’র ‘যার ছায়া পড়েছে’, ‘ময়নামতি’র ‘অনেক সাধের ময়না আমার বাঁধন কেটে যায়’। এ ছাড়া আজও জনপ্রিয় ‘এমন মজা হয় না, গায়ে সোনার গয়না’, ‘তুমি আসবে বলে কাছে ডাকবে বলে’ প্রভৃতি।

এ বছরের গোড়ার দিকে সৈয়দ শামসুল হক ‘মাটির ঘরে চাঁদ নেমেছে’ শিরোনামের একটি গান লিখেছিলেন ‘বাসর হবে মাটির ঘরে’ ছবির জন্য। আলাউদ্দিন আলীর সুর-সংগীতে এতে কণ্ঠ দেন রুনা লায়লা ও সুবীর নন্দী।  

চলচ্চিত্রের জন্য শুধু গানই লেখেননি, নির্মাণও করেছেন সৈয়দ হক। কুড়িগ্রামে স্কুলজীবন শেষ করে ১৯৫১ সালে মুম্বাইতে গিয়ে কিছুদিন কাজ করেন একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থায়। ১৯৬৬ সালে তিনি পরিচালনা করেন উর্দু ছবি ‘ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো’। তার কাছ থেকে এসেছে বেশকিছু চিত্রনাট্য।

কয়েক বছর আগে সৈয়দ হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস অবলম্বনে ‘গেরিলা’ ছবিটি পরিচালনা করেন নাসিরউদ্দীন ইউসুফ। তার চিত্রনাট্যে তৈরি হওয়া ছবির তালিকায় আরও আছে ‘ময়নামতি’, ‘বড় ভালো লোক ছিলো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা’, ‘নতুন দিগন্ত’, ‘ক খ গ ঘ ঙ’ প্রভৃতি।

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সৈয়দ শামসুল হকের অবদান অপরিসীম। শিল্প-সাহিত্য যেমন এই গুণী শিল্পীকে স্মরণ করবে, তেমনি বিনোদন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন ভুলতে পারবে না এমন অতুলনীয় সব্যসাচীকে। ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’-এর মতো তার সৃষ্টিকর্ম আগামী প্রজন্মকেও মনে করিয়ে দেবে, সৈয়দ শামসুল হক ‘বড় ভালো লোক ছিলো’।

বাংলাদেশ সময়: ২২০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৬
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।