ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হাজার কোটি টাকার ম‍ালিক মীর কাসেমের বার্ষিক আয় ১৫ লাখ!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১২ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৬
হাজার কোটি টাকার ম‍ালিক মীর কাসেমের বার্ষিক আয় ১৫ লাখ!

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী জামায়াতের খাজাঞ্চি হিসেবে পরিচিত তিনি। আর্থিক, চিকিৎসা  ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মিডিয়া, কৃষি, ট্রাভেল ব্যবসা খাতে লগ্নি করে মালিক হয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকার।

১৬ প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৩০ হাজার শেয়ারই আছে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে। যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাকে যুক্তরাষ্ট্রের লবিস্ট ফার্মকে দিয়েছেন শত শত কোটি টাকা।

তবু নাকি তার বার্ষিক আয় মাত্র ১৫ লাখ টাকা। উপরন্তু ব্যাংক ঋণই আছে ২০৫ কোটি টাকার।

এমন মিথ্যাচারের আশ্রয় নেওয়া মীর কাসেম আলীর বাড়ি ছিলো চট্টগ্রাম। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে নির্বিচারে মানুষ খুন করে পাকিস্তানের সুনজর পান তিনি। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হলে জনরোষ থেকে বাঁচতে চলে আসেন ঢাকায়।

কিন্তু তার অপকর্মের ঘটনা তখন জেনে গেছে ঢাকার মুক্তিযোদ্ধারাও। মীর কাসেমকে তাই পালাতে হয় ঢাকা ছেড়েও। তিনি চলে যান লন্ডনে। সেখান থেকে সৌদি আরবে গিয়ে গঠন করেন বাংলাদেশ বিরোধী জনমত। মুক্তিযুদ্ধে মুসলমানদের ক্ষয়ক্ষতির ফিরিসতি তুলে যোগাড় করেন বিপুল অর্থ। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দেশে ফিরে সেই অর্থে আখের গোছাতে থাকেন নিজের। মধ্যপ্রাচ্যের এনজিও রাবেতা আল ইসলামী এর কান্ট্রি ডিরেক্টর হয়ে আরো টাকা ‍হাতিয়ে লগ্নি করতে থাকেন নিজের ব্যবসায়। হয়ে ওঠেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের একজন।

অল্প সময়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া মীর কাসেম আবির্ভূত হন স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতের অর্থের অন্যতম যোগানদাতা হিসেবে। দলটির কর্মপরিষদ সদস্য হলেও গোটা দলই চলতো তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থে। যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হলে লন্ডনে লবিস্ট নিয়োগ করে শত শত কোটি টাকা খরচ করে বিচার বানচালের মিশনে নামেন তিনি।    

বর্তমানে ১৬ প্রতিষ্ঠানের ৩০ হাজারের বেশি শেয়ার রয়েছে মীর কাসেম ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে। রাজধানী ঢাকার মিরপুরের মণিপুরে ২৮৭ নম্বর প্লটে রয়েছে ব্যয়বহুল বহুতল ভবন। মোহাম্মদপুরের একতা সোসাইটিতে রয়েছে ৫ কাঠা জমি। ধানমণ্ডির কেয়ারি প্লাজার উল্লেখযোগ্য অংশের মালিক তিনি। আরো সাড়ে ১২ শতক জমি আছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে।

কেয়ারী লিমিটেডের ১৪ হাজার, কেয়ারী টেলিকমের ১০ হাজার, ইসলামী ব্যাংকের ২ হাজার ১১৩, কেয়ারী ট্যুরস অ্যান্ড সার্ভিসেসের ১ হাজার, সেভেল স্কাই ও দিগন্ত মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের ১০০ করে, মীর আলী লিমিটেডের ২৫, কেয়ারী ঝর্না ও  কেয়ারী স্প্রিংয়ের ২০টি করে, এবং কেয়ারী তাজ ও কেয়ারী সানের ৫টি করে শেয়ার রয়েছে মীর কাসেম ও তার প্রতিষ্ঠানের নামে।  

দায়িত্ব পালন করছেন কেয়ারী লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ইবনে সিনা হাসপাতাল ও ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজ এর পরিচালক এবং ইবনে সিনা ট্রাস্ট, এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্ট ও ফুয়াদ আল খতিব চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের সদস্য হিসেবে।

এছাড়াও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম, দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি, ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট অ্যান্ড বিজনেসমেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন, আল্লামা ইকবাল সংসদ, সেন্টার ফর স্ট্রাটেজি অ্যান্ড পিস, বায়তুশ শরফ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ইসলামিক ট্রাস্ট ও ইসলামিক ইকোনমিক্স রিসার্চ সেন্টার এর পরিচালানা পর্ষদে আছেন মীর কাসেম। আরো জড়িত আছেন ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন, রাবেতা আল আলম আল ইসলামী ও অ্যাসোসিয়েশন অব মাল্টিপারপাস ওয়েলফেয়ার এজেন্সির সঙ্গে।

অথচ এই মীর কাসেমই কি না আয়কর রিটার্ন দেখিয়েছেন মাত্র ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ৩০ হাজার শেয়ারে মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। মাত্র কয়েক লাখ টাকার বলে চালিয়ে দিয়েছেন কোটি কোটি টাকার বাড়ি ও জমির দাম। সব মিলিয়ে তার বার্ষিক আয় নাকি ১৫ লাখ টাকার মতো (২০১০ সাল)।

বিপরীতে কেয়ারী লিমিটেডের নামে ৬০ কোটি ৯৩ লাখ, ইবনে সিনা ট্রাস্টের নামে ৫০ কোটি, দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের নামে ৪১ কোটি ৩৫ লাখ, এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়ালের নামে ২৩ কোটি ৭৫ লাখ, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের নামে ২০ কোটি, ইবনে সিনা হাসপাতালের নামে ৬ কোটি ৩৪ লাখ এবং ফুয়াদ আল খতিবের নামে ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে তার। বর্তমানে তিনি মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে ফাঁসির দিন গুণছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ৩০১৬
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।