ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জোট আমলের ‘দলবাজ’ পুলিশ কর্মকর্তাদের হদিস মিলছে না

সাঈদুর রহমান রিমন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১০
জোট আমলের ‘দলবাজ’ পুলিশ কর্মকর্তাদের হদিস মিলছে না

ঢাকা: চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দলবাজ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের হদিস মিলছে না।

সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক গোপন প্রতিবেদনে হত্যা মামলার আসামি, বরখাস্ত পুলিশ সুপার (এসপি) কোহিনুর মিয়াসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘নিখোঁজ’ দেখানো হয়েছে।



প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাভাইয়ের জঙ্গি তৎপরতায় মদদ দেওয়ার অভিযোগে বরখাস্ত এসপি মাসুদুল হাসানকে ডেকেও পাচ্ছে না সদর দপ্তর।

এছাড়া, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্নভাবে অভিযুক্ত সিআইডির এএসপি আব্দুর রশিদ, এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান ও এএসপি রুহুল আমিনকেও  পাওয়া যাচ্ছে না।

মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অভিযোগে বরখাস্ত হন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ। ‘জজ মিয়া’ নাটক তৈরিা মামলায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল হয় মুন্সী আতিকুর রহমানের। বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় রুহুল আমিনকে।  

নিজ নিজ মামলায় জামিন নেওয়ার পর  তিনজনেরই দেখা মিলছে না।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, বরখাস্ত ও সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের বাইরে আরও ১০ পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘সন্দেহভাজন-দলবাজ’ হিসেবে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার এক হত্যা মামলার প্রধান আসামি কোহিনুর মিয়া গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মামলাটি নান্দাইল থানা থেকে সিআইডিতে স্থানান্তর হওয়ার পর তদন্তও এগোয়নি।
 
গত ৮ মাসে কোহিনুর মিয়াকে গ্রেপ্তার বা জিজ্ঞাসাবাদের কোনো উদ্যোগ নেননি সিআইডি’র তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি ইসমাইল হোসেন।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে তিনি বলেন, ‘তদন্তে এখনও কোহিনুর মিয়া দোষী সাব্যস্ত হননি। তাই তাকে গ্রেপ্তারের প্রশ্ন আসে না। ’

জেএমবি নেতা বাংলা ভাইয়ের অপকর্মে মদদদাতা রাজশাহীর তৎকালীন এসপি মাসুদুল হাসান বরখাস্ত হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রিভিউ কমিটির কাছে চাকুরি ফিরে পাওয়ার আবেদন করেছেন। তাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

সদর দপ্তরের জঙ্গি সংক্রান্ত বিশেষ সেলের এক কর্মকর্তা জানান, জঙ্গি তৎপরতার তদন্ত কাজে সহায়তার জন্য কয়েক দফা খোঁজ করেও মাসুদুল হাসানকে পাওয়া যায়নি। বিশেষ সেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জান্নাতুল হাসান এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেন।

রিভিউ কমিটির এক কর্মকর্তা জানান, তাকে মাসুদুল হাসানকে চাকুরিতে পুনর্বহাল করা যায় কি না মতামত চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটার উইংয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে তিনি কোথায় আছেন সে তথ্য পুলিশ সদর দপ্তরে নেই।

একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অভিযোগে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি আব্দুর রশিদকে এরই মধ্যেই বরখাস্ত করা হয়েছে।

এছাড়া হামলার দায় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাঁধে চাপিয়ে দিতে সিআইডি’র এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান ও এএসপি রুহুল আমিন ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজান। মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও তাদের সরাসরি দায়ী করা হয়।

ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মুন্সী আতিকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় আতিকের অন্যতম সহযোগী এএসপি রুহুল আমিনকে।

উভয়ের বিরুদ্ধে মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা ও ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা সংক্রান্ত এক মামলা রুজু হয়।

ওই মামলায় মুন্সী আতিক ও রুহুল আমিন জামিন নিয়ে আর আদালতে হাজির হচ্ছেন না বলে জানা গেছে।

একইভাবে লাপাত্তা রয়েছেন এএসপি আব্দুর রশিদও।

এদিকে সব সরকারের আমলেই বিশেষ সুবিধা পাওয়াদের তালিকায় থাকা এসপি মিজানুর রহমানকে বাগেরহাটে জমি দখলের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে বরখাস্ত করাসহ তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

কিন্তু তদবিরের জোরে এসপি মিজানুর রহমানকে কোনো তদন্ত ও কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হয়নি। উপরন্তু গত ১৮ জুলাই সাময়িক বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদর দপ্তরে তাকে পোস্টিং দেওয়া হয়।
ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে, এসপি মিজান চাকরিতে যোগও দিয়েছেন। ‘সন্দেহভাজন দলবাজ’দের তালিকায় এসপি মিজানের নামটিও রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ