ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মাহবুবের পরিবারের খোঁজ কেউ রাখেন না

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৬
মাহবুবের পরিবারের খোঁজ কেউ রাখেন না ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুষ্টিয়া: ‘আগস্ট মাস এলেই সবাই মাহবুবের কথা মনে করেন। তার আগে তো কেউই মাহবুবের পরিবারের খোঁজ নিতে আসেন না।

আমরা কি করছি? কি খাচ্ছি? কিভাবে বেঁচে আছি, তার খোঁজ কেউ রাখেন না?’

‘আপনারাও এই দিন হলেই আসেন আমাদের বাড়িতে। এই টিভি, ওই টিভি, পত্রিকা আরো কতো কিছু! কিছুই তো হয় না। এসব করে লাভ কি আপনাদের? আর এসব বলেই বা কি হবে আমাদের? পারবেন আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে?’

এমন সব প্রশ্ন করলেন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় নিহত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেহরক্ষী শহীদ মাহবুবুর রশিদের বাবা হারুন-অর-রশিদ।

মাহবুবুর রশিদ কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের গরিব কৃষক পরিবারের ছেলে ছিলেন।

হারুন-অর-রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই মাহবুব ছিলো খুব শান্ত প্রকৃতির ছেলে। কোনোদিন কারো সঙ্গে তার কোনো ধরনের কথা-কাটাকাটিও হয়নি। এলাকার সকলের প্রিয় পাত্র ছিলো সে। অভাব আর অনটনের মধ্যে বেড়ে উঠেছিলো, অনেক কষ্ট করেছে জীবনে। দেশের জন্য ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজের প্রাণ দিয়েছে’।

‘মাহবুব আমার সন্তান ছিলো এ কথা ভাবতে আমার বুকটা গর্বে ভরে যায়। আমি এমন এক সন্তানের পিতা যে তার নিজের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে’।

মাহবুবের স্ত্রী ছেলেদের নিয়ে ঢাকায় থাকেন। বড় ছেলে আশিক বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং আর ছোট ছেলে রবিন ডাক্তারি পড়ছেন। হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘আমার চার ছেলে ও পাঁচ মেয়ে ছিলো। মাহবুব তো চলেই গেছে আমাদের ছেড়ে। এখন রয়েছে তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। ছোট মেয়েটার বিয়ে দেওয়াটাই এখন আমার চিন্তার কারণ। আর যে মাহবুব প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়েছে, তার কবরটা অবহেলায় পড়ে রয়েছে। এটা সংস্কারের প্রয়োজন’।

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার একটাই চাওয়া, আমার মাহবুবের কবরটা যেন সংস্কার করে দেন। আর ছোট মেয়েটার একটা চাকরি বা বিয়ের ব্যবস্থা করা।

তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে সরকারের দেওয়া ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের মাসিক লাভের টাকা আর প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা করে পাই। বলতে গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টাকায় আমাদের সংসার চলে’।

মাহবুবের মা হাসিনা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সেদিনের সেই হামলার কিছুদিন আগে মাহবুবকে একটি ঘড়ি উপহার দিয়েছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

কয়েকদিন ব্যবহার করে স্মৃতিস্বরূপ আমার কাছে দিয়ে যায় মাহবুব। ঘড়িটার দিকে তাকালেই মনে পড়ে আমার মাহবুবের কথা’।

তিনি আরো বলেন, ‘ওই যে দেখছেন, টিউবওয়েল শেষবার বাড়িতে এসে এটা দিয়েছিলো মাহবুব। বলেছিলো, এবার প্লাস্টার করা হলো না। ঘুরে এসে প্লাস্টার করে দেবো। কিন্তু পরে আর ফিরে এলো না সে’।  

‘আমি মাহবুবের মা- এ কথা ভেবেই আমি গর্ববোধ করি’- বলেন হাসিনা খাতুন।   মাহবুবের বোন আবিদা সুলতানাও বলেন, ‘আমার ভাই শেখ হাসিনাকে বাঁচানোর জন্য প্রাণ দিয়েছেন। আমি মাহবুবের বোন এই পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি’।

আওয়ামী লীগ নেতা ফেরদৌস মিয়া বাংলানিউজকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া অর্থে ভালোই আছে মাহবুবের পরিবার। তবে তার কবরটি সংরক্ষণের প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।