ঢাকা: ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৯০ কিলোমিটার। এই মহাসড়কে রয়েছে ২২ থেকে ২৩টি স্থানে বিপদজ্জনক বাঁক।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। সে লক্ষ্যে বিভাগটি প্রয়োজনীয় সব পরিকল্পনাও হাতে নিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানায়, সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয় বিবেচনা করেই এই মহা উদ্যোগ। ঢাকা-সাভার-মানিকগঞ্জ-আরিচা (এন-৫) মহাসড়ক ফোর লেনের পাশাপশি উভয় পাশে সার্ভিস লেনও করা হবে। সড়কটির বর্তমান হেভি ট্রাফিক লোড, ন্যূনতম ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এন সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা পিপিপি’র (বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) ভিত্তি হিসেবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ককে ফোর লেনে রূপান্তর করবো। ইতোমধেই সেই পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই মহাসড়কে ব্লাক স্পটের (বাঁক) কারণে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে। ফোর লেন হয়ে গেলে আর কোনো ব্লাক স্পট থাকবে না। সবার জন্য সড়কটি তখন আরও নিরাপদ হবে। ’
সূত্র জানায়, আমিনবাজার ও সাভার বাজার এলাকায় দু’টি ফ্লাইওভার নির্মিত হবে। সড়কের উভয় পাশে সার্ভিস রোড তৈরির মাধ্যমে ধীরগতির যানবাহন চলাচলের নিশ্চিত করে সড়কটিকে এক্সপ্রেসওয়ের মানে উন্নীত করা হবে। ধীর গতির যানবাহন পারাপারের জন্য থাকবে প্রয়োজনীয় সংখ্যাক আন্ডারপাস।
প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-সাভার-আরিচা মহাসড়কে যানজট নিরসনেও বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। এর পাশাপাশি হেমায়েতপুর, সিঙ্গাইর, মানিকগঞ্জ সড়কে ৩৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বর্তমান আঁকাবাঁকা সড়ক সোজা করা হবে। প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ মিটার দূরবর্তী কৃষি জমি অধিগ্রহণের পর হেমায়েতপুর থেকে মানিকগঞ্জ শহরে বাইপাস নির্মাণের কথা রয়েছে।
অপরদিকে, মানিকগঞ্জ শহরের তরাসেতু পার হয়ে চার কিলোমিটার দূরে বানিয়াজুড়ি পর্যন্ত ৩৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি ‘অ্যালাইনমেন্ট ট্রানজেকশন’র ব্যবস্থা করা হবে।
সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে বাঁকা সড়ক সম্প্রসারণের জন্য হেমায়েতপুর থেকে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত কাজ হবে। এতে প্রস্তাবিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাঁকা সড়ক সোজা ও সম্প্রসারিত হয়ে মানিকগঞ্জ থেকে হেমায়েতপুরের দূরত্ব কমবে ১২ কিলোমিটার। পাশাপাশি ঢাকা-পাটুরিয়ায় একটি বিকল্প সড়ক তৈরি হবে। এতে জাতীয় মহাসড়কে কমবে যানজট।
অন্যান্য ফোর লেন থেকে এই ৯০ কিলোমিটার মহাসড়ক হবে দৃষ্টিনন্দন। সেই লক্ষ্যে সড়কের কার্পেটিং অংশ অপসারণ করে ১৫০ মিলিমিটার বেইস টাইপ ১ এর ওপরে ৭০ মিলিমিটার বাইন্ডারের ওপর দিয়ে ৫০ মিলিমিটার ওয়্যারিং কোর্স করে সড়ক মজবুত করা হবে।
ফোর লেন সড়কের উভয় পাশে এক মিটার করে থাকবে সফট শোল্ডার। প্রকল্পের আওতায় মানিকগঞ্জে ২ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার বাইপাস হবে। নিরাপদে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য ৩৩ দশমিক ৯১ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করে প্রয়োজনীয় রাইট অব ওয়ে (Right of way) বজায় রেখে জমি অধিগ্রহণ করা হবে।
২ হাজার ৬৯২ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, ৮ দশমিক ৬৬ লাখ ঘনমিটার মাটির কাজসহ সাড়ে ২৪ কিলোমিটার ‘ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট’ প্রশস্ত করা হবে। এই ফোর লেনে ৪ দশমিক ৬ কিলোমিটার ইউ-ড্রেন ও আরসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। সেই সঙ্গে ১৭ কিলোমিটার টো-ওয়াল, ২ দশমিক ২ লাখ বর্গমিটার গ্রাস টার্ফিং, ১৭ কিলোমিটার জিওটেকস্টাইলসহ কংক্রিট স্লোপ প্রটেকশনের কাজ করা হবে।
এছাড়া, মহাসড়কে থাকবে আধুনিক ট্রাফিক সাইন, সাইন পোস্ট, কংক্রিট পোস্ট ও থার্মোপ্লাস্টিকসহ নান্দনিক সব রোড মার্কিং।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
এমআইএস/টিআই