ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মুখ থুবড়ে পড়ছে পুলিশ কমিশনারের সব উদ্যোগ

মুরসালিন হক/হাসান জামিল শিশির | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১০
মুখ থুবড়ে পড়ছে পুলিশ কমিশনারের সব উদ্যোগ

ঢাকা: একের পর এক ব্যর্থ হচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের সব উদ্যোগ। জনস্বার্থ ও নাগরিক নিরাপত্তার কথা বলে ঢাকঢোল পিটিয়ে নানামুখি পদক্ষেপ নিলেও কোনোটিরই কার্যকর বাস্তবায়ন হচ্ছে না।



সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, কেবল সুষ্ঠু মনিটরিংয়ের অভাবে এসব উদ্যোগের বেশিরভাগই ব্যর্থ হচ্ছে। কেউ কেউ মনে করছেন, কমিশনারের অধীনস্থরা নির্দেশ না মানছেন না।

অভিযোগ আছে,কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে মতাসীন নেতাদের চাঁদাবাজির লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছেন কমিশনার। কমিশনারের এসব উদ্যোগ এদের জন্যই।

তবে অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করে ডিএমপি কমিশনার এ কে এম শহীদুল হক বলছেন, উদ্যোগগুলো পুনরায় চালু করার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী।

গাড়ি চলছে আগের মতোই: যানজট নিরসনে লেন পদ্ধতি ও সিগন্যাল বাতি মেনে চলতে ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে ট্রাফিক ও গাড়িচালকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন কমিশনার। এ ঘোষণায় রাস্তায় কিছুদিন কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেলেও এখন আবার সেই আগের অবস্থা।

গত ১৫ জুলাই থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপ রাজধানীর রাস্তা থেকে ২০/২৫ বছরের পুরনো গাড়ি উচ্ছেদে অভিযান শুরু করে। এতে প্রথম কয়েক দিন সাফল্য মিললেও এখন আবার সেই ‘যথা পূবং যথা পরং’ অবস্থা। অভিযানের সময়সীমা শেষ না হওয়ার আগেই ঢাকার রাস্তায় পুরনো গাড়ির ঢল। খোদ পুলিশ সদস্যরাই চলাচল করছেন ৩৫ বছরের পুরনো গাড়ি নিয়ে!

অথচ এরই মধ্যে শনিবার আবার নতুন করে লেন মেনে গাড়ি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার। এতে করে শুরু হয়েছে নতুন ভোগান্তি। সব ব্যস্ত সড়কেই ছিল চলছে তীব্র যানজট।

তবে কমিশনার শহিদুল হকের সাফ কথা, গাড়ির সংখ্যা না কমালে যানজট নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, ‘সবাইকে আইন মেনে,লেন মেনে গাড়ি চালাতে হবে। নইলে শাস্তি দেওয়া হবে। ’

বাস্তবায়িত হচ্ছে না ভাড়াটেদের তথ্য ফরম পূরণ: গত বছরের ১৪ মে মিরপুরের পূর্ব মণিপুরের ৬৭৬/২ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) বোমা বিশেষজ্ঞ জাহিদুল ইসলাম সুমন ওরফে বোমারু মিজানকে।

এরপর চলতি বছরের ২৪ মে জুরাইন ও গত ৩০ জুলাই মিরপুরের শাহআলীতে জঙ্গি আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধারের পরও টনক নড়েনি মহানগর পুলিশের। তাই ভাড়াটেদের তথ্য ফরম পূরণের উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে।

গত বছরের ২৩ এপ্রিল ডিএমপির তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. নওশের আলী স্বারিত একটি স্মারক থেকে জানা যায়, ব্যক্তি মালিকানাধীন ছাত্রাবাস ও মেস, ভাড়ায় বসবাসকারী পরিবার ও বেতনভুক্ত চালকদের তথ্য সংগ্রহের জন্য নগরের থানাগুলোয় তিনটি ফরম পাঠানো হয়েছে।

ফরমগুলোর মাধ্যমে ভাড়াটে, বাড়ির গাড়িচালক ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ছাত্রাবাস বা মেসের মালিক ও বোর্ডারের (সদস্য) নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, টেলিফোন কিংবা মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে থানায় জমা দেওয়ার কথা।

সেইসঙ্গে এদের ছবি, স্বার ও বাম হাতের বুড়ো আঙুলের ছাপ সংগ্রহসহ ভাড়াটেকে চেনে এমন দু’জন শনাক্তকারীর নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর, আগের বাড়ির মালিকের ফোন নম্বরসহ নাম ঠিকানাও দিতে হবে। ভাড়াটের পরিবারপ্রধানের পেশা, কর্মস্থলের ঠিকানা ও ফোন নম্বরের তথ্যও দিতে হয়।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাড়ির মালিকরা ভাড়াটেদের তথ্য সংবলিত ফরমগুলো জমা দেননি সংশ্লিষ্ট থানায়।

তাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট থানার প থেকে বাড়ির মালিকদের এ বিষয়টি জানানোই হয়নি।
উত্তর ধানমণ্ডির ৪৪/বি/১ নম্বর বাড়ির মালিক অধ্যাপক শাফায়েত চৌধুরী জানান, থানা থেকে কোনো ফরম দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়নি তথ্য সংগ্রহের কোনো নির্দেশও।


এ সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশের (সদর দপ্তর) উপ-পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়টি এখন খুব গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। ’


গত ৩ মে কমিশনারের স্বারিত আরেকটি দাপ্তরিক নির্দেশ পাঠানো হয়েছে ঢাকা মহানগরের সব জেলা প্রশাসককে। খুব শিগগিরই তা বাস্তবায়ন করা হবে বলে তিনি জানান।


বিতর্কিত কমিউনিটি পুলিশিং সার্ভিস: কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমের সাংগঠনিক কাঠামো তৈরির জন্য পুলিশের উপ-কমিশনারদের (সব অপরাধ বিভাগ) অতি জরুরি একটি বিজ্ঞপ্তি (নম্বর ৯) জারি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।


গত বছর ২৫ এপ্রিল কমিশনার এ কে এম শহীদুল হক স্বারিত এ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে, অপরাধ দমন ও প্রতিকার, অপরাধী গ্রেপ্তার ও তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ; দাম্পত্য কলহ, নারী ও শিশু নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, মিথ্যা মামলা, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, যৌতুক, মাদকাসক্তি, অসামাজিক কার্যকলাপ, এলাকাভিত্তিক বিরোধ প্রভৃতি সমস্যার নিরপে ও সন্তোষজনক সমাধানে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম একটি আধুনিক ও কার্যকর ব্যবস্থা।
তবে এলাকাবাসীদের অভিযোগ, কমিউনিটি পুলিশের সব সদস্যই মতাসীন দলের। তাদের দিয়ে স্থানীয় নেতারা সব অপকর্ম করাচ্ছে।   না দেখার ভান করছে পুলিশ।

উচ্ছেদ হয়নি হকার: নগরীর রাস্তাঘাট ও ফুটপাত হকারমুক্ত করতে চলতি বছরের ৩ এপ্রিল ডিএমপি কমিশনার একেএম শহীদুল হক স্বারিত একটি নির্দেশ পাঠানো হয় ঢাকার সব অঞ্চলের উপ-পুলিশ কমিশনারদের। তবে সেই নির্দেশ বাস্তবায়নের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ সদস্যরা উল্টো মাসোহারা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে হকার বা সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের কেউই কোনো কথা বলতে রাজি হননি।    

অনিয়মিত ওপেন হাউস ডে: ২০০৭ সাল থেকে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার নাইম আহমেদ স্বারিত একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিটি থানায় মাসে একদিন ওপেন হাউস ডে করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

বিজ্ঞতিতে বলা হয়েছিল, প্রতিটি থানার সচেতন ব্যক্তিরা মাসে একদিন সংশ্লিষ্ট থানায় এসে থানার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করবেন। কিছুদিন এ নির্দেশের কার্যকারিতা থাকলেও বর্তমানে তা অনেকাংশেই নিষ্ক্রিয়।

এ ব্যাপারে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান জানান, আগে নিয়মিত হলেও গত তিন মাস ধরে ওপেন হাউস ডে পালন হয়নি।

পুলিশ কমিশনার যা বললেন: প্রায় সবগুলো উদ্যোগই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলেও পুলিশ কমিশনার পুনরায় এগুলো চালু করার ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী।

তিনি বলেন, ‘কেবলমাত্র নগরীতে শৃঙ্খলা ও পরিচ্ছন্নতা ফেরাতেই এসব উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তবে এসব পুলিশের বাড়তি দায়িত্ব। আমার জানা মতে, নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন সময় এ সব উদ্যোগের ব্যাপারে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে থাকেন। ’

কিছু কিছু উদ্যোগের সাফল্য উল্লেখ্য করে কমিশনার বলেন, ইভটিজিং প্রতিরোধে পুলিশের তৎপরতা সফল। তবে সব উদ্যোগ এখন পর্যন্ত সফল হয়নি।

এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আবারও আলোচনা করা হবে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।