ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গ্রেফতার ১৬৬

ধরাছোঁয়ার বাইরে পুরস্কার ঘোষিত ৬ জঙ্গি

নুরুল আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৬
ধরাছোঁয়ার বাইরে পুরস্কার ঘোষিত ৬ জঙ্গি

ঢাকা: দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযানে দেড় শতাধিকের বেশি জঙ্গি গ্রেফতার হলেও ডিএমপির পুরস্কার ঘোষিত ছয় চিহ্নিত জঙ্গি এখনো গ্রেফতার হয়নি।

ব্লগার, প্রগতিশীল লেখক, প্রকাশক হত্যায় জড়িত ছয়জনকে চিহ্নিত করে তাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণার প্রায় এক মাসেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।



সম্প্রতি চট্টগ্রামে পুলিশ অফিসার বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যার পর দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে পুলিশ। চলমান অভিযানে ১৬৬ জঙ্গি গ্রেফতার হলেও ডিএমপির পুরস্কার ঘোষিত ছয়জন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।

মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, গণমাধ্যমে যাদের ছবি প্রকাশ করা হয়েছিল তাদের অনেকের বিষয়েই তথ্য পাওয়া গেছে। কারও কারও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানাও পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করি দ্রুতই কেউ কেউ গ্রেফতার হবে।

পুলিশ সদর দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অভিযান শুরুর পর পাঁচদিনে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মোট ১৬৬ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা এ কে এম  কামরুল আহছান জানান, অভিযানের পঞ্চম দিনে ২১ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ১৭ জন জেএমবি, দুই জন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের, একজন হিযবুত তাহরীর ও একজন হুজি সদস্য রয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযানের প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ জঙ্গি, দ্বিতীয় দিন ৪৮ জঙ্গি, তৃতীয় দিন ৩৪ জঙ্গি,  চতুর্থ দিন ২৬ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তৎকালীন উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সর্দার বলেন, ডিএমপির পুরস্কার ঘোষিত ছয় জঙ্গির প্রত্যেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

এ ছয়জনের মধ্যে শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে শরিফ ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদী-১ এবং সেলিম ওরফে ইকবাল ওরফে মামুন ওরফে হাদী-২ এর জন্য পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।

বাকি চারজনের প্রত্যেকের জন্য দুই লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।

এ চারজন হলেন- সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আব্দুস সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সালমান ওরফে সাদ, শিহাব ওরফে সুমন ওরফে সাইফুল এবং সাজ্জাদ ওরফে সজিব ওরফে সিয়াম ওরফে শামস।

তদন্তের ধারাবাহিকতায় গত ১৯ ফ্রেব্রুয়ারি বাড্ডার সাঁতারকুল ও মোহাম্মদপুরে দু’টি ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা বিভাগ জানতে পারে- আস্তানা দু’টি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ‘সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ ও ‘বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল।

ওই অভিযানে গ্রেপ্তার আনসারুল্লাহর দুই সদস্যের দেওয়া তথ্য ও সেখান থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নথির ভিত্তিতে ঢাকার আশকোনা ও দক্ষিণখানে তাদের আরও দু’টি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে এবিটির ছয়জনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মেলে।

ছয় জঙ্গির ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্যসহ তাদের অপরাধের বিষয়ে জানানো হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের নিউজে (ডিএমপি নিউজ)।

শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে শরিফ ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদী-১ সম্পর্কে বলা হয়, অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজে উপস্থিতি ধরা পড়া এবিটি’র এ সদস্যের বাড়ি বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে। সংগঠনের সদস্যদের সামরিক এবং আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন তিনি।

টিএসসিতে অভিজিৎ রায় হত্যা ছাড়াও নীলাদ্রী নীলয় হত্যা, লালমাটিয়ায় আহম্মেদ রশীদ টুটুল হত্যা চেষ্টা এবং সাভারে শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যার ঘটনায় তার সরাসরি উপস্থিতি ও সার্বিক নেতৃত্ব ছিল বলে তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে ডিএমপি।

এছাড়া জাগৃতি প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা, তেজগাঁওয়ে ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা, পুরান ঢাকায় নাজিমুউদ্দিন সামাদ এবং কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও তনয় হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে শরিফুলকে চিহ্নিত করেছেন গোয়েন্দারা।

সেলিম ওরফে ইকবাল ওরফে মামুন ওরফে হাদী-২ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) শীর্ষ সংগঠক, কথা বলেন শুদ্ধ বাংলায়। পাঁচ ফুট ১০ ইঞ্চি লম্বা সেলিম চশমা পড়েন। সামরিক ও আইটি প্রশিক্ষক সেলিমের বাড়ি উত্তরবঙ্গে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন।

প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা, ওয়াশিকুর বাবু হত্যা, নিলাদ্রী নীলয় হত্যা, মিরপুরের স্কুল শিক্ষক হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তার সরাসরি উপস্থিতির তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

শরিফুল ও সেলিম- এ দু’জনকেই ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সামরিক শাখার সদস্য বাকি চারজনকে ধরিয়ে দেওয়ায় পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে দুই লাখ টাকা করে।

এর মধ্যে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরানের বাড়ি সিলেট অঞ্চলে। আজিজ সুপার মার্কেটে প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যাকাণ্ডের মামলার তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও সাভারে শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যাকাণ্ডে তার সরাসরি অংশগ্রহণের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

আ. সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সালমান ওরফে সাদের বাড়ি কুমিল্লা অঞ্চলে। প্রকাশক আহম্মেদ রশীদ টুটুল হত্যা চেষ্টা ঘটনার মামলার তদন্তে তার জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তাছাড়া সাদ ধর্মীয় জিহাদের বয়ান দিয়ে থাকে- এমন প্রমাণও রয়েছে পুলিশের হাতে।

শিহাব ওরফে সুমন ওরফে সাইফুল প্রকাশক টুটুল হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয় বলে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে প্রমাণ থাকার কথা জানিয়েছে ডিএমপি নিউজ। তার বাড়ি চট্টগ্রাম অঞ্চলে।

সাজ্জাদ ওরফে সজিব ওরফে সিয়াম ওরফে শামস এর বাড়ি কোথায় তা জানতে না পারলেও ঢাকা জেলার আশেপাশে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

অভিজিৎ রায়, নিলাদ্রী নীল এবং সাভারে শান্তা মারিয়ামের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যার ঘটনায় সাজ্জাদ সরাসরি অংশ নেয়- এমন তথ্য উপাত্ত গোয়েন্দা পুলিশের কাছে রয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৬
এনএ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।