ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এ কেমন বর্বরতা !

সাঈদুর রহমান রিমন<br>সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১০
এ কেমন বর্বরতা !

ঢাকা: স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ও ননদের সীমাহীন বর্বরতার শিকার গৃহবধূ আজমেরী বেগম (২৫) মৃত্যু যন্ত্রণায় কাৎরাচ্ছেন। শরীরে মধ্যযুগীয় নির্যাতনের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেঝেতে কাতরাচ্ছেন।



নির্যাতনের শিকার আজমেরী বেগমের স্বামীর নাম মো. রুবেল। তিনি ভাড়ার মাইক্রোবাস চালক।   থাকেন কামরাঙ্গীরচর এলাকায়।

সোমবার দিনভর নির্যাতনের পর হাত, মুখ, চোখ বেঁধে আজমেরী বেগমের সারাদেহে ডিজেল ঢেলে ভিজিয়ে দেওয়া হয়। তারপর রাজধানীর কোনো নির্জন স্থানে নিয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে তাকে পুড়িয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল স্বামী রুবেল। সে উদ্যেশেই তাকে মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনের সামনে আজমেরীকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি বিকল হওয়ায় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা আজমেরীকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে উদ্ধার করতে সমর্থ হন।

উদ্ধার হওয়ার পর মুহূর্তেই শেরেবাংলানগর থানার সহকারী দারোগা আব্দুর রফিকের কাছে বিস্তারিত খুলে বলার পরই আজমেরী বেগম অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর ক্রমেই তার অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।

দিনভর স্বামী, শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, ননদে নানা কায়দায় নির্মমভাবে পিটিয়েছে তাকে। বিকেলে ইঁদুর মারার ওষুধ খাওয়ানোর পরও আজমেরী মারা যাননি বলে তাকে খাওয়ানো হয় ডিজেল। সঙ্গে আরো বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল। তারপরও আজমেরীর মৃত্যু না হওয়ায় স্বামী তার দুই হাত পিছমোড়া করে রশি দিয়ে বাঁধেন। চোখ-মুখ বাঁধেন আজমেরীর কাপড় ছিঁড়েই। তারপর তার সারা শরীর ডিজেল দিয়ে ভিজিয়ে তোলা হয় মাইক্রোবাসে। সিটের নিচে তাকে শুইয়ে দিয়ে তার ওপর পা দিয়ে চেপে ধরে রাখেন সিটে বসে থাকা আরো দু’জন। চলতে থাকে গাড়ি।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে কমলাপুর স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয় আজমেরীকে। কিন্তু সেখানে র‌্যাব-পুলিশের টহল দেখে তারা পিছু হটেন। গাড়ি ঘুরিয়ে আজমেরীকে নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুর এলাকায়। সেখানেও নিরিবিলি সুবিধাজনক স্থান না পাওয়ায় আবার মাইক্রো ঘুরিয়ে রমনা পার্কের উদ্দেশে রওনা দেন তারা। কিন্তু নগরীর শেরেবাংলা এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনের ঠিক সামনে পৌঁছামাত্রই বিকল হয়ে যায় মাইক্রোবাস। আজমেরীকে পা দিয়ে চেপে ধরে রাখা আরোহী দু’জন নিচে নেমে পেছন থেকে মাইক্রোবাস ধাক্কা দিয়ে স্টার্ট করানোর চেষ্টা করতে থাকে।

মাইক্রোর দরজা খোলা পেয়ে মুহূর্তেই গাড়িটির ভেতর থেকে রাস্তার ওপর গড়িয়ে পড়েন আজমেরী। এ দৃশ্য দেখে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ছুটে যান আজমেরীর কাছে। কিন্তু ততক্ষণে মাইক্রোবাস স্টার্ট হওয়ায় দ্রুত পালিয়ে যায় আজমেরীর স্বামী ও তার অপর দুই সহযোগী।

খবর পেয়ে শেরেবাংলানগর থানার সহকারী দারোগা আব্দুর রফিক ঘটনাস্থলে যান এবং আজমেরী বেগমকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু আজমেরী বেগমের অবস্থার গুরুতর অবনতি ঘটলে রাত ১০টায় তাকে স্থানান্তর করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

রাত দু’টায় শেরেবাংলানগর থানার সহকারী দারোগা আব্দুর রফিক বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, হাত-মুখ-চোখ বাঁধা ও সারা শরীর ডিজেলে ভেজা অবস্থায় আজমেরী বেগমকে উদ্ধার করার সময় তিনি অস্পষ্টভাবে তার ওপর চলা নির্মমতার বর্ণনা দেন।

এ ব্যাপারে শেরেবাংলানগর থানায় হত্যার চেষ্টা সংক্রান্ত একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলেও তিনি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ