ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বান্দরবানে আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন আলোর মুখ দেখেনি

জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০১০
বান্দরবানে আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন আলোর মুখ দেখেনি

বান্দরবান: দেশের তিন পার্বত্য জেলাসহ বিভিন্ন জেলায় আদিবাসী শিশুদের জন্য মায়ের ভাষায় শিক্ষা অর্জনের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করা হলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় শিক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে আদিবাসীরা।

আদিবাসী বম ও মারমা শিশুদের জন্য দুইটি ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার ১২ হাজার বই প্রকাশ করা হলেও তা আজ বস্তাবন্দি হয়ে আছে।

সেই সঙ্গে রুদ্ধ হয়ে আছে আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষা অর্জনের স্বপ্নও।

আনুসন্ধানে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বান্দরবান জেলা পরিষদ ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যৌথ সহযোগীতার ভিত্তিতে জাতীয় প্রাথমিক শিা কার্যক্রমে আদিবাসীদের মাতৃভাষায় পাঠ্যসূচি সংযোজনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। ২০০৬ সালের নভেম্বরে মারমা ও বম শিশুদের জন্য তাদের মাতৃভাষায় ‘আমার বই প্রথম পাঠ’ নামে ১২ হাজার বইও প্রকাশিত হয়।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবহেলায় প্রকাশিত বইগুলো দীর্ঘ প্রায় চার বছর ধরে বান্দরবান ক্ষুদ্র-নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিস্টিটিউট গুদামে পড়ে আছে। নষ্ট হয়ে গেছে অনেক বই। গত বছরের ১৮ আগষ্ট জেলা পরিষদ সম্মেলন কে এক সভায় ক্ষুদ্র-নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিস্টিটিউটকে বইগুলো বিতরণের নির্দেশ দেয় জেলা পরিষদ।

আদিবাসী শিশুদের শিা উন্নয়নে সভায় মারমা, ম্রো ও বম মাতৃভাষায় শিক্ষা দানের জন্য প্রাক-প্রাথমিক আরো নতুন বই প্রকাশের জন্য জেলা পরিষদ সদস্য অংপ্র“ ম্রোকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয় বলে জানা গেছে।

বান্দরবানের ক্ষুদ্র ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মংনুচিং বলেন, ‘বইগুলো কোথায়, কীভাবে ও কাদের দেওয়া হবে, এ ব্যাপারে পার্বত্য জেলা পরিষদের দিকনির্দেশনা না পাওয়ার কারণে বস্তাবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে। ’

আওয়ামী লীগ সরকার মতায় আসার পর বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান হিসাবে ক্য শৈ হা দায়িত্ব গ্রহন করলে শিা কার্যক্রমে বইগুলোর অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে কোনো পদপে গ্রহন করেননি।

বইগুলোতে বাংলা ও ইংরেজীতে উচ্চরণ বর্ণিত না থাকার কারণে বেশ কয়েকজন শিক্ষক মনে করেন, প্রকাশের আগে বিষয়টির দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন ছিল।

এ ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন বলেন, ‘আদিবাসীরা যেখানে এখনো ভূমি অধিকার পায়নি সেখানে কীভাবে তাদের মাতৃভাষা গুরুত্ব পাবে। ’

অন্যদিকে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা তাদের শিা কার্যক্রমে বইগুলো কাজে লাগাতে চাইলেও তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো সহযোগীতা পাননি বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বলিপাড়া নারী কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক হাচিংনু সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘পড়ে থাকা বইগুলো ব্যবহারের ব্যাপারে কয়েকবার চেষ্টা করা করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ’

পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হা জানান, প্রকাশিত মারমা ও বম ভাষার বইগুলো পরীক্ষা-নিরিক্ষা, প্রয়োজনীয় সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। এ বিষয়ে ন্যাশনাল কারিকুলাম অ্যান্ড টেক্স বুক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃপরে অনুমোদনেরও প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি জানান।  

বাংলাদেশ সময়: ২৩১১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।